কেন পড়ব পুরকৌশল

>ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল...কত রকম বিষয় আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। কোন বিষয়ে আমি পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। স্বপ্ন নিয়ের এই বিভাগে আমরা একেকটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আজ পুরকৌশল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) সম্পর্কে বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বায়েজীদ বাতেন

কী পড়ানো হয়

আমাদের সামনে আমরা যা কিছু দেখছি—সবই আসলে পুরকৌশলের অংশ। পুরকৌশলীরাই আমাদের সভ্যতার কারিগর। মানুষের বসবাসের অনুপযোগী একটি জায়গাকে বাসোপযোগী করে তোলার মূল কাজ পুরকৌশলীদের। মূলত চারটি ভাগে পড়ানো হয় এই বিষয়—স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং, জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং। একটি ভবনের নকশা করা থেকে শুরু করে নকশা বাস্তবায়ন—সবকিছু শেখানো হয় স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এই নকশা করার ক্ষেত্রে নানা বিষয় মাথায় রাখতে হয়। এ বিষয়গুলো সব হাতে-কলমে শেখানোও সম্ভব হয় না। সে জন্য একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীকে সফটওয়্যার সম্পর্কেও জানতে হয়। এরপর জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংও বড় জায়গা। একটা স্থাপনার ভিত্তি কীভাবে করতে হয়, ভবনের স্থায়িত্ব থাকবে কি না, এসব বিবেচনায় নিয়ে জায়গার উন্নয়ন করার বিদ্যা শেখানো হয় এই কোর্সে। অন্যদিকে আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা—যানজট রোধে করণীয়গুলো নির্ধারণ করতে পারেন ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়াররা। বাসা থেকে বের হয়ে আপনি কোথাও যাবেন, এই যাত্রা ঝঞ্ঝাটমুক্ত করার দায়িত্ব তাঁদের। আর এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এখন সারা বিশ্বেই খুব গুরুত্ব পাচ্ছে। আমাদের বায়ুমণ্ডল দিন দিন দূষিত হচ্ছে। এর বিপরীতে আমরা কিন্তু ধীরে ধীরে ‘গ্রিন এনভায়রনমেন্ট’–এর দিকে যাচ্ছি। আমরা একটা ভবন তৈরি করলেও সেখানে সবুজের আধিপত্য রাখতে চাই। এসব বিবেচনায় নিয়ে আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কয়েকটি জিনিস পড়াচ্ছি। যেমন বায়ুমান ঠিক রাখা কিংবা বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা।

সহজ ভাষায় বললে এই চারটিই হলো পুরকৌশলের মূল বিষয়। চতুর্থ বর্ষে গিয়ে একজন শিক্ষার্থী যেকোনো একটি বিষয় মূল বা মেজর হিসেবে বেছে নেন। তাঁরা সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। এ ছাড়া প্রথম দুই বছরে সরকার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞানও পড়ানো হয়। এ ছাড়া থাকে যোগাযোগ উন্নয়নের মতো বিষয়।

ক্যারিয়ার কোথায়

বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র। আমরা যেভাবে একটু একটু করে উন্নত হচ্ছি, সেটা বেশ আশাব্যঞ্জক। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ভালো। যেভাবে উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হচ্ছে, আগামী ১০০ বছরেও আমাদের দেশে অনেক কাজ হবে। তাই আমি মনে করি, পুরকৌশলের স্নাতকদের বেকার থাকার সুযোগ নেই। এই মুহূর্তে যত বেশি মেধা পাওয়ার প্রয়োজন, আমরা তা পাচ্ছি না। যার কারণে বাইরের দেশ থেকে আনতে হচ্ছে। এখানে বড় একটি সুযোগ আছে এ দেশের শিক্ষার্থীদের। এর বাইরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পুরকৌশলীদের পদ আছে। কিছু আছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, আর কিছু নির্মাণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এর বাইরেও পুরকৌশল পড়ে অনেকেই উদ্যোক্তা হচ্ছেন। সব মিলিয়ে আমাদের দেশের বাস্তবতায় আমি মনে করি, শীর্ষ তিন পেশার মধ্যে পুরকৌশল অন্যতম।

ভবিষ্যৎ কী

আমাদের জীবনযাত্রার মান আমরা কতটা উন্নতি করতে চাই, তার ওপর নির্ভর করছে পুরকৌশলের ভবিষ্যৎ। আমরা কিন্তু প্রতিনিয়ত রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছি উন্নয়নে। এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে উঁচু ভবন ৩৪ তলা। সরকার ১৪২ তলা আইকনিক টাওয়ার বানানোর পরিকল্পনা করছে। আমাদের যেহেতু জায়গার সীমাবদ্ধতা আছে, আমাদের এখন উঁচু ভবনের দিকে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে পুরকৌশলীরা মূল ভূমিকা পালন করছেন। এ ছাড়া সিমেন্ট উৎপাদন করতে গিয়ে পরিবেশ হুমকিতে পড়ছে। পুরকৌশলীরা এর বিকল্প ভাবছেন। পৃথিবী যতই উন্নত হচ্ছে, পুরকৌশলীরা তাল মিলিয়ে কাজ করছেন। সুতরাং আমরা যত বেশি এগিয়ে যাব, জীবনযাত্রা যত বেশি আধুনিক হবে, পুরকৌশলের ভবিষ্যৎ ততটাই উজ্জ্বল।

কারা পড়বেন

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা পড়তে পারবেন। এর বাইরে যাঁরা পুরকৌশলে পড়তে চান, তাঁদের বেশ কিছু বিষয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এর মধ্যে গণিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের সব নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করতে হয়। সে ক্ষেত্রে যাঁরা গণিতে ভালো, তাঁরা ভালো করবেন। গণিত শুধু মুখস্থ করলে হবে না, বুঝতে হবে। এ ছাড়া কারও যদি সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকে, তাহলে পড়ালেখা ও পেশা—দুই জায়গাতেই কাজে আসবে। যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে। যাঁরা পুরকৌশলে পড়তে চান, তাঁদের এখন থেকেই এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে।

অনুলিখিত