চোয়ালে কলম চেপে লিখেই বৃত্তি পেল লিতুন জিরা

এভাবে লিখে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পেয়েছে লিতুন জিরা। মায়ের সঙ্গে বাড়িতে। ছবি: প্রথম আলো
এভাবে লিখে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পেয়েছে লিতুন জিরা। মায়ের সঙ্গে বাড়িতে। ছবি: প্রথম আলো

জন্ম থেকেই লিতুন জিরার (১০) দুটি পা নেই। দুই হাতও নেই কনুইয়ের ওপর থেকে। তবু লেখাপড়ার অদম্য চেষ্টা মেয়েটির। লেখার জন্য ডান হাতের বাহুর আগা দিয়ে কলম চেপে ধরে চোয়ালে। এভাবে লিখেই এবার সে বসেছিল প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষায়। গতকাল বুধবার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। বৃত্তি পেয়েছে লিতুন জিরা।

লিতুন মনিরামপুরের শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। সে এখন একই উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে।

লিতুনের বাবা হাবিবুর রহমান ওই উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ আর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। তিনি ১৭ বছর ধরে কলেজটিতে শিক্ষকতা করছেন। লিতুনের মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। দুই ভাই–বোনের মধ্যে ছোট লিতুন।

লিতুন জিরা বলে, ‘বৃত্তি পেয়ে আমি খুব খুশি। আমি মানুষের সেবা করতে চাই। লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হতে চাই।’

মা জাহানারা বেগম বলেন, লিতুনের জন্মের পর তার প্রতিবন্ধিত্ব দেখে অনেক কেঁদেছিলেন তিনি। পরে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ওকে কারও বোঝা হতে দেবেন না। সেই পণ থেকে ছোটবেলায় ওকে টুলের সামনে বসিয়ে দিতেন। টুলের ওপর লেখার স্লেট রেখে হাতে দিতেন খড়িমাটি। খড়িমাটি ডান হাতের বাহুর মাথা দিয়ে ডান চোয়ালে চেপে ধরে নিচু হয়ে মেয়েটা স্লেটে লিখত। এভাবে নিজে নিজেই লেখা শিখেছে। এখন সেভাবে কলম ধরে সামনে টেবিলে রাখা খাতায় লিখে পরীক্ষা দেয় সে। মেয়েটা বৃত্তি পাওয়ায় তিনিও দারুণ খুশি।

বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘লিতুন বৃত্তি পাওয়ায় খুব ভালো লাগছে। ওর হাতের লেখা সুন্দর। ভালো ছবিও আঁকতে পারে। কবিতা আবৃত্তি করতে পারে। গান গাইতে পারে। ও যত দূর পড়তে চায়, আমি ওকে তত দূর পড়াব।’

প্রতিদিন সকালে মা জাহানারা মেয়েকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে, তা ঠেলে নিয়ে বিদ্যালয়ে দিয়ে আসতেন। আবার ছুটি হলে হুইলচেয়ারে করে বাড়ি নিয়ে আসতেন। টিফিনের সময় দাদি স্কুলে খাবার খাইয়ে দিয়ে আসতেন। এভাবেই প্রাথমিকের পড়া শেষ করেছে ভীষণ সংগ্রামী ছোট্ট লিতুন।

খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা খাতুন বলেন, ‘লিতুন অত্যন্ত মেধাবী। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৫৭১ পেয়েছিল সে। ৫৭৫ নম্বর থেকে মেধা কোটায় বৃত্তি (ট্যালেন্টপুলে) শুরু। আর লিতুন ৫৭১ নম্বর পেয়ে সাধারণ কোটায় বৃত্তি পেয়েছে। ও বৃত্তি পাওয়ায় আমরা খুব খুশি।’