দেশসেরা বুয়েট

পেছনে দাঁড়ানো ফারাবী মাহমুদ, আর সামনে বাঁ থেকে ফাহমিদ মোর্শেদ, ফাতিমা ফারিন হক ও মীর ইমতিয়াজ মোস্তাফিজ। ছবি: লেখক
পেছনে দাঁড়ানো ফারাবী মাহমুদ, আর সামনে বাঁ থেকে ফাহমিদ মোর্শেদ, ফাতিমা ফারিন হক ও মীর ইমতিয়াজ মোস্তাফিজ। ছবি: লেখক

হাতের ছোট্ট একটা আংটি হয়তো শোনাবে আশার বাণী। এমনকি প্রযুক্তির পরশে গড়া এই বিশেষায়িত আংটি মাতৃমৃত্যুর হার কমাতেও সাহায্য করবে। কারণ, এই আংটি গর্ভাবস্থায় মায়েদের হৃৎস্পন্দন পরিমাপ করে সংরক্ষণ করবে যাবতীয় তথ্য। আর জরুরি অবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য সরবরাহ করবে পরিজনদের কাছে। এই যন্ত্রটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মামি রিং’।
এমনই ভিন্নধর্মী ভাবনা উপস্থাপন করে এবারের মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপে বাংলাদেশ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের দল ‘ফাঙ্কশন’। এ দলের সদস্যরা হলেন এস এম ফারাবী মাহমুদ, ফাহমিদ মোর্শেদ, ফাতিমা ফারিন হক ও মীর ইমতিয়াজ মোস্তাফিজ। তাঁরা সবাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
বুয়েটের ক্যাম্পাসে কথা হলো বিজয়ী দলের চার তরুণের সঙ্গে। আইডিয়াটা যাঁর মাথায় ঘুরঘুর করেছিল, তিনি ফাতিমা ফারিন। কথার শুরুতে আইডিয়া নির্বাচনের গল্প শোনালেন তিনি, ‘প্রতিযোগিতার নিয়মে বলা হয়েছিল, বিশ্বের সর্বজনীন একটি সমস্যার অভিনব সমাধান দিতে হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। প্রথমেই আমার মাথায় মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কমানো ও স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি আসে। দলের সবাই লুফে নিয়েছে বিষয়টি।’ তারপর মাতৃমৃত্যুর পরিসংখ্যান ঘেঁটে সিদ্ধান্ত নিলেন এই সমস্যাকেই একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবেন।
প্রতিযোগিতা সম্পর্কে একটু বলে নেওয়া যাক। প্রতিবছর মাইক্রোসফট সারা বিশ্বে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতা হয়। মূলত তিনটি বিভাগে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতার একটি ‘ওয়ার্ল্ড সিটিজেনশিপ’। দুই পর্বের এই প্রতিযোগিতার প্রথম ধাপে শিক্ষার্থীদের কাছে আইডিয়া আহ্বান করা হয়। সেখান থেকে সেরা পাঁচ দলকে ডাকা হয় চূড়ান্ত পর্বে।
গত ২৪ এপ্রিল মাইক্রোসফটের বাংলাদেশ কার্যালয়ে উপস্থাপন পর্বে অংশ নিয়ে বিজয়ের হাসি হাসল টিম ফাঙ্কশন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশ পর্বে। এরপর দলটি সুযোগ পাবে অনলাইন সেমিফাইনালে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার।
কীভাবে কাজ করে তাঁদের এই মমি রিং। খোলাসা করলেন ফারাবী মাহমুদ, ‘গর্ভাবস্থায় ধরুন মায়ের হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে হঠাৎ বেড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই ইমার্জেন্সি ট্রিগার এবং জিএসএম প্রযুক্তির সহায়তায় কেন্দ্রীয় সার্ভারে চলে যাবে সেই তথ্য। কেন্দ্রীয় সার্ভারের তথ্য একদিকে যেমন নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে পৌঁছে যাবে, তেমনি অন্যদিকে প্রসূতির পরিবারের সদস্যের কাছেও পৌঁছে যাবে। এতে করে জরুরি সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা বেড়ে যাবে।’ ওদিকে দলের আরেক সদস্য ফাহমিদ যোগ করেন, ‘মামি রিং স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সহজে বার্তা পাঠাবে। পাশাপাশি মুঠোফোনে খুদেবার্তার মাধ্যমেও সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।’
গল্পে গল্পে অনেক কিছু জানা হলো চ্যাম্পিয়ন দলের কাছে। তাদের আপাতত লক্ষ্য পরবর্তী ধাপ উতরানো। এই তরুণদের চোখেমুখে সেই দৃঢ় প্রত্যয়ই খেলে গেল।