সংগীত যখন সঙ্গী

অন্বেষা পালিত
অন্বেষা পালিত

মিষ্টভাষী, অন্যের বিপদে ছুটে আসা, হাসিখুশি মেয়েটি যখন সাদা অ্যাপ্রোন গায়ে জড়াতে শুরু করলেন, আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধব—সবাই খুশি হয়েছিলেন। স্বজনদের প্রিয়জন তো ছিলেনই, ধীরে ধীরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহপাঠীদের কাছেই তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন তাঁর দারুণ গানের কল্যাণে। ক্যাম্পাসে মূলত আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেলেও, রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পছন্দ করেন অন্বেষা পালিত। 

জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। তবে মেয়েটির ঠিকানা এখন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের ৩০৭ নম্বর কক্ষ। এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষে পড়ছেন তিনি। সংগীত পরিষদের ওস্তাদ স্বর্ণময় চক্রবর্তীর কাছে প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে গানের হাত ধরে ছুটে চলা শুরু হয়েছিল। জানালেন, গান শেখার পেছনে একমাত্র অবদান মায়ের। মায়ের পুরোনো হারমোনিয়াম দিয়েই সুর বেঁধেছেন প্রায় প্রথম ৭ বছর। ছোট–বড় অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন ছোটবেলা থেকে, কুড়িয়েছেন সুনাম। ২০১০ সালে মার্কস অলরাউন্ডার প্রতিযোগিতায় শুধু গানকে সঙ্গী করে পৌঁছে গিয়েছিলেন তৃতীয় পর্যায় পর্যন্ত। গত বছর দেশের সব মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের বহুমুখী প্রতিভা অন্বেষণের অনলাইন জরিপে তাঁর গান ছিল সেরা ৩-এর মধ্যে।

চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি সিটি কলেজ থেকে নিয়েছেন স্কুল-কলেজের পাঠ। ২০১৬ সালে বাবা মারা যান। এরপর মেডিকেলের পড়ার চাপে গানের সঙ্গে বেশ কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। তবু স্বপ্ন দেখেন, পড়ালেখা ও মানুষের সেবার পাশাপাশি গানটাও তিনি চালিয়ে যাবেন। মঞ্চে গান করবেন, সিনেমায় প্লেব্যাক করবেন—এসব স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে অন্বেষা বোধ হয় একটু অন্যমনস্কই হয়ে গেলেন। 

মেডিকেলের পড়ার ফাঁকে গান শোনাই তাঁর বড় বিনোদন। গান শুনে, আর গুনগুন করে গেয়েই একটা অন্য জগতে হারিয়ে যান। প্রথম বর্ষ থেকেই ক্যাম্পাসের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেডিসিন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত আছেন। বর্তমানে ক্লাবটির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। ক্লাবের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, রক্তদান, টিকাদান, গরিব–দুঃখীদের শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি। ভবিষ্যতে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতে চান।

তানজিনা আকতারী