স্বপ্নের সারথি

পেশা বিষয়ক নানা আলোচনায় ক্যাম্পাস মুখর রাখেন এই শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
পেশা বিষয়ক নানা আলোচনায় ক্যাম্পাস মুখর রাখেন এই শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা জীবনের লক্ষ্যটা এখনো ঠিক করতে পারেননি। ব্যবসা করব, নাকি কাজ করব কোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে? ব্যাংকে চাকরি করব, নাকি প্রস্তুতি নেব বিসিএস পরীক্ষার জন্য। শিক্ষার্থীরা যেন নিজের স্বপ্নটা ঠিক করতে পারে, আর সেই অনুযায়ী এখন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে, সেই লক্ষ্যে তাঁদের সহায়তা করতেই যাত্রা শুরু করেছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ক্লাব। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের পেশা–সংক্রান্ত বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়নের আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি। খুব অল্প সময়েই এটি ছাত্রছাত্রীদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

ক্লাবটি গঠনের উদ্দেশ্য ও এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি অমিত হাসান বলেন, ‘এ সময়ের প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে একাডেমিক ফলাফল এখন আর যোগ্যতা যাচাইয়ের একমাত্র মানদণ্ড নয়। এখন চাকরিদাতারা একাডেমিক ফলাফলের পাশাপাশি প্রার্থীর অন্যান্য দক্ষতা, নেতৃত্ব, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যাচাই করতে চায়। আর একজন ভালো উদ্যোক্তা হওয়ার জন্যও নেতৃত্বদানের বৈশিষ্ট্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে এসব গুণাগুণের উন্নয়ন, ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখা তরুণদের নেতৃত্ব সম্পর্কীয় গুণাবলি বিকাশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্যারিয়ার নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরিই আমাদের ক্লাব গঠনের মূল উদ্দেশ্য।’ ক্লাবটির কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি জানান, এখানে মূলত সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার, প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠান, বক্তৃতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ আত্মোন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।

কীভাবে সদস্য সংগ্রহ করা হয়? জানতে চাইলে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাহাত তালুকদার বলেন, ‘সদস্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আমরা বছরে দুবার মেম্বার রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্পের আয়োজন করি। যারা সদস্য হতে চায়, তাদের মধ্যে মেম্বারশিপ ফরম বিতরণ করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবগুলো ফরম সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে কয়েকজনকে ভাইভার জন্য মনোনীত করা হয়। সফলভাবে ভাইবা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সরাসরি সদস্য হিসেবে যোগদান করে। যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে পর্যায়ক্রমে জুনিয়র মেম্বার, সিনিয়র মেম্বার ও এক্সিকিউটিভ পদে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’ ভাইভাতে বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের হতাশ না করে পরবর্তী ‘মেম্বার রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্পে’ অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

পাঁচ বছর পর ক্লাবটিকে কোথায় দেখতে চান? এমন প্রশ্ন করা হলে ক্লাবটির বর্তমান সভাপতি হায়দার আলী খান জানান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় ঢাকার ক্যারিয়ার–বিষয়ক অনেক সেমিনার ও কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন না। একই সমস্যার সম্মুখীন হন ঢাকায় আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও। শিক্ষার্থীদের এই হতাশার বৃত্ত থেকে বের করে আনতে বিসিএস ও করপোরেট বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই ক্যারিয়ার দিকনির্দেশনামূলক বিভিন্ন সেমিনার ও প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের ভিত্তিতে চাকরি মেলা করার লক্ষ্যে কাজ করছে ক্লাবটি। শিক্ষার্থীদের সার্বিক দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে ক্লাবটিকে সারা দেশে ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্নের কথা বললেন তিনি।

হায়দার আলী খানেরা যে কেবল কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী, বোঝা যায় তাঁদের আগের কার্যক্রমগুলোর দিকে তাকালে। গত দুই বছরে ৫৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় আইডিয়া প্রতিযোগিতা ছাড়াও ১৫টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে চাকরি মেলার আয়োজন করেছে এই সংগঠন। আর বছর শেষে সংগঠনের সব সদস্যদের নিয়ে ভ্রমণায়োজন তো আছেই।

ক্লাবের সদস্য, ফোকলোর বিভাগের রাফিয়া ইসলামের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কেন ক্যারিয়ার ক্লাবে যুক্ত হলেন তিনি? রাফিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের ব্যক্তিত্বের বিকাশ, দক্ষতার উন্নয়ন, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করাসহ স্বপ্ন পূরণের পথ খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যেই আমি ক্যারিয়ার ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।’ রাফিয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে তিনি যেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন, সেটি নিঃসন্দেহে তাঁর জীবনের বড় শিক্ষা হয়ে থাকবে।