খুলনার গর্ব বিএল কলেজ

খুলনা বিএল কলেজের শিক্ষার্থীদের সামনে অপার সম্ভাবনা। ছবি: সাদ্দাম হোসেন
খুলনা বিএল কলেজের শিক্ষার্থীদের সামনে অপার সম্ভাবনা। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

ছায়াসুনিবিড় ক্যাম্পাসে পুকুরপাড়টা যেন একটু বেশিই শান্ত। সেদিন পুকুরের সেই শান্ত পরিবেশ আর চত্বর দখল করে ছোট দলগুলো আড্ডামুখর। ক্লাস শেষ বলে অনেকে আবার ব্যস্ত গ্রুপ স্টাডি নিয়ে।
১ অক্টোবর খুলনার ব্রজলাল কলেজে (বিএল) যখন হাজির হই, তখন দুপুর। এমনই এক আড্ডায় যোগ দিই আমরা। এ দলটির সবাই অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তরপড়ুয়া শিক্ষার্থী। আর কয়েক দিন বাদেই ছাড়তে হবে প্রিয় ক্যাম্পাস। পরিচয়পর্ব শেষে জানতে চাই ক্যাম্পাস ও তাঁদের গল্প। কথা শুরু করেন শুভঙ্কর গাইন, ‘বিএল কলেজ আমাদের দক্ষিণবঙ্গের গর্ব। এখানে পড়তে পেরে আমি নিজেও গর্বিত।’ ক্যাম্পাসে সবাই আন্তরিক। প্রথম দিন থেকেই এ মানুষগুলো তাঁদের আপন করে নিয়েছেন।
সে আন্তরিকতার গন্ধ পাওয়া গেল প্রণব বিশ্বাসের কথাতেও, ‘কয়েকটা বছর এ ক্যাম্পাসে কাটালাম। আর কিছুদিন পরই হয়তো ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবে যেখানেই থাকি, খুলনা শহরে এলে ক্যাম্পাসে একবার ঢুঁ মারব।’ শমিষ্ঠা রায় ও দুর্জয় মণ্ডল মনে করেন, কলেজ থেকে অর্জিত জ্ঞান ভবিষ্যৎ জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে।
তাঁদের সঙ্গে গল্প শেষে যোগ দিই পাশের দলটিতে। সেখানে কথা হয় দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজনের সঙ্গে। ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিপুল আইচ বলেন, এ ক্যাম্পাসে শেখার মতো সবকিছুই আছে। সাজানো-গোছানো এ ক্যাম্পাসটি হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শ্রাবন্তী সাহা বলেন, ‘শুধু পড়াশোনাই নয়, কলেজ থেকে আমাদের সব সময় উদ্বুদ্ধ করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে।’
শ্রাবন্তীর কথার সুর শোনা গেল স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীর ও সাংস্কৃতিক কর্মী আবু তাহেরের মুখে, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে সংস্কৃতিচর্চার ব্যাপারে শিক্ষকেরাও খুব আন্তরিক। ক্যাম্পাসে কোনো অনুষ্ঠান হলে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি খুলনার সাধারণ মানুষও অংশ নেয়।’ তাঁর সঙ্গে যোগ করেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন, নববর্ষ থেকে শুরু করে বিশেষ দিনগুলোতে ক্যাম্পাসে এক অন্য রকম পরিবেশ তৈরি হয়।
কলেজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের গৌরবের কথা শুনে আমরা চোখ ফেলি ইতিহাসের পাতায়। বিএল কলেজের উপাধ্যক্ষ দর্প নারায়ণ সাহা আমাদের শোনান সে ইতিহাস। দক্ষিণবঙ্গের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত খুলনার ব্রজলাল (বিএল) বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটি ১৯০২ সালে খুলনার দৌলতপুরে হিন্দু একাডেমি নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৪ সালে নামকরণ হয় ব্রজলাল হিন্দু একাডেমি। ১৯৬৭ সালের ১ জুলাই এটি সরকারি কলেজে পরিণত হয়। ১৯৯৩ সালে এটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীসংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার। কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও ২১টি বিষয়ে স্নাতক ও ১৬টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। রয়েছে শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য পাঁচটি ছাত্রাবাস ও দুটি ছাত্রীনিবাস। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ধারক এ কলেজে পড়ছেন অনেক গুণীজন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফায়েক উজ্জামান, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকসহ আরও অনেকে। মুনীর চৌধুরীসহ অনেক খ্যাতিমান মানুষ শিক্ষকতা করেছেন এ কলেজে।
উপাধ্যক্ষ দর্প নারায়ণ সাহা জানান, কলেজটিতে একাডেমিক কার্যক্রমের বাইরেও রয়েছে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, ডিবেটিং ক্লাব, আইসিটি ক্লাব, সাইবার সেন্টার, থিয়েটার বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণকেন্দ্রসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।
আমরা উপাধ্যক্ষের কথা শুনে বেরিয়ে পড়ি কক্ষ থেকে। আমরা যখন বেরিয়ে পড়ি, তখনো ক্যাম্পাসের বকুলতলা চত্বর, দর্শন চত্বর, আমতলা, বটতলা ও রাবারতলা চত্বর ঘিরে মেতে আছেন আগামী দিনের কারিগরেরা।