স্থাপত্যের আঁকিবুঁকি, গিটারের টুংটাং: শাহরিয়ার মাহমুদ

শাহরিয়ার মাহমুদ।
শাহরিয়ার মাহমুদ।
>

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা পরিচিতি পেয়েছেন গীতিকার হিসেবে। অনেকে নিজেরাই গান লেখেন, গান করেন।

‘আধো আধো বোলে যখন কথা বলতাম, তখন আর্কের “চারিদিকে উৎসব” গানটা কে যেন শিখিয়ে দিয়েছিল। আমার ছোট চাচা আমাকে কোলে করে তার বন্ধুদের সামনে নিয়ে গাইতে বলত, আমি গাইতাম! ব্যস এই ছিল শুরু...।’

কথা হচ্ছিল আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার মাহমুদের সঙ্গে। সংস্কৃতিমনা পরিবারের ছোট ছেলেটা বেড়ে উঠেছিল হাসি, আড্ডা, গান আর কবিতার সংস্পর্শে। এই যেমন বড় বোন যখন গানের রেওয়াজে মগ্ন, ছোট্ট শাহরিয়ার প্রায়ই হারমোনিয়ামের দখল নিয়ে নিত। কিংবা বড় ভাইয়ের আবৃত্তিচর্চাও শোনা হতো বেশ মনোযোগ দিয়ে। একান্তই নিজের মতো করে গানের চর্চা চলছিল। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে এসে যোগসূত্র মিলল। হঠাৎ বড় একটা বন্ধুর দল, তাদের বিচিত্র চিন্তাভাবনা, আর কিছু একটা করার তাড়না। একসময় বন্ধুদের নিয়েই একটা গানের দল গঠন করে ফেললেন শাহরিয়ার।

মাইলস, সোলস, এলআরবি, আর্ক, ওয়ারফেইজ আর নগরবাউলের গান শোনা হতো খুব। চলত গানের কভারও। হঠাৎই একদিন তাঁর মনে হলো, নিজের মনেও উঁকি দিচ্ছে কিছু শব্দ, কিছু সুর। অ্যাকোয়েস্টিক গিটারে টুংটাং করতে করতেই তৈরি হয়ে গেল প্রথম গান! গাইতে গাইতে আর ভাবতে ভাবতেই চলতে থাকল নতুন গান তৈরির চেষ্টা।

এদিকে স্থাপত্যে পড়ার পাশাপাশি সময় সংকুলানটা বেশ কঠিন বটে! তবে একটি সৃষ্টিশীল কাজ নিশ্চয়ই অন্য সৃষ্টিশীল কাজকেও এগিয়ে নিয়ে যায়। মিসির আলি, হিমুর ভক্ত শাহরিয়ার বুঝেছিলেন, খুব সাধারণ কিছু কথা বলেও বেশ একটা শক্তিশালী প্রভাব তৈরি করা যায়। সঠিক শব্দচয়নে, অল্প শব্দেই বলা যায় অনেক কথা।

শাহরিয়ারের মনের কথার সঙ্গে তাঁর গানের কথা মিলিয়ে নিতে পারেন। ‘সোনালি মলিন গোধূলি বেলায় ভাবি, বাঁচার সময় আছে কত বাকি/কতটা পথ আরও হেঁটে গেলে ভুলে যাব, অপূর্ণতার হাসি/সায়াহ্নের গতিময়তায় হঠাৎ থমকে খুঁজি, পুরোনো স্মৃতি পুরোনো আমি।’ এমন আরও বেশ কিছু গান আছে তাঁর ঝুলিতে।

প্রকৌশলের এই ছাত্র বলছিলেন, ‘আমার সবগুলো গান কোনো ঘটনা বা মুহূর্তকে কেন্দ্র করে। আমার মনের একটা নিছক কল্পনাকেও কিছু শব্দ আর সুর দিয়ে গানে নিয়ে আসার মতো অদ্ভুত কাজও করেছি।’ গান নিয়ে এখনই অনেক স্বপ্ন না দেখলেও, শখের এই কাজটা গুছিয়ে নেওয়ার ভীষণ ইচ্ছে আছে শাহরিয়ারের। স্থাপত্যের পাশাপাশি প্রিয় গিটার আর সঙ্গে যোগ হওয়া ইউকুলেলেটা নিয়েই একদিন শখ পূরণের স্বপ্ন দেখেন। তাঁর কাছে শখের তোলা আশি টাকা নয়, প্রায় কোটি টাকা তো হবেই!

সামিয়া শারমীন