বদলে গেছে লেখাপড়ার ধরন

অনলাইনে ক্লাস করছে সোনিয়া। সে একটি বাসায় কাজের সহযোগী।  ছবি: সংগৃহীত
অনলাইনে ক্লাস করছে সোনিয়া। সে একটি বাসায় কাজের সহযোগী। ছবি: সংগৃহীত

গত ১৮ মার্চ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন হল বা মেস ছেড়ে দলে দলে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছিলেন, তখনো তাঁরা জানতেন না, দীর্ঘ চার মাসেও ক্যাম্পাসে ফেরা হবে না। করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ‘কটা দিন ছুটি পাওয়া গেল’ ভেবে যে শিক্ষার্থীরা স্বস্তি পেয়েছিল, তারাও এখন শ্রেণিকক্ষে ফিরতে অধীর হয়ে আছে।

গত চার মাসে বদলে গেছে পড়ালেখা–সংক্রান্ত অনেক চিরায়ত ধারণা। ঘুরেফিরে বারবার আসছে ‘অনলাইন শিক্ষা’ প্রসঙ্গ। কেউ কেউ বলছেন, যে পরিবর্তন আরও ৫-১০ বছর পর আসা অবধারিত ছিল, সেটাই এগিয়ে এসেছে। কিন্তু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকেরা কি এগোতে পারছেন?

হয় ডুবে যাও, নয় সাঁতার কাটো

বই-খাতা আর স্মার্টফোন নিয়ে পড়তে বসেছে সোনিয়া। ফোনে ক্লাস চলছে, সোনিয়া দেখছে মন দিয়ে। ২ জুলাই এই সুন্দর মুহূর্তের ছবিটা ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে দিয়েছিলেন তাসনুভা সারওয়াত। রাতারাতি সেটা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

তাসনুভার লেখা থেকে জানা গেল, সোনিয়া তাঁদের ঘরের কাজকর্মের সহযোগী। পড়ালেখায় মেয়েটির আগ্রহ দেখে তাসনুভার মা ইশিতা সারওয়াত তাকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন ঢাকার মিরপুরের একটা স্কুলে। ঘরের কাজকর্ম সেরে সোনিয়া এখন নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস করতে বসে।

প্রথমে ই–মেইল, পরে ফোনে এই প্রতিবেদকের কথা হয় তাসনুভার সঙ্গে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রভাষক। তাসনুভা বললেন, ‘আমাদের বাড়িতে যখন যে কাজ করেছে, এমনকি আমাদের দারোয়ানের ছেলেমেয়েদেরও স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন মা। ছোটবেলা থেকে এমনটা দেখে এসেছি। এবার মানুষের সাড়া দেখে বুঝলাম, সোনিয়াদের পড়ালেখা করাটা এখনো অনেকের কাছে বিস্ময়কর। আমি অবশ্য এভাবে ভাবিনি। ছবিটা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল আমার ছাত্রছাত্রীদের অনুপ্রাণিত করা।’

তাসনুভার মতো যাঁরা শিক্ষকতা পেশায় আছেন, তাঁদের সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। একে তো এই কঠিন সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে চাঙা রাখতে হচ্ছে। তার ওপর ক্লাসরুমভর্তি আগ্রহী চোখের সামনে কথা বলেন যাঁরা, হঠাৎ করেই তাঁদের মোবাইল বা ল্যাপটপের ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে পড়ানোর অভ্যাস করতে হচ্ছে। প্রযুক্তির খুঁটিনাটিগুলো আরও ভালোভাবে জানতে হচ্ছে।

>শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ৪ মাস
‘কটা দিন ছুটি পাওয়া গেল’ ভেবে যারা স্বস্তি পেয়েছিল, এখন তারাই শ্রেণিকক্ষে ফিরতে উদ্গ্রীব

‘ব্যাপারটা অনেকটা পানিতে ফেলে দিয়ে সাঁতার শেখানোর মতো। হয় ডুবে যাও, নয়তো সাঁতার কাটো।’ গত ১৯ মে প্রথম আলো আয়োজিত এক ফেসবুক লাইভে এসে বর্তমান সময়ের অনলাইন শিক্ষা প্রসঙ্গে কথাটা যিনি বলেছেন, তাঁর নাম সালমান খান (স্যাল খান)। তিনি খান একাডেমির (khanacademy.org) প্রতিষ্ঠাতা। অনলাইনে পড়ালেখার ধারণাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মার্কিন শিক্ষকের বিশেষ ভূমিকা আছে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যিনি অনলাইন শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন, তিনিও এক বাক্যে স্বীকার করেন, অনলাইন শিক্ষা কখনোই মুখোমুখি বসে শিক্ষা গ্রহণের বিকল্প হবে না। কিন্তু শিক্ষাকে স্থান ও কালের সীমাবদ্ধতায় বেঁধে রাখা যাবে না আর। সে জন্য যে খুব জটিল কোনো প্রযুক্তি দরকার বা খুব বেশি উন্নত যন্ত্রপাতি দরকার, এমনটাও মানতে নারাজ স্যাল খান। পাঠদানের ধরন পরিবর্তনকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। নতুন স্বাভাবিকতায় নতুন করে ভাবতে বলছেন। সালমান বলেন, ‘আমি এমন এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, যেখানে আপনি স্কুল বা হাইস্কুলে গিয়েছেন কি না, সেটি মুখ্য নয়। যেখানে প্রয়োজনীয় জ্ঞান আপনার আছে কি না, তা প্রমাণ করতে পারলেই আপনি চাকরি পাবেন কিংবা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন।’

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সালমান খানের স্বপ্নটাকে দিবাস্বপ্ন মনে হতে পারে। এ দেশে এখনো চাকরি বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে ডিগ্রিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। করোনা-পরবর্তী সময়ে আমাদের এই ধ্যান ধারণা হঠাৎ বদলে যাবে, এখনই এমনটা আশা করা যায় না। তবে চাকরিদাতাদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনেকে এখন দক্ষতার গুরুত্বটা বুঝতে পারছেন। ক্লাস-হোমওয়ার্ক-পরীক্ষার চাপে যাঁরা দম ফেলার ফুরসত পেতেন না, এখন অপ্রত্যাশিত অবসর পেয়ে অনেকে নিজের আগ্রহে অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স করতে শুরু করেছেন। 

ভিড় বাড়ছে অনলাইনে

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে উম্মে সাঈদার বাড়ি। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞানে পড়ছেন। ফোনের ও প্রান্ত থেকে বলছিলেন, ‘জানেন, একটু ঝড় হলেই আমাদের এদিকে ২-৩ দিন কারেন্ট থাকে না।’ সাঈদার বাবা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল লেখক হিসেবে কাজ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে এই পরিবার। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও সাঈদা অনলাইন শিক্ষার ওয়েবসাইট কোর্সেরায় (coursera.org) গর্ভকালীন পুষ্টি বিষয়ে একটি কোর্স করেছেন। শুনে কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম। কোর্সেরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যা জানলাম, তা আরও অবাক করা।

কোর্সেরা এমন একটি অনলাইন মাধ্যম, যার মাধ্যমে ‍যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড, যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজসহ বহু নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স করার সুযোগ আছে। অনেক কোর্স করা যায় বিনা মূল্যে। আবার কোনো কোনো কোর্সে সনদপত্র পেতে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি দিতে হয়। 

কোর্সেরার ভারত ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাঘব গুপ্তা ই–মেইলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত কোর্সেরায় নিবন্ধিত মোট বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে ১ লাখ ৭১ হাজারই নিবন্ধন করেছেন এ বছর এপ্রিল-মে-জুন, এই তিন মাসে। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিনা মূল্যে তাদের ওয়েবসাইট ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছিল কোর্সেরা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। রাঘব বলেন, বাংলাদেশের এক শর বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩২২টি প্রোগ্রাম উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

কোর্সেরার মতো অনলাইন শিক্ষার আরেকটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হলো এডেক্স (edx.org)। এডেক্সের যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক অ্যালিস র‌্যানডাল এই প্রতিবেদকের এক ই–মেইলের জবাবে জানালেন, বর্তমানে ৮৬ হাজার নিবন্ধিত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এডেক্স ব্যবহার করছেন। অ্যালিস জানিয়েছেন, ২০১৯ সালজুড়ে যতজন এডেক্সে নিবন্ধন করেছিলেন, এ বছর শুধু এপ্রিল মাসেই নিবন্ধনের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি।

কোর্সেরা, এডেক্সের মতো ওয়েবসাইটগুলো মূলত উচ্চশিক্ষার জন্য। স্কুল-কলেজ পর্যায়ের ছেলেমেয়েদেরও অনলাইনে উন্মুক্ত মাধ্যমে পড়ালেখার অভ্যস্ততা বাড়ছে। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায় ধরে ধরে বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) তৈরি করেছে বাংলাদেশের রবি টেন মিনিটস স্কুল। ইউটিউবে ‘টেন মিনিটস স্কুল ক্লাস ওয়ান টু টুয়েলভ’ নামের চ্যানেলটিতে শ্রেণি ও বিষয়ভেদে সব ভিডিও সাজানো আছে।

বদলেছে টিউশনের ধরন, ঢাকার অলিগলিতে চোখে পড়ে এমন বিজ্ঞাপন।  প্রথম আলো
বদলেছে টিউশনের ধরন, ঢাকার অলিগলিতে চোখে পড়ে এমন বিজ্ঞাপন। প্রথম আলো

সংযোগের সংকটে

সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে দুটি সমস্যার কথা কম-বেশি প্রত্যেকেই বললেন। প্রথমত ধীরগতির দুর্বল ইন্টারনেট, দ্বিতীয়ত ইন্টারনেটের খরচ। 

ঢাকার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র রাশেদ খানের সঙ্গে যখন মুঠোফোনে কথা হলো, তিনি তখন চুয়াডাঙ্গার কুরুলগাছি গ্রামের এক নদীর পাড়ে, মাচার ওপর বসে আছেন। বললেন, ‘বাইরে আছি বলে ফোনে পেলেন। ঘরে থাকলে পেতেন না। অনলাইনে যখন ক্লাস হয়, তখনো আমি মাঠে বা বাড়ির ছাদে চলে যাই।’ 

রাশেদ জানালেন, ৪৪৮ টাকা দিয়ে তিনি এয়ারটেলের একটা প্যাকেজ নিয়েছেন। ২৫ গিগাবাইট (জিবি) ইন্টারনেট, সঙ্গে ৮০০ মিনিট টকটাইম। তাঁর হিসাব অনুযায়ী, জুমে এক ঘণ্টার ক্লাস করলে এক গিগাবাইটের একটু কম খরচ হয়। সপ্তাহে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মোট সাতটি ক্লাস। সে হিসাবে ২৫ গিগাবাইটে এক মাস চলে যাওয়ার কথা। 

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) শিক্ষার্থী শাফি মজুমদার জানালেন, ২০৯ টাকায় তিনি ১৫ দিন মেয়াদি রবির ১০ জিবি ইন্টারনেটের প্যাকেজ কেনেন। কিন্তু সেটা ৭-৮ দিনের বেশি যায় না। কারণ, প্রতিদিন ৩টা ক্লাস থাকে।

ময়মনসিংহের শিক্ষার্থী সৌরভ খানের সমস্যা আরও দুরূহ। ৬০ টাকা দিয়ে তিনি ৩ দিন মেয়াদি ২ জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনেছেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্লাসে সংযুক্ত হতে পারলেও কথা শুনতে পান না। এ ছাড়া বারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি কয়েকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করছে। কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া সালসাবিল এখন রংপুরে। তিনি জানালেন, ‘কাশ্মীর বা নেপাল থেকেও আমাদের বন্ধুরা ক্লাস করে। কিন্তু মেডিকেলের পড়া তো আসলে অনলাইনে সেভাবে সম্ভব না।’

জুম, গুগল মিট, গুগল ক্লাসরুম, মেসেঞ্জার, ফেসবুক গ্রুপ, বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় মূলত এসব ওয়েবসাইট বা সফটওয়্যার ব্যবহার করছে অনলাইনে ক্লাস চালানোর জন্য। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব সফটওয়্যার তৈরি করে নিয়েছে। যেমন ঢাকার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ‘বাক্স’ নামে একটি নিজস্ব মাধ্যম ব্যবহার করছে। ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিও ব্যবহার করছে ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং সেন্টার’ নামে নিজস্ব ডিজিটাল মাধ্যম। এ ছাড়া মুডল (moodle.org) নামে একটি ওয়েবসাইটও ব্যবহার করে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

স্কুল-কলেজের অনলাইন ক্লাস

‘ধরুন, আমারই এক ছাত্রী। তারা দুই ভাই-বোন। দুজনেরই সকালে একই সময়ে অনলাইন ক্লাস। ওদের বাসায় একটাই স্মার্টফোন। সেই ফোনটি নিয়ে বাবা চলে যান অফিসে। এই সময়ে নতুন ফোন কেনা সম্ভব নয়, সেটা তো বুঝি। এখন তাঁকে আমি কীভাবে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে বলব?’ সৈয়দ নাজমুস সাকিবের প্রশ্নটা ধাঁধার মতো শোনাল। তিনি ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের ইংরেজির শিক্ষক। ছাত্রছাত্রীদের একেক জনের একেক রকম সমস্যা তো আছেই। শিক্ষকেরাও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। শুক্রবার ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সৈয়দ নাজমুস সাকিব অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। নিজের ল্যাপটপ নেই, নির্ভর করতে হচ্ছে স্মার্টফোনের ওপর। 

ঢাকার সানবিমস, সানিডেলের মতো অধিকাংশ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্লে গ্রুপ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নটর ডেম কলেজ রুটিন করে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্লাস হচ্ছে ‘নূন বাতায়ন: ভিএনএসসি’ নামে একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে। আবার নারায়ণগঞ্জের মর্গ্যান বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসমিনা শাহরিন সোজাসাপ্টা বলে দিচ্ছে, ‘অনলাইনে লাইভ ক্লাস করলে টিচার কী বলেন, কিচ্ছু বুঝি না। কথা ঠিকমতো শোনা যায় না।’ 

কোচিং বা প্রাইভেট টিউশনের ধরনও যে বদলে গেছে, সেটি ঢাকার অলিগলিতে হাঁটলে টের পাওয়া যায়। ‘অনলাইনে পড়ানো হয়’, ‘ভিডিও কলে পড়াই’, দেয়াল কিংবা ল্যাম্পপোস্টে সাঁটানো এমন বেশ কিছু পোস্টার, নোটিশ চোখে পড়ল সম্প্রতি।

দায়িত্ব কার, সমাধান কী
অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ দীর্ঘদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে যোগ দিয়েছেন ‘ডিসটিংগুইশড প্রফেসর’ হিসেবে। মুঠোফোনে তিনি বলছিলেন, ‘ধরে নিই ৭০ শতাংশ ছেলেমেয়ে অনলাইনে ক্লাস করতে পারছে, আর ৩০ শতাংশ পারছে না। নির্মম হলেও বাস্তবতা হলো, ৩০ শতাংশের জন্য আমরা ৭০ শতাংশ ছেলেমেয়েকে আটকে রাখতে পারব না। বৈষম্য সব ক্ষেত্রে আছে। আমরা কি সবাইকে এক রকম পোশাক দিতে পারছি? খাবার কিংবা স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারছি? তবে হ্যাঁ, আমাদের বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করতে হবে।’ অধ্যাপক কায়কোবাদ মনে করেন, এই দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর, মোবাইল অপারেটর কোম্পানি—সবার।