ভাবনাজুড়ে নিজের দেশ

আবদি সামাদ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
আবদি সামাদ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

পরিচয় পর্বের শুরুতেই আবদি সামাদ জানতে চাইলেন, ‘কেমন আছেন? কোথায় থাকেন?’ সোমালিয়ার এ শিক্ষার্থী বাংলায় কথা বলেন থেমে থেমে। ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিশ্বজয় নিয়েও কথা বললেন। জানালেন, খেলা দেখেছেন তিনি। কোন দলের জয় চেয়েছিলেন জানতে চাইলে মুচকি হেসে বললেন—বাংলাদেশ। মাঘের শেষ বিকেলের এমনই এক আড্ডায় নানা বিষয়ে কথা জমল আবদি সামাদের সঙ্গে।

আবদি সামাদের জন্ম সোমালিয়ার গুরিয়েল এর গালগাডু গ্রামে। বাংলাদেশে পড়ছেন পরিবেশবিজ্ঞানে, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাসে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে কাছের সামাদ। যেকোনো আড্ডায় তাঁর সরব উপস্থিতি।

সুযোগ পেলেই দলেবলে চলে যান ঢাকার বাইরের কোনো স্থানে। এখন পর্যন্ত ১৮ জেলা ঘুরেছেন। আঙুলের কড়া গুনে হিসাব করে বলে দিলেন, ‘...চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, কুষ্টিয়ায় আমি গিয়েছি। নেক্সট প্ল্যান সারা দেশ।’ সামাদের পছন্দের জায়গা অবশ্য সিলেটের জাফলং। ৫ বার গিয়েছেন তিনি। আবার যাওয়ার ইচ্ছা।

বাংলা শেখা আর ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়েই বসে থাকেন না সামাদ। কিছুদিন পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট চলে আবদি সামাদের উদ্যোগে। গত বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ও সোমালিয়ার শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজ উদ্যোগে আয়োজন করেন প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। হাড্ডাহাড্ডি সে খেলায় ট্রফি অবশ্য সামাদের দলের হাতেই ওঠে। এ খেলার আয়োজনের কারণও স্পষ্ট করলেন তিনি। ‘সবার সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ করতেই এই ম্যাচ। ভালো ফ্রেন্ডশিপ স্টার্ট হয়েছে ওই খেলার পরে।’ সামাদ নিজেও ভালো খেলেন। ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে অনুশীলন তাঁর নিয়মিত কাজ।

আবদি সামাদের ভাবনাজুড়ে তাঁর দেশ সোমালিয়া। পড়াশোনা শেষে কাজ করতে চান পরিবেশ নিয়ে। এ নিয়ে বইও লিখছেন এই তরুণ। সোমালিয়ার ভাষায় লেখা বইটির নাম বাংলা করলে দাঁড়ায় সোমালিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তন।

ভাঙা বাংলা আর অল্প ইংরেজি মিশিয়ে কথা চলল সামাদের সঙ্গে। ঘণ্টা দুয়েকের আড্ডায় অনেকটা সময় ধরেই তিনি বাংলা বিভিন্ন উচ্চারণ শিখে নিলেন আগ্রহসহকারে। সূর্য যখন অস্তের অপেক্ষায়, আমাদের আড্ডারও রাশ টানতে হলো। যাওয়ার আগে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের নিস্তব্ধতা ভেঙে আবদি সামাদ শুনিয়ে গেলেন, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...।’

হাসান ওয়ালী