ক্যাম্পাসের প্রেমে

রাকিবুল হাসান, ঢাকা কলেজ
রাকিবুল হাসান, ঢাকা কলেজ

বিজ্ঞানের ছাত্র রাকিবুল হাসান পড়তে চেয়েছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানে। বেসরকারি মেডিকেলে পড়ার সুযোগও হয়েছিল। কিন্তু স্কুলশিক্ষক বাবা বাধ্য হয়েই ভর্তি করালেন ঢাকা কলেজে; প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে। শুরুতে কলেজে মন না বসলেও সময়ের সঙ্গে একটু একটু করে প্রেমে পড়েন ক্যাম্পাসের। রাকিবের ভাষায়, ‘শুরুতে একেবারেই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। বন্ধুরা বিভিন্ন মেডিকেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। অন্যদিকে আমি সরকারি কলেজে। কলেজের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আস্তে আস্তে শিক্ষকদের প্রিয় হয়ে উঠেছি। ক্যাম্পাসটাও এখন আপন লাগে।’

এই তো সেদিনের কথা। গত বছর কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক সপ্তাহের মঞ্চে চলছিল তুমুল বিতর্ক। বিতর্কের নির্ধারিত বিষয়, ‘আইনের কঠোর প্রয়োগ নয়, বরং সচেতনতা বিস্তারই সমাজ অপরাধমুক্ত করার মূল নিয়ামক’। কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে বারোয়ারি বিতর্কে দ্বিতীয় হন রাকিবুল হাসান। একই মঞ্চে তাৎক্ষণিক অভিনয় এবং উপস্থিত বক্তৃতায় রাকিব সেরা। শুধু প্রতিযোগিতায় নয়, আরও নানা কার্যক্রমে যুক্ত ঢাকা কলেজের রাকিব।

ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস ‘দক্ষিণায়ন’র ২০১ নম্বর রুম তাঁর ঠিকানা। এ রুমে থেকেই ক্যাম্পাসের সব মানবিক কর্মকাণ্ডে সরব রাকিব। অসুস্থ কারও তাৎক্ষণিক রক্তের জোগান দেওয়া কিংবা ক্যাম্পাসের পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা অভিযান—সব ক্ষেত্রেই তিনি দৃশ্যমান। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন বাড়ছে, রাকিব তৎপর হন রক্তদানে। কঠিন সেই সময়ে আটজন রুমমেটকে সঙ্গে নিয়ে রক্ত দিতে ছুটেছেন শহরের নানা হাসপাতালে। এখনো কারও রক্তের প্রয়োজন হলে ডাক পড়ে রাকিবের। রক্তের বন্দোবস্ত না করে ক্ষান্ত হন না এই তরুণ।

মানুষের জন্য কিছু করার আকুতি অবশ্য বেশ আগে থেকেই ছিল। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় একবার উদ্যোগ নেন—ঈদে সেমাই-চিনি বিতরণ করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ! বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে সেবার কোরবানির ঈদে ৫০ জন অসহায় মানুষের ঘরে সেমাই পৌঁছেছিলেন তিনি। ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েও যুক্ত হয়েছেন কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপের সঙ্গে। এই সংগঠনের উদ্যোগেই ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে রাকিবের নেতৃত্বে সপ্তাহান্তে একদিন চলে পরিচ্ছন্নতা অভিযান। ক্যাম্পাসের বাইরেও বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে তাঁর। রোভার স্কাউট গ্রুপের সদস্য হিসেবে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একবার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল। এ নিয়ে বেশ তৃপ্তি আছে টাঙ্গাইলের সন্তান রাকিবের। তিনি বলেন, ‘মফস্বলের ছেলে হয়েও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরেছি, এটা অনেক বড় পাওয়া। এতে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।’

এত সব কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবের সবচেয়ে বড় অর্জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রিয় হয়ে ওঠা। কলেজের যেকোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনে শিক্ষকদের ডাক পান রাকিব। বলছিলেন, ‘শিক্ষকেরা আমাকে পছন্দ করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে যুক্ত হয়ে প্রথিতযশা মানুষদের সান্নিধ্য পাই। বিভিন্ন বিভাগের ছাত্ররাও প্রশংসা করে। মানুষের জন্য কিছু করতে পারা আর শিক্ষকদের প্রিয় হয়ে ওঠা আমার সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করি।’