চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বইপ্রেমীদের সাহিত্য সংসদ
‘আমাদের জাতীয় জীবনে সব ক্ষেত্রেই এখন এক ধরনের দুর্দিন চলছে। রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ নানা ক্ষেত্র চলে গেছে অযোগ্যদের দখলে। প্রকৃত সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার পরিবেশ পাওয়া কঠিন। তাই অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই শূন্যতা পূরণের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি,’ বলছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংসদের সভাপতি আদিত্য পিয়াস। আদিত্যর সঙ্গে কথা হচ্ছিল মূলত ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তি আর আমাদের পাঠাভ্যাসে এসবের বিরূপ প্রভাব নিয়ে। আদিত্যরা মনে করেন, এখনকার সময়ে পাঠক তৈরি করতে হলে শিক্ষার্থীদের হাতে সুসাহিত্য পৌঁছে দেওয়া দরকার। প্রয়োজন সাহিত্য নিয়ে আলোচনা, সাহিত্যের চর্চা। তাই ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংসদ।
সারা বছর বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, পাঠচক্র ও সেমিনার আয়োজনের মধ্য দিয়ে সরব থাকে এই সংগঠন। বিভিন্ন জাতীয় দিবস, কবি-সাহিত্যিকদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভার আয়োজন করেন এই বইপড়ুয়া তরুণেরা। প্রতিসপ্তাহে কোনো একটি নির্দিষ্ট বই ঠিক করেন তাঁরা। নির্ধারিত দিনে একজন আমন্ত্রিত অতিথির উপস্থিতিতে আলোচনা হয় সেই বই নিয়ে। সব শেষে প্রধান আলোচক বইটি নিয়ে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এরপর থাকে প্রশ্নোত্তর পর্ব। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক ও লেখকদের আমন্ত্রণ জানানো হয় ওই বৈঠকে। আয়োজনটি সবার জন্য উন্মুক্ত। নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয় সেমিনারেও। তবে সেমিনারগুলো শুধু সংগঠনের সদস্যদের জন্য।
কেবল সাহিত্যপাঠ নয়, সাহিত্য রচনার চর্চাও চলে এই সংগঠনে। ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু বইমেলায় শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখা বই নিয়েই একটি স্টল দিয়েছিল সংগঠনটি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল এই স্টল। সংগঠনের ১০ জন সদস্যের একক ও যৌথভাবে লেখা বই প্রকাশিত হয়েছিল সেবার।
সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আবির বিন জাবেদ বলেন, ‘আমাদের মূলমন্ত্র একটি সাহিত্যানুরাগী, মননশীল ছাত্রসমাজ গঠন। যাঁরা অপসংস্কৃতি রোধ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে জাতীয় জীবনে ভূমিকা রাখতে পারবেন। আমাদের সংগঠনের পাঠাগার কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা সাহিত্য, রাজনীতি, ইতিহাস, অর্থনীতি, দর্শন, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক নানা বই পড়ার সুযোগ পাই। এই চর্চা আমাদের সমৃদ্ধ করে।’