শিক্ষার্থীদের অনশন স্থগিত, দাবিকে অযৌক্তিক বলছেন শিক্ষকেরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন। শনিবার দুপুরে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ভবনে। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন। শনিবার দুপুরে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ভবনে। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন স্থগিত করেছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে প্রক্টরসহ বিভাগের শিক্ষকদের আশ্বাসে তারা অনশন ভাঙেন। বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনকে শিক্ষকেরা ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়েছেন।

বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ভবনের সামনে টানা অনশন শুরু করেছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের বিভাগের নাম পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট পরিবর্তন করে ‘ফলিত পরিসংখ্যান’ করার দাবি জানান। অনশনের কারণে তিন দিনে প্রায় ৫১ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান, বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মণ্ডলসহ শিক্ষকেরা অনশনস্থলে যান। প্রক্টর লুৎফর রহমান জুস খাইয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান। আগামী সোমবার বিকেল তিনটায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আলোচনার কথা রয়েছে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার পর আজ শনিবার স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ভবনে বিভাগের শিক্ষকেরা সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তারা বলেন, বিভাগের নাম পরিবর্তনের জন্য শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক আন্দোলন করছেন। তারা শিক্ষার্থীদের ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ থেকে সরে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে আসার আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিভাগের সভাপতি নজরুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘গত ১৯ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীরা হঠাৎ পিএসসিতে বিভাগের স্বতন্ত্র কোড অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের বিভাগের পক্ষ থেকে কোড অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপের কথা জানানো হয়। এর কিছুদিন পর হঠাৎ বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘ফলিত পরিসংখ্যান’ করার জন্য বিভাগের লিখিত আবেদন করে। শিক্ষার্থীদের দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পরিসংখ্যান বিভাগের সিলেবাসের সঙ্গে এই বিভাগের সিলেবাসের প্রায় ৭২ শতাংশ মিল রয়েছে। তবে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে, এই সাদৃশ্য মাত্র ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ।’

এতে আরও বলা হয়, ‘ক্লাস-পরীক্ষা ফেরার জন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্তত সাত বার শিক্ষকেরা আলোচনা করেছেন। তবুও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝানো সম্ভব হয়নি। উপরন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে, তারা ততই শিক্ষকদের সঙ্গে অত্যন্ত রূঢ় ভাষায় কথা বলছে। এই অযৌক্তিক আন্দোলনের ফলে বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় তার অর্জিত সুনাম হারাচ্ছে। তাই বিভাগ মনে করে, শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভুল সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিভাগের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিভাগের শিক্ষক জে এ এম সকিলউর রহমান, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল গনি, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম খান, নূরুজ্জামান হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী গালিব হাসান বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের সঙ্গে সোমবার আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রক্টর ও বিভাগের শিক্ষকেরা আমাদের দাবি নিয়ে ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছেন। দাবি না মানা হলে আমরা আবার কর্মসূচিতে যাব।’

বিভাগের সভাপতি নজরুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা বিভাগের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত। এটা কারও একক নয়, সব শিক্ষকের বক্তব্য।’