'বিদেশি পাইছেন নাকি'

রেবিকা প্রধান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
রেবিকা প্রধান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

রেবিকা প্রধানের সঙ্গে আলাপ জমাতে আমরা গিয়েছিলাম তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঢাকা মেডিকেল কলেজে। তখন কলেজ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। মুঠোফোনে কথা হচ্ছে। ফোনের ও–প্রান্ত থেকে রেবিকা জানালেন, আমাদের সামনেই তিনি আছেন। কিন্তু আমাদের চোখ তখনো ‘ভিনদেশি’ চেহারার কোনো মেয়েকে খুঁজছে। রেবিকাকে দেখে তো বোঝার উপায় নেই, তিনি নেপালের মেয়ে!

শুধু আমরা কেন, তাঁর শিক্ষকও প্রথমে বিশ্বাস করেননি। পরিচিতির জন্য ক্লাসে দাঁড় করানো হয়েছে। শিক্ষকের প্রশ্ন, ‘তুমি সত্যিই নেপালি তো?!’ ভিনদেশি তরুণীর সঙ্গে আড্ডা জমে উঠলে বোঝা গেল, বাংলাটা আরেকটু রপ্ত করতে পারলেই রেবিকা যে ভিনদেশি, এ কথা কাউকে বিশ্বাস করাতে আরও বেগ পেতে হবে। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে একপ্রকার মিশে গিয়েছেন তিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে ক্লাস শুরু করার পর বাংলা বুঝতে কষ্ট হতো। ক্লাসে অসহায় লাগত। কিন্তু বাংলা শিখতে তো হবে। হোস্টেলের বান্ধবীরাই প্রথমে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাঁদের কাছে কিছুটা শিখে, চর্চা করতে করতে তিনি রপ্ত করেন বাংলা ভাষা। এখন এমনই দক্ষ হয়ে উঠেছেন যে নিউমার্কেটে গিয়ে দিব্যি দরদাম করে কেনাকাটা করতে পারেন। হাসতে হাসতে রেবিকা বলছিলেন, ‘আমি বলি, “কী মামা? বিদেশি পাইছেন নাকি? এত দাম বলেন কেন? এটার দাম তো মাত্র ৫০০ টাকা।” শুনে দোকানদারেরা অবাক হন!’

মেডিকেলের পড়ালেখার কঠিন বেড়াজালের ফাঁকে সময় পেলেই তিনি মিশে যেতে চেষ্টা করেন বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে। পয়লা ফাল্গুনে বান্ধবীদের সঙ্গে বাহারি ফুলের খোঁপা বেঁধে ঘুরতে বের হন। সাকরাইনে চলে যান পুরান ঢাকায়। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে ভোলেন না। প্রায় প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সরস্বতীপূজায় তাঁর উপস্থিত থাকা চাই।

ফেব্রুয়ারি এলে তিনি অপেক্ষা করেন বইমেলার জন্য। দল বেঁধে ঘুরে এসেছেন নারায়ণগঞ্জের পানাম সিটি থেকে। চা–বাগান দেখতে ঘুরে এসেছেন সিলেট। সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন শুনতে পাড়ি জমিয়েছেন কক্সবাজার।

বাংলা গান শুনতে ভালোবাসেন। তবে বাংলা সাহিত্য এখনো পড়া হয়নি। বন্ধুদের কাছে হুমায়ূন আহমেদের গল্প শুনেছেন অনেক। এবার তাঁর বই পড়ার পরিকল্পনা। কলেজের অনুষ্ঠানে বাংলা গানের তালে নেচেছেনও এই নেপালি তরুণী। এককথায়, রেবিকা বাংলা ভাষা ও বাঙালিয়ানাকে উপভোগ করছেন একজন বাঙালির মতো করেই।

সঞ্জয় সরকার