কেন পড়ব ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট

আইইউবিএটির ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ল্যাবে কাজ শিখছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
আইইউবিএটির ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ল্যাবে কাজ শিখছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
>ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল...কত রকম বিষয় আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কোন বিষয়ে আমি পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। স্বপ্ন নিয়ের এই বিভাগে আমরা একেকটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আজ ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে বলেছেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সমন্বয়ক মোহাম্মদ আবু হুরাইরা

কী পড়ানো হয়?

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আওতায় চারটি মূল বিষয় (মেজর) নিয়ে পড়াশোনা করা যায়—ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্ট, হাউস কিপিং ম্যানেজমেন্ট, কালিনারি আর্টস বা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন আর ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট। এ ছাড়া ট্রাভেল ম্যানেজমেন্ট, রিক্রিয়েশন ম্যানেজমেন্ট, লেইজর ম্যানেজমেন্ট—এই কোর্সগুলোও আছে এর আওতায়।

একজন পর্যটক বা ভ্রমণকারী তাঁর প্রয়োজনীয় সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই যোগাযোগ করেন কোনো হোটেল, রিসোর্ট বা মোটেলের ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসারদের সঙ্গে। তখন সেই পর্যটক বা ভ্রমণকারীর প্রশ্ন ও চাওয়া বুঝে কীভাবে তাঁকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা যায়, সেটাই শেখানো হয় ফ্রন্ট অফিস বা ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজমেন্ট কোর্সে। এরপর ভ্রমণকারীর থাকার জন্য আবাসন সুবিধা ও সেবার বিষয়ে জানা যায় হাউস কিপিং ম্যানেজমেন্টে। আছে কালিনারি আর্টস ও ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন কোর্স। অতিথির খাবারের পছন্দ, স্বাদ, গুণগত মান মাথায় রেখে কীভাবে খাবার তৈরি ও পরিবেশন করতে হবে, সেটি শেখানো হয় এই কোর্সে। এখানে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে খাবার বানানো ও পরিবেশন নিয়ে জানতে হয়, রীতিমতো হোটেলের রান্নাঘরের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে শিখতে হয়। একজন শিক্ষার্থী চাইলে এই কোর্সের মাধ্যমে একজন নামকরা রন্ধনশিল্পী হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই ভিন্ন ভিন্ন কুজিনের রন্ধনশিল্পীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদের এখানে এসব কোর্স ফাইভ স্টার পর্যায়ের ল্যাবে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে।

ভবিষ্যৎ কী?

বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকার জন্য আমাদের বোঝা প্রয়োজন, কোন পেশার পথে পা বাড়ালে আমরা সেরাটা দিতে পারব। সেভাবে চিন্তা করতে গেলে পর্যটন বা ভ্রমণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে ভ্রমণ করতে হয়। শুধু বিনোদন নয়, পেশাগত কাজেও কম-বেশি সবাইকেই ভ্রমণ করতে হয়। এই ভ্রমণের সময়েই হোটেলে, রেস্টুরেন্টে, রিসোর্টে, মোটেলে সেবা দেওয়ার জন্য দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। যে দক্ষতা মিলবে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। ভবিষ্যতে সারা বিশ্বই পর্যটন সেবায় গুরুত্ব দেবে। কেননা প্রতিটি দেশই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস, জীবনযাপন ও প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চায়। যার মূল সুর হবে এই পর্যটন খাত। তাই ভবিষ্যতে এই খাতে বিপুল পরিমাণে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হবে।

পেশা কোথায়?

ঢাকায় এখন প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আন্তর্জাতিক মানের চেইন হোটেল চালু হচ্ছে। পারিবারিক বিনোদনকেন্দ্রগুলোর নতুন অংশ হয়ে উঠছে রিসোর্টগুলো। ইতিমধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শুরু হয়েছে। এগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে, দেশে ভবিষ্যতে বিদেশি ভ্রমণকারীর সংখ্যা বাড়বে। ভ্রমণকালে তাঁদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে পারদর্শী জনবল। তাই এই সেবা–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যারিয়ার গড়ার অঢেল সুযোগ থাকছে এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের। বাংলাদেশ বিমান থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমানে কেবিন ক্রু, স্টুয়ার্ড হিসেবে কাজ করছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বাংলাদেশের বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক মানের হোটেলে সুপারভাইজার পর্যায়েও কাজ করছে তারা।

তবে এই বিভাগে পড়া মানে যে শুধু পর্যটনসেবার ক্ষেত্রগুলোই কাউকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে হবে, তা নয়। যেকোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানেও কাজ করার সুযোগ থাকছে। আমাদের এই বিভাগ থেকে পাস করা অনেক শিক্ষার্থীই স্নাতক শেষ করে সরকারি চাকরি করছে। তাই দক্ষতা গড়ে তুলতে পারলে নানা রকম সুযোগই আছে।

কাদের পড়া উচিত?

আমাদের পাঠ্যক্রম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থীই উচ্চমাধ্যমিক শেষে এই বিভাগে পড়তে পারেন। সারা বিশ্বেই প্রায় এই এক পদ্ধতিতে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের পাঠ্যক্রম সাজানো হয়। তবে যেহেতু এখানে সেবা দেওয়ার একটা প্রবণতা থাকে, মানুষের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেবা পৌঁছে দিতে হয়, তাই যাঁরা বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনা করেছে, তাঁদের জন্য এই বিভাগের পড়া তুলনামূলক সহজ হবে।

অনুলিখন: আলিমুজ্জামান