অরোধ্য হওয়ার সঙ্গী

আওসাফ করিম
আওসাফ করিম

‘আমি ইংরেজি মাধ্যমে পড়েছি। ২০১৭ সালে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আবিষ্কার করলাম, আমি যেন অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। বেশির ভাগই ছিল বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থী। সেখানে নিজেকে খাপ খাওয়াতে আমার একটু সমস্যা হচ্ছিল। দেখা যেত অনেকেই আমার উচ্চারণ, কথা বলা নিয়ে মজা করত। তাই সে সময় আমার মধ্যে কিছুটা বিষণ্নতা চলে আসে’, বলছিলেন আওসাফ করিম।

আর্মি মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষের পাঠ নিচ্ছেন এই তরুণ। প্রথম বর্ষে পড়ার সময় তাঁর পরিচয় হয়েছিল ইমাদ খানের সঙ্গে। দুজনের বন্ধুত্ব জমে উঠেছিল দ্রুত। যাঁরা বিষণ্নতায় ভোগেন, কীভাবে তাঁদের সহায়তা করা যায়, ভাবছিলেন ইমাদ আর আওসাফ। সেই ভাবনা থেকেই দুজন প্রতিষ্ঠা করেন ‘অরোধ্য’ নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। যেখানে বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নানা সেবা। আওসাফ বলেন, ‘আমাদের আশপাশে অনেকেই আছেন, যাঁরা হতাশা, বিষণ্নতা, আত্মহত্যাপ্রবণতায় ভুগছেন। আমাদের সংগঠনের নাম অরোধ্য—অর্থাৎ যা রোধ করা যায় না। আমাদের এই অরোধ্যতে যাঁরা সহায়তা নেন, আমরা তাঁদের বলি—তুমিই অরোধ্য, তুমি পারবে, তোমাকে কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না।’

অরোধ্যর সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত আছেন প্রায় ৩০ জন সদস্য। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অনেকেই যুক্ত আছেন এখানে। একজন সেবাপ্রত্যাশী যতক্ষণ পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা চান, ততক্ষণই অরোধ্য তাঁর পাশে থাকে। আওসাফ জানালেন, অরোধ্যর কাছ থেকে মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সেবা পেতে যোগাযোগ করতে হবে তাঁদের ফেসবুক পেজে facebook.com/Oroddho, বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে। এখন পর্যন্ত তাঁরা শুধু মেসেঞ্জারের মাধ্যমেই সেবা দিচ্ছেন।

‘মেডিকেল লাইফে যখন কোনো সিনিয়র আমার কোনো সমস্যা শুনে বলে—আরে, ব্যাপার না। এ রকম সমস্যা আমরা কাটিয়ে এসেছি, তুইও পারবি। সিনিয়র ভাইদের কথায় ভরসা পেতাম। অর্থাৎ আমি যে ব্যাকগ্রাউন্ডের, সে রকম কারও সঙ্গে কথা বলতে আমরা স্বচ্ছন্দ বোধ করি। সেই ভাবনা থেকেই অরোধ্য তে আমরা ‘পিয়ার সাপোর্ট কাউন্সেলিং’ পদ্ধতি প্রচলন করি। যিনি সেবা নিতে আসেন, তাঁকে সেই ঘরানার একজন কাউন্সেলিং সেবা দিয়ে থাকেন,’ জানান আওসাফ।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অন্যের হতাশা কাটিয়ে ওঠানোর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে আলাদা কদর পান আওসাফ করিম। শিক্ষক, সহপাঠী—সবার কাছ থেকে ইতিবাচক মন্তব্যই বেশি পেয়েছেন। ঢাকার মাস্টারমাইন্ড স্কুল থেকে ও লেভেল এবং এ লেভেল পার করেছেন আওসাফ। বাবা-মা দুজনই চিকিৎসক হওয়ার কারণে শৈশব–কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জায়গায়। এমবিবিএস শেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করতে পারলে অরোধ্যতে পুরো সময় দেওয়ার ইচ্ছে তাঁর।