সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: সেশনজট ঘিরে ধরেছে ৮ লাখ শিক্ষার্থীকে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি
>অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আগ্রহ কম। অন্যদেরও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই।

গত প্রায় এক দশকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট অনেকাংশেই কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এই ক্ষতিকর শব্দটি ভুলতে বসেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ ছুটির জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছয় মাস থেকে প্রায় এক বছর পর্যন্ত সেশনজট পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান বুরো (ব্যানবেইস) ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, স্বায়ত্তশাসিত ৪টিসহ ৪৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মোট শিক্ষার্থী প্রায় সোয়া আট লাখ। তাঁদের সবার শিক্ষাজীবনে একযোগে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা। কেউবা স্নাতক হওয়ার অপেক্ষায় আছেন, কেউ কেউ আরেকটু সময় পেলেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেয়ে যেতেন। কিন্তু এখন শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনের সব পরিকল্পনা অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে যাবে—এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই বলেছেন, করোনাভাইরাসের বর্তমান সংক্রমণ অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে। গত ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হয়েছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় মাস এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে। তবে করোনার সংক্রমণ বিবেচনায় এই ছুটি বাড়তে বা কমতেও পারে।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন ভর্তি, ক্লাস নেওয়া, পাঠ্যক্রম শেষ করা, পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশে সামগ্রিক জটের মধ্যে পড়ে গেছে। দেশে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় চারটি—ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর। আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৪২টি। এর মধ্যে আছে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন, এক-দুই মাস বন্ধ থাকলে পরে হয়তো সাপ্তাহিক ছুটি কমিয়ে ও অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু এখন এসব করেও সেশনজট ঠেকানো যাবে না।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, করোনাকালের এ পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষার ক্ষতি কীভাবে কমানো যায়, সে জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিকল্প ভাবনা আছে। করোনাকাল শেষ হলেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তা জানতে পারবেন। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে যার মতো অনলাইন ক্লাস শুরুর চেষ্টা করেছে। এটা চলতে থাকবে।

আলোচনায় অনলাইন শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই বাড়ি চলে যাওয়ায় এবং আবাসিক হল বন্ধ থাকায় আলোচনায় এখন অনলাইন ক্লাস। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব রয়েছে। বিশেষ করে স্বায়ত্তশাসিত ও ঐতিহ্যবাহী ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ব
ড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ক্ষেত্রে অন্যদের পথ দেখাতে পারেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. ইসরাফিল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা গত মে মাসে শুরু হওয়ার কথা ছিল, চলতি জুনে তা শেষ হতো। কিন্তু করোনার কারণে চতুর্থ বর্ষের ক্লাসগুলোই শেষ হয়নি। এখন ক্লাস কবে শুরু হবে, আবার ক্লাস শেষে পরীক্ষাই-বা কবে হবে, তা অনিশ্চিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ হওয়ায় এখন গ্রামের বাড়িতে আছেন তিনি।

ইসরাফিলের মতো প্রায় সব শিক্ষার্থী এখন বাড়িতে। ইউজিসি চাচ্ছিল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস শুরু হোক। কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত চারটিসহ সাতটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের প্রায় সবাই বলছেন, অসম্ভব না হলেও কাজটি বেশ কঠিন। তাঁদের মতে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সমস্যা, ইন্টারনেট সংযোগ না থাকা বা ইন্টারনেটের ধীরগতি, ডিজিটাল ডিভাইসের অভাবসহ নানা কারণে অনলাইন ক্লাস সেভাবে চালু হয়নি।

জরিপে নানা সমস্যার চিত্র

অনলাইন ক্লাস নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি দুটি জরিপ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমান বাস্তবতায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া কঠিন। তারপরও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও প্রলম্বিত হলে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়েও সেশনজট দূর করা যাবে না। এ জন্যই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ইউজিসি গত মে মাসে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইন শিক্ষার ভূমিকা ও কার্যকারিতার বিষয়ে একটি জরিপ চালায়। এতে অংশ নেন প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থী এবং ৭ হাজারের বেশি শিক্ষক। ওই জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮৭ শতাংশের স্মার্টফোন আছে। কিন্তু ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট খরচ, দুর্বল নেটওয়ার্কসহ বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা বলেছেন শিক্ষার্থীরা।

বায়োটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গত ৯ থেকে ১১ মে একটি সমীক্ষা চালায়, যার মাধ্যমে বেরিয়ে আসে শিক্ষার্থীদের মাত্র ২৩ শতাংশ অনলাইনে ক্লাস করতে চান, বাকি ৭৭ শতাংশ আগ্রহী নন। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ২ হাজার ৩৮ জন শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৫৫ শতাংশের ক্লাস করার উপযোগী ডিভাইস, অর্থাৎ ল্যাপটপ বা কম্পিউটার রয়েছে, বাকিদের নেই।

সমীক্ষা অনুযায়ী, ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্লাস করার উপযোগী ইন্টারনেট সংযোগ নেই। আর ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, অনলাইনে ক্লাসরুম সত্যিকার ক্লাসরুমের মতো কার্যকর নয়।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইন ক্লাস শ্রেণিকক্ষের বিকল্প নয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে এটা একটা বিকল্প চেষ্টা। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বেশ কম, তাঁর নিজের ক্লাসে হাজির হন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী।

বিভাগভিত্তিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এ নিয়ে আপত্তি আছে। যেমন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান নাসরীন সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা অনলাইনের ক্লাসের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়েছিলেন। তাতে দেখা যায়, স্নাতক পর্যায়ে ৫০ শতাংশের কম শিক্ষার্থীর এই সুযোগ আছে। আর স্নাতকোত্তরে মাত্র ২০ শতাংশের মতো এই সুযোগ আছে। এমন বাস্তবতায় শিক্ষকেরা মনে করেন, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে অনলাইনে ক্লাস কার্যকর হবে না।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানবিক ও বাণিজ্যের বেশ কিছু বিষয়ে, বিশেষ করে তত্ত্বীয় বিষয়ে অনলাইনে পড়ানো তুলনামূলক সহজ। কিন্তু ব্যবহারিকনির্ভর বিজ্ঞানের বিষয়গুলো অনলাইনে পড়ানো প্রায় অসম্ভব।

আর্থিক সক্ষমতা বড় বিষয়

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধনী-গরিব শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। তাঁদের অনেকেরই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ ও সামর্থ্য নেই।

সিরাজগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্‌দীন হলের এক ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এখন তাঁর অভিভাবকের পক্ষে ৫০ টাকা খরচ করে ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে দেওয়ার সংগতি নেই। বাবার কাজ নেই। নিজে টিউশনি করে চলতেন, তা-ও বন্ধ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেছেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা অনলাইনে ক্লাস নিতে চাইলেও শিক্ষার্থীদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের একটা অংশ অসচ্ছল পরিবার থেকে এসেছেন। এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন।

স্বায়ত্তশাসিত চার বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের বড় ও স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস চালু করতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সীমিত সামর্থ্য অনুযায়ী অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হবে। এর উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের এই সময়ে সক্রিয় রাখা এবং খোলার পরপর যাতে কমসংখ্যক ক্লাস নিয়েই পরীক্ষা শুরু করা যায়। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার থাকা ভালো, অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে ডিগ্রি দেওয়া সম্ভব নয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশির ভাগ বিভাগের ক্লাস শেষ, এখন পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে তাঁদের ক্লাস নেওয়ার দরকার নেই।

ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তিগত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হওয়া গেলে এ বিষয়ে পরে আলোচনা করে অনলাইনে ক্লাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান। নানা রকম সমস্যার কারণে এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

তবে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের আগেই অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তাঁদের বর্তমান সেমিস্টারের বেশির ভাগ ক্লাস শেষ হয়েছে। তারপরও সিদ্ধান্ত হয়েছে বাকি ক্লাসের বিষয়গুলো ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে, সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা নেবেন।

এ ছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বিচ্ছিন্নভাবে অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে।

ইউজিসির চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেছেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সামর্থ্য অনুযায়ী অনলাইনে ক্লাস নিতে বলা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কারও ওপর তা চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।

সেমিস্টার নিয়ে সংকট

বেশ কিছুসংখ্যক ছাত্র-শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেমিস্টার পদ্ধতি থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিস্থিতি তুলনামূলক জটিল। সেমিস্টার পদ্ধতিতে ছয় মাসে একটি সেমিস্টার। আটটি সেমিস্টারে চার বছরের স্নাতক এবং দুই সেমিস্টারে এক বছরের স্নাতকোত্তর শেষ করতে হয়। আর বর্ষ পদ্ধতিতে এক বছরের মধ্যে একটি বর্ষ শেষ করতে হয়।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী—এই চার বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৩টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু আছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত বিভাগে এটি চালু আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশে তারা পিছিয়ে পড়ছে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আট সপ্তাহ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ সপ্তাহের মধ্যে ফল প্রকাশ করার কথা। বাস্তবে ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহ সময় লাগছে। ফলে এক সেমিস্টারের ফল প্রকাশ হওয়ার আগেই আরেক সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হচ্ছে। করোনার ধাক্কায় এই সমস্যা আরও বেড়েছে।

একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া যায়, সেমিস্টার পদ্ধতিতে সময় মেনে চলার কথা। কিন্তু অনেক সময় তা না হওয়ায় প্রয়োজনে পাঠ্যক্রম কাটছাঁট করা হয়।

অবশ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে সনাতন পদ্ধতিতে বর্ষভিত্তিক স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পড়াশোনা হয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, কলেজগুলোকে বলা হয়েছে সাধ্য অনুযায়ী অনলাইনে ক্লাস নিতে। কিন্তু এটা কতটা করা সম্ভব, তা বলা কঠিন। শিক্ষার্থীদের বলব, তাঁরা যেন এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে পড়াশোনা করেন।

পেছাবে ভর্তি

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গত ১ এপ্রিল শুরু হওয়ার কথা ছিল। এখন এই পরীক্ষা কবে শুরু হবে, তা অনিশ্চিত। শিক্ষা বোর্ড বলছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অন্তত ১৫ দিন পর পরীক্ষা শুরু হবে। ফলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করতে এই বছর লেগে যেতে পারে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শেষ করতে আগামী বছরের কয়েক মাস লেগে যাবে। ফলে সেশন পেছাবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমত এটি একটি যুদ্ধের সময়। এই সময়ের ক্ষতি মেনে নিতে হবে। এখন শিক্ষার্থীদের উচিত যতটুকু সম্ভব, নিজের মতো করে পড়াশোনার চর্চাটা ধরে রাখা।

এই শিক্ষাবিদের মতে, এখন শিক্ষার্থীদের কাছে মুঠোফোন আছে, প্রয়োজনে শিক্ষকদের সহায়তা নিতে পারেন। তবে সবার আগে এই সময়ে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করে অন্যকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।