নানা আয়োজন, সঙ্গে নেতৃত্বের চর্চা

ক্যাম্পাসে ফার্মা সায়েন্স ক্লাবের সদস্যরা একটা পরিবারের মতো। ছবি: সংগৃহীত
ক্যাম্পাসে ফার্মা সায়েন্স ক্লাবের সদস্যরা একটা পরিবারের মতো। ছবি: সংগৃহীত

কথা ছিল আড্ডা জমবে সকাল ১০টায়। ফাল্গুনের এক সকালে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে (ইউএপি) পৌঁছে গেলাম মিনিট দশেক আগেই। ক্যাম্পাসে অভ্যর্থনা জানালেন ফার্মা সায়েন্স ক্লাবের সদস্যরা। আগেভাগে এসে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। ইউএপির দৃষ্টিনন্দন উঁচু দালানটির পঞ্চম তলায় বসলাম আমরা। ফার্মাসি বিভাগের কনফারেন্স রুম। এখানে বসেই কয়েক দিন আগে চলেছে বিশাল কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা। ‘ফার্মা ফেস্ট-২০২০’ আয়োজনের মূল কারিগর এই শিক্ষার্থীরাই।

কদিন আগে হয়ে যাওয়া ফার্মা ফেস্টের নানা দিক তুলে ধরছিলেন অনুষ্ঠান সমন্বয়ক জান্নাতুল নাসরীন, ‘এত বড় আয়োজনের সাজসজ্জার দেখাশোনা আমি করব, কোনো দিন ভাবিনি। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সবাই খুব প্রশংসা করেছে...’ নাসরীনের কথার ফাঁকে একে একে যোগ দিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল ইসলাম, সাইয়ারা-ই-নাওয়ার, প্রচার সম্পাদক তাহিয়া তাজিন খান, শ্রিয়া দেবনাথ। ক্লাবের দুই অভিভাবক, সহকারী অধ্যাপক এ এইচ এম নাজমুল হাসান ও প্রভাষক সুমাইয়া হকও বসলেন আড্ডায়। যোগ দিলেন অন্য সদস্যরাও।

কথায় কথায় জানা গেল, ৫ ফেব্রুয়ারি হয়ে গেল তৃতীয় ফার্মা ফেস্ট। এর আগের দুবারের আয়োজনকে ছাড়িয়ে এবারের ফেস্টে স্টল দেয় ১১টি নামী ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি। শিক্ষার্থীরা সিভি জমা দিয়েছেন সদলবলে। আর অলিম্পিয়াডে অংশ নেন ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৫ জন শিক্ষার্থী। ৩ ধাপ পেরিয়ে ৪টি দল চূড়ান্ত পর্বে কুইজে অংশ নেয়। র‌্যাপিড ফায়ারে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এবং এশিয়া প্যাসিফিকের ৩টি দল জায়গা করে নেয়। ‘এটি মূলত তাৎক্ষণিক প্রশ্নোত্তর পর্ব। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সামনেই এর ফল নির্ধারণ করা হয়’, বুঝিয়ে বললেন ক্লাবের কনভেনর, সহকারী অধ্যাপক এ এইচ এম নাজমুল হাসান।

দিনব্যাপী এ আয়োজনে ছিল ‘রিসার্চ পোস্টার প্রেজেন্টেশন’ পর্ব। যেখানে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণা উপস্থাপন করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চূড়ান্ত পর্বে ওঠে এশিয়া প্যাসিফিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। ফার্মা সায়েন্স ক্লাবের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে উপস্থিত ছিলেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সি এম শফি সামি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ গুণীজনেরা। আর এসব আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন ফার্মা ক্লাবের সদস্যরাই।

দিনমান খেটে এই ফেস্ট আয়োজনে সার্থকতা কী? প্রশ্নের উত্তরে প্রচার সম্পাদক তাহিয়া তাজিন খান বলা শুরু করলেন, ‘আমরা শুধু একাডেমিক স্টাডির মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ রাখছি না। এক ছাদের নিচে এত ফিউচার ফার্মাসিস্টদের পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। তাঁদের চিন্তা, গবেষণা সম্পর্কে আমরা জানলাম। বড় কোম্পানিগুলোতে সিভি দেওয়ার সুযোগ পেলাম। আর এত বড় ইভেন্টের আয়োজক হওয়াটা বিরাট পাওয়া।’

শুধু এ আয়োজনই নয়। বছরজুড়ে অনেক আয়োজনই চলে ফার্মা সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে। বড় এ আয়োজন সফল করতে আগেই চলে মহড়া। আন্তবিভাগীয় সায়েন্স ফেস্টে নিজেদের ঝালাই করে নেন সদস্যরা। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতার খবর পেলেই অংশ নেন আত্মপ্রত্যয়ী সদস্যরা। এ আলোচনার ফাঁকেই দ্রুত আন্তবিভাগীয় ফেস্ট আয়োজনের তাড়া এল এক সদস্যের কাছ থেকে।

আড্ডার এ পর্যায়ে নাশতা এল টেবিলে। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে জানতে চাইলাম, সায়েন্স ক্লাবের সদস্যরা ঘুরতে যায় না? ঠিক যেন এ মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলেন সাইয়ারা-ই-নাওয়ার। ‘অবশ্যই। আমরা শেষবার ঘুরতে গিয়েছিলাম সিলেটে। পাঁচ দিনের ওই ভ্রমণে লালাখাল, জাফলং, বিছনাকান্দিসহ পুরো সিলেট চষে বেড়িয়েছি আমরা। সিলেটে বসে এক রাতের আড্ডায় অনুভব করলাম, আমরা একে অপরের কত কাছের বন্ধু।’ উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ল সাইয়ারার চোখে–মুখে।

আড্ডায় নিজেদের স্বপ্নের কথা বলতে ভুললেন না সাকিবুল ইসলাম। আন্তবিভাগ থেকে শুরু হয়ে যে ফেস্ট এখন দেশব্যাপী হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিকভাবে করতে চায় ক্লাবটি। সে স্বপ্নের কথাই বললেন সাকিব। জানালেন, ফার্মাসিতে পড়াশোনা একটু কঠিন। কিন্তু সব কঠিনেরে ভালোবেসে স্বপ্ন পূরণ করতে চান তাঁরা।

এই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সবচেয়ে বড় পাওয়া কী? জানতে চাইলাম শ্রিয়া দেবনাথের কাছে। ‘আমি আগে খুবই অন্তর্মুখি ছিলাম। ক্লাবে যুক্ত হয়ে নিজের এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছি। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণ তৈরি হচ্ছে।’

বিদায় নিয়ে নিচতলার ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আসতেই সিঁড়িতে বসে পড়লেন সাকিবুলরা। সমস্বরে খালি গলায় গাইতে শুরু করলেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে। একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো রে...।’ বোঝা গেল, ক্যাম্পাসটা তাঁদের খুব আপন।