দেশের টানে, বাংলা প্রাণে

জেসন রবসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জেসন রবসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জেসন রবসন। হাস্যোজ্জ্বল এই তরুণের জন্ম নিউজিল্যান্ডে। একুশ বছর বয়সে তিনি ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও বাংলাদেশে ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। ঘোরাঘুরির পর্ব শেষে সবচেয়ে ভালো লেগে যায় এই বাংলাদেশকে। নিউজিল্যান্ড ফিরে যাওয়ার পরও সবুজ দেশটা খুব টানছিল। খুলনায় বেড়াতে গিয়ে তাঁর মনে হয়েছে, তিনি এই দেশের মায়ায় পড়ে গিয়েছেন। এই দেশের জন্য কিছু করতে চান।

কিছু করার চিন্তাভাবনা থেকে ভাষা শেখার বিষয়টা মাথায় আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শ্রেণিকক্ষে বসে তিনি বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ আমার খুব পছন্দ। আমি বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে চাই। বাংলা ভাষা না জানলে তো আমি তাঁদের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব না। তাই বাংলা ভাষা শিখছি।’

বাংলা ভাষা শেখার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। এখানে চার ধাপে বাংলা ভাষা শেখানো হয়। পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় করানো হয়। জেসন রবসন এখন বাংলা বিষয়ে উচ্চতর ডিপ্লোমা কোর্সের চতুর্থ, অর্থাৎ শেষ ধাপে আছেন। আমাদের সঙ্গে যখন কথা বলছেন, তখন তাঁর হাতে দুটি বই। একটি হুমায়ুন আজাদের লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী, অন্যটি সেলিনা হোসেনের নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি। এর আগে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পড়েছেন।

আমাদেরকে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘১৪০০ সাল’ কবিতাটির কয়েক ছত্র আবৃত্তি করে শোনালেন। আন্তর্জাতিক ভাষা ও শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি কবিতা আবৃত্তি করেন। বাউলগানের ভক্ত তিনি। পয়লা বৈশাখে পাঞ্জাবি পরে চলে যান রমনার বটমূলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে আসেন সাইকেলে প্যাডেল মেরে। অনেক জায়গায় তিনি সাইকেল নিয়ে বের হন। একদিন গুলশানে গিয়েছেন। সাইকেল নেননি। পাবলিক বাসে উঠতে গিয়ে সেদিন কী যে ঝক্কি পোহাতে হয়েছে! কিছুদিন আগে পুরো পরিবার নিয়ে জেসনের চাচাতো ভাই বাংলাদেশে এসেছিল। তাঁদেরকে নিয়ে তিনি আহসান মঞ্জিল, বুড়িগঙ্গা আর লালবাগ কেল্লায় ঘুরেছেন। গিয়েছিলেন সেই পুরোনো স্মৃতিঘেরা খুলনায়।

জেসন রবসন ভীষণ বিনয়ী। ছবি তোলার সময় সলজ্জ হাসিতে তিনি বললেন, ‘আমি তো কিছুই করিনি!’ পড়াশোনা শেষে বাংলাদেশের জন্য একটা কিছু করার পরিকল্পনা তাঁর।

সঞ্জয় সরকার