বিতর্কের লড়াইয়ে এগিয়ে চলা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সদস্যরা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সদস্যরা

ক্যাম্পাসের মূল ফটক পার হলেই কাটা পাহাড়। কাটা পাহাড়ের রাস্তা ধরে কয়েক মিনিট হাঁটলেই দেখা মিলবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির কার্যালয়। কার্যালয়ের সামনে ছোট একটা উঠান। এই উঠানে বসেই যুক্তি-তর্কের চর্চা করেন শিক্ষার্থীরা।

পাহাড় আর সবুজে ঘেরা এমন পরিবেশে বিতার্কিকদের এই অনুশীলন চলছে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে। ১৯৯৪ সালে ‘অন্তরের সীমানা বিস্তারে যুক্তিযুদ্ধে সব্যসাচী, চেতনায় অনির্বাণ’—স্লোগানে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় এ বিতর্ক সংগঠন। এই যাত্রায় সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে একেকটি পালক। মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গুটিকয় শিক্ষার্থী গড়ে তুলেছিলেন সংগঠনটি। সংক্ষেপে একে এখন ‘সিইউডিএস’ বলে জানে সবাই

কর্মশালায় হাজারো শিক্ষার্থী

প্রতিষ্ঠার পর সংগঠনের উদ্যোগে একাধিক কর্মশালা আয়োজিত হয়েছে। এই আয়োজনগুলো সাড়া ফেলেছে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। মূলত ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা যাচ্ছে সিইউডিএস। গত তিন বছরে এই সংগঠন আয়োজিত কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি, তাঁদের সবাই এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী। এ বছরও ‘১৬তম সিইউডিএস বিতর্ক ও পাবলিক স্পিকিং কর্মশালা’র আয়োজন করা হচ্ছে। বর্তমানে সংগঠনের সক্রিয় সদস্যসংখ্যা প্রায় ৫০ জন। অনিয়মিত সদস্যের সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার প্রসারের ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে সিইউডিএসের সদস্যরা। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার। এ সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টাও তিনি। উপাচার্য বলেন, বিতর্কের মাধ্যমে যুক্তিবাদী মানুষে পরিণত হওয়া যায়। যুক্তিবাদী মানুষ সমাজসচেতন হয়। অন্তত ইতিহাস এটাই বলে। বিতর্কের মাধ্যমে নানা প্রশ্ন ও উত্তর উত্থাপিত হয়। আর সমাজও এগিয়ে যায়

অর্জন যত

গত এক দশকে দেশ–বিদেশে অর্ধশত পুরস্কার পেয়েছে সিইউডিএস। শুধু ২০১৯ সালেই ঘরে তুলেছে ১৭টি শিরোপা, তার মধ্যে ১০টি চ্যাম্পিয়নশিপের। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজিত সহিংস জঙ্গিবাদবিরোধী আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং অর্গানাইজেশন আয়োজিত আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আয়োজিত আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা।

এ ছাড়া রয়েছে সাতটি রানার্সআপের শিরোপা। সংগঠনটি অংশগ্রহণ করেছে ভারত, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, ফিলিপাইন ও গ্রিসে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও।

বিতর্কের বাইরেও তাঁরা

শুধু বিতর্ক করেন এমন নয়, সময় ও সুযোগ বুঝে সংগঠনের সদস্যরা পালন করেন নানা সামাজিক দায়িত্ব। শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে গণসংযোগ, রক্তদান কর্মসূচি, শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মতো কর্মকাণ্ডে নিয়মিত সরব থাকেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে ক্লান্তি নেই। বরং উচ্ছ্বাস আছে, আছে উদ্দীপনা। গত বছর সিইউডিএস আরও একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যাম্পাসে এক হাজার গাছ রোপণ করে। সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক। সদস্যদের এসব কর্মকাণ্ডে তিনিও গর্বিত। এ শিক্ষকের মতে, বিতর্কের বাইরেও সংগঠনের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। এসব কাজ আরও এগিয়ে নেবে সংগঠনকে। এসব কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্বশীলতা তৈরি হয়।

সংগঠনের বর্তমান সভাপতি ইনতিছর বিন ইসমাইল বলেন, ‘বিতর্কের প্রতি একাগ্রতা, শ্রম, নিষ্ঠা ও সাধনা সিইউডিএসকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে সাফল্য এনে দেওয়াই সংগঠনের লক্ষ্য। এ ছাড়া যেকোনো প্রগতিশীল আন্দোলনের অংশীদার হিসেবে যুক্তি-তর্ক বিস্তারের মাধ্যমে সিইউডিএস তার অগ্রযাত্রা ধরে রাখবে। আমাদের প্রত্যয় একটাই, বিতর্কের যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়া।’