ফোনকেও রেখেছি কোয়ারেন্টিনে

আলাভী নূর-ই জান্নাত
আলাভী নূর-ই জান্নাত

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সবাই যখন ঘরে থাকার চেষ্টা করছে, কী করে কাটছে আমাদের সময়? আচ্ছা, আমাদের কথা বাদই দিলাম, আমার মতো আলসে যারা, তাদের সিংহভাগের সময় কাটছে কোথায়? ওই যে, হাতের মুঠোয় ধরে রাখা একটা বাক্স আছে না (এটাকে আবার বোকা বাক্স বলা যাচ্ছে না। বরং চালাক বাক্সই বলি, যা আমাদের বোকা বানাচ্ছে!)? তো মুঠোফোন নামের এই বাক্স আমাদের জীবনটাকে এত বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে যে আমরা আমাদের সত্যিকার সত্তাটাকেই যেন হারাতে বসেছি। ঠিক এই তাগিদ থেকেই আমি একটা নতুন চ্যালেঞ্জ হাতে নিলাম, চ্যালেঞ্জই বটে! ফোন কোয়ারেন্টিন! অন্তত ১০০ ঘণ্টার জন্য মুঠোফোন বা ল্যাপটপ, কিছুই ছুঁয়ে দেখব না, এটাই ছিল প্রাথমিক পরিকল্পনা।

তো আমি কী করলাম এই ১০০ ঘণ্টায়? সময়টা কিন্তু কম নয়, চার দিনের কিছু বেশি। শুধু ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেব ভাবলেও দিন শেষে ঘুম ছাড়াও আমি কিছু ভালো কাজ করেছি এই ১০০ ঘণ্টায়।

যেমন? প্রথমে শুরু করলাম আঁকাআঁকি। মূলত আমি মান্ডালা (ছবি আঁকার একটা ধরন) আঁকি। সেটাই করলাম। কিন্তু কলমের কালি ফুরিয়ে যাওয়ায় সেটা বেশি দূর এগোনো গেল না। তারপর ভাবলাম বই পড়ে দেখি। বইমেলায় কেনা বইগুলো ছাড়াও আগের কিছু না-পড়া বই ছিল। সেগুলো শেষ করার প্রকল্প হাতে নিলাম। তিনটা বই শেষ করেছি, আরেকটা এখন পড়ছি।

সময় কাটাতে গিয়ে একটা মজার ঘটনাও ঘটেছে। ভর্তি পরীক্ষার পর থেকেই খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাসটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অনেক দিনই পত্রিকা খুলেও দেখিনি, এমনও হয়েছে। সব বোকা বাক্স আর নীল বাক্সের (ফেসবুক) নেশা আর কী! তো আমি করলাম কী, পুরোনো খবরের কাগজের স্তূপ ঘেঁটে পুরোনো খবরগুলোই পড়তে শুরু করলাম। এই অদ্ভুত কাজটা আগেও করেছি ছোটবেলায়। স্কুলে পরীক্ষা চলাকালে কাগজ পড়া হতো না। তাই পরীক্ষা শেষে এক বসায় সব পড়ে ফেলতাম। তো এভাবে কাগজ ঘাঁটতে গিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারির দু-এক দিন আগের এক প্রতিবেদনে দেখলাম, শহীদ মিনারের আলপনা আঁকা চারুকলার শিক্ষার্থীদের একটা ছবি। এর মধ্যেই দেখি আমার এক বন্ধুও সেখানে। এই জিনিস আমি দুই মাস পরে দেখছি, ভাবতেই কেমন মজা লাগল।

নিজের ঘরের একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা ছিল, সেটাকেও কিছুটা জাতে তোলা গেল। আর হ্যাঁ, অনেক দিন ধরেই নানা কাজে-অকাজে ব্যস্ত থাকায় মামণির সঙ্গে আগের মতো গল্প করা হতো না। এই কদিনে সেটা সুদে-আসলে উশুল করে নিয়েছি।

ফোনকে কোয়ারেন্টিনে রেখে আমি আসলে কী পেলাম? উত্তরটা সহজ। আমি নিজেকে খুঁজে পেলাম অনেক দিন পর! নিজের শখ, ইচ্ছাগুলোকে আরেকবার ঝালিয়ে নিলাম, নিজের এলোমেলো যান্ত্রিক জীবনটাকে কিছুটা স্বাভাবিকতার আদলে আনার চেষ্টা করলাম। অবরুদ্ধ জীবনের এই ধূসর সময়ে এই একটুখানি স্বস্তিইবা কম কিসে!

আলাভী নূর-ই জান্নাত : স্থাপত্য বিভাগ, প্রথম বর্ষ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়