মাছুমার এগিয়ে চলা

মাছুমা আক্তার
মাছুমা আক্তার

স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন যত এগিয়ে আসতে থাকে মাছুমা আক্তারের টেনশন তত বাড়তে থাকে। তাঁর এত দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে তো? তাঁর এত দিনের সাধনা আর পরিশ্রম বৃথা যাবে না তো? মাস কয়েক আগের দিনগুলোর গল্প শোনাচ্ছিলেন রাজধানীর সেন্ট্রাল উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশিওলজি অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মাছুমা আক্তার।
আমরাও অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিলাম এ গল্পের শেষটা জানার জন্য। রূপকথার গল্পের মতো সুখময় হবে তো সমাপ্তিটা? মাছুমা বলে চলেন আর আমরাও জানতে থাকি মাছুমার জীবনের আরও নানা সংগ্রাম ও সাফল্যের অধ্যায়।
মাছুমা জানান, ফলাফল নিয়ে উদ্বেগের অবসান হয় অবশেষে ফল প্রকাশের দিন। নোটিশ বোর্ডে তাকিয়েই খুশিতে ঝিলিক দিয়ে ওঠে তাঁর দুই চোখ। তিনি সর্বোচ্চ সিজিপিএ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। চারের স্কেলে পেয়েছেন ৩.৭৯। তিনি হয়েছেন বিভাগে প্রথম।
এই অর্জন মোটেও সহজ ছিল না। এ জন্য তিনি প্রথমেই কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করেন বিভাগীয় শিক্ষকদের। ‘শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা না পেলে আমার এ পর্যন্ত আসা সম্ভব ছিল না।’ বলছিলেন মাছুমা। ‘তাঁরা প্রতিটি কোর্সেই বিভিন্ন বইয়ের রেফারেন্স দিতেন। সেসব বই থেকে নোট করে পড়তাম।’ যোগ করেন মাছুমা।
এই মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেটের এক প্রত্যন্ত অঞ্চল জামালগঞ্জে। সেখানকার জামালগঞ্জ গার্লস হাইস্কুল থেকে ২০০৮ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। এরপর ২০১০ সালে জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হন ঢাকার সেন্ট্রাল উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে। কয়েক দিন ক্লাস করার পরই বুঝতে পারেন, একজন শিক্ষার্থীর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মাছুমা স্বীকার করেন, তারপরই মূলত ঘুরে যায় তাঁর জীবনচিত্র। কৃতজ্ঞচিত্তে বলেন, ‘এখানকার শিক্ষকেরা সবাই খুব আন্তরিক। কীভাবে পড়াশোনা করে ভালো ফল করতে হয় তাঁরা সেটা হাতেকলমে শিখিয়েছেন। তাঁদের অনুপ্রেরণাতেই আজ আমার এত দূর আসা।’
আর কত দূরে যেতে চান মাছুমা? প্রশ্ন করি আমরা। হেসে উত্তর দেন তিনি, আরও অনেকটা পথ বাকি আছে। আপাতত লক্ষ্য স্নাতকোত্তর। সেখানেও শীর্ষ ফল ধরে রাখতে চান তিনি। তারপর চাকরিবাকরি? কৃচ্ছ্রসাধন?
উমহু! না সূচক মাথা নাড়েন মাছুমা। দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও অধিকার সচেতন করে তোলার জন্য আগামী দিনগুলোতে কাজ করতে চাই।’ শুধু তাই নয়, গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য তাঁর নিজ গ্রামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন এই মেধাবী শিক্ষার্থী।