কক্সবাজারে ষাট বছরের তরুণদের ভালোবাসার উৎসব

‘ভালোবাসার ৭৭’-এর মহাসম্মিলন। ছবি: সংগৃহীত
‘ভালোবাসার ৭৭’-এর মহাসম্মিলন। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭৭ সাল থেকে ২০২০। মাঝখানে ৪৩টি বছর। এরই মধ্যে একটি নতুন শতাব্দীর আবির্ভাব হয়েছে। দেশে–বিদেশে ইতিহাসের কত বাঁক বদল হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার ধরন আমূল পাল্টে গেছে। কিন্তু কিছু মানুষের হৃদয়ে একটি স্থায়ী আসন দখল করে নিয়েছে ১৯৭৭ সাল। সে বছর তাঁরা ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

দেশ–বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা সে রকম কিছু মানুষের অপূর্ব মহাসম্মিলন ঘটে গেল পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে। ৩ জানুয়ারি থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজারে জমজমাট এই সম্মিলনের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ভালোবাসার ৭৭’।

এইচএসসি পাস করার পর জীবনের প্রবাহমান ধারায় সবাই কত বিচিত্র পেশায় আর নেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। ছড়িয়ে পড়েছেন দেশ–বিদেশের নানা প্রান্তে। ছাত্রজীবন শেষে কর্মজীবনে সফলতার শীর্ষে উঠে অনেকেই ইতিমধ্যে অবসরও নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ দেশের নামকরা গায়ক, সংগীতজ্ঞ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, গবেষক, নাবিক, সেনানায়ক, বিচারক, প্রথিতযশা আইনজীবী, ব্যাংকার, শিল্পপতি, নাট্যকার, লেখক, সাংবাদিক।

কেউ কেউ সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। প্রত্যেকেই নিজের নিজের পেশায়, নিজের নিজের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। কিন্তু নিজেদের সেই দীর্ঘ কর্মজীবনের কথা ভুলে গিয়ে জীবনের একটি প্রান্তে এসে তাঁরা সবাই যেন ফিরে গেছেন ৭৭–এর সেই কৈশোর উত্তীর্ণের দিনগুলোতে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এবং যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সংযু্ক্ত আরব আমিরাতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত অনেকেই চার দশক আগের পুরোনো বন্ধুদের খুঁজে পেতে ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে।

৪৩ বছরের ব্যবধানে চেহারা আর ব্যক্তিত্ব বদলে যাওয়া মানুষগুলো পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে খুঁজে ফিরেছেন নিজেদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ের স্মৃতি। একসঙ্গে তিন দিন ধরে আড্ডায় মেতেছেন, সৈকতে ফুটবল, হাঁড়িভাঙা বা সাংগীতিক বালিশ বদলের খেলায়। এ ছাড়া ছিল হোটেল সি গাল মিলনায়তনে স্মৃতিচারণা, আড্ডা, লটারিসহ নানা আয়োজন। প্রতি রাতেই গান শুনিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রেখেছেন ৭৭–এর সতীর্থ নকীব খান ও শাহরিয়ার খালেদ।

অনুষ্ঠানে গান করে, যোগ দিয়ে আপ্লুত নকীব খান বলেন, ‘কলেজজীবনের বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হতে সব কাজ ছেড়ে, নিজের বয়স ভুলে তিনটা দিন গানে–আড্ডায় মেতেছিলম। এই আনন্দের ভাষা বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই।’ একই কথা বললেন প্রবাসী ও দেশের বন্ধুরা।

‘ভালোবাসার ৭৭’–এর এই মহাসম্মিলনের নির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন নৌ প্রকৌশলী এস এম এ হান্নান, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক এম আলমগীর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মাহফুজুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুল হালিম, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ওয়াজিউল্লাহ লিটন।

তিন দিনের এই আয়োজনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোশকতায় ছিলেন ১৯৭৭ সালের উচ্চমাধ্যমিকের সতীর্থ সাদ মুসা গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ মহসিন, এস এ গ্রুপের কর্ণধার শাহাবুদ্দিন আলম।
সমুদ্রের সৈকতে ৬০ বছরের ২০০ জন তরুণ তিনটি দিন যে গান আড্ডা, স্মৃতিচারণা, হইহুল্লোড়ে কাটিয়েছেন, তা তাঁদের বাকি জীবনে মধুরতম স্মৃতি হয়ে থাকবে। বিদায়ের দিন গত শনিবার বিরহকাতর মুখে এই কথাই উচ্চারণ করেছেন সবাই।