আমরা যেদিন বাবুর্চি হলাম

ক্যাম্পাসজীবনের লেখা–ছবি শিক্ষার্থীরা পাঠাতে পারেন প্রথম আলোর রোববারের ক্রোড়পত্র ‘স্বপ্ন নিয়ে’তে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]
‘ঢাল–তলোয়ার’ হাতে এ এক অন্য যুদ্ধ
ছবি: সংগৃহীত

গুগল বলছে—চড়ুইভাতি মানে হলো পাখির কিচিরমিচির ছন্দে, দল বেঁধে প্রাকৃতিক পরিবেশে রান্নাবান্না করে খাওয়া, হইহুল্লোড় করা। আমাদের আয়োজনটাও ঠিক তা-ই ছিল। আমাদের মানে আমরা যারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

তারিখ ফেলা হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু ব্যাটে-বলে মিলছিল না কিছুতেই। ক্লাস-পরীক্ষার চাপ থেকে একটু মুক্তি পেয়েই কেউ কেউ ছুটছিল বাড়িতে। বারবার পেছাতে পেছাতে অবশেষে ৬ জানুয়ারি দিনটা আমরা চূড়ান্ত করতে পেরেছিলাম।

দিন ঠিক হওয়ার পর শুরু হলো চাঁদা তোলা। কী কী রান্না হবে? খেলাধুলায় কী কী থাকছে? ক্যাম্পাসের কোন জায়গায় আয়োজনটা হতে পারে? এসব নিয়ে শুরু হলো আলোচনা। সবকিছু গোছানোর পর এল বাজারের পালা। দোকানে দাঁড়িয়েও নতুন করে আরও বন্ধুদের সংযুক্তির খবর স্বস্তি এনে দিচ্ছিল আমাদের মনে। দলে ভারী না হলে আনন্দ জমবে কী করে!

আলোচনার টেবিলে জোশ নিয়ে ‘নিজেরাই রান্না করব’ ঘোষণা দিয়ে ফেলা সহজ। কিন্তু করাটা বেশ কঠিন। কারণ, আমরা কেউই পেশাদার বাবুর্চি নই। ঘরোয়া আয়োজনে টুকটাক রান্না হয়তো করেছি। কিন্তু বাজারের লিস্ট করার সময় নিজেদের দক্ষ বাবুর্চিই মনে হলো। পোলাওয়ের চাল, ডাল, ডিম, পানীয়, মসলাপাতি, সালাদের জন্য কেনা সবজি—সবই এল। কিন্তু জ্বালানি কাঠই যে পাওয়া গেল না! এখন উপায়? ক্যাম্পাসের এদিক-ওদিক খুঁজলাম বেশ কিছুক্ষণ। শেষ পর্যন্ত সহায়তা করলেন লালন শাহ হলের ব্যবস্থাপক। লাকড়ি না হয় জোগাড় হলো। কিন্তু আসল চ্যালেঞ্জ তখনো বাকি—রান্না।

অবশেষে এল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে সুয্যিমামার দেখা দিতে দিতেই সকাল ১০টা। ততক্ষণ কি বসে থাকা যায়? সকাল আটটায় সবাই কাজে লেগে পড়লাম। এতজনের জন্য মসলার বন্দোবস্ত করা সহজ নয়। বন্ধু জুবায়ের দায়িত্বটা নেওয়ায় রক্ষা হলো। রোস্টের জন্য মুরগি কিনে আনার পর শুরু হলো রান্নার লড়াই। এই যুদ্ধে সবাই বাবুর্চি, নয়তো সহযোগী। সবার আন্তরিক অংশগ্রহণ সবচেয়ে আনন্দের ছিল। শাওন, সুমন, এশা, জেরিন, রাসেল, প্রিয়া, আনিস, মঈনুল, আজাদ, কাইউম, হুমায়ুন—আরও কত নাম! রান্নার কাজের ফাঁকে কয়েকজন র‌্যাফল ড্রর কুপন বিক্রি সেরে নিল। অন্যদিকে কেউ পছন্দের গানগুলো বাজাচ্ছিল। কেউবা নাচ বা ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত। মেহেদী, পূজা, নিবিড়েরা আমাদের গান গেয়ে শোনায়।

সকাল সকাল শুরু করেও রান্না শেষ হতে হতে তিনটা বেজে গেল। ভীষণ ক্ষুধা লেগেছিল বলেই কি না কে জানে, আমরা নিজেরাই নিজেদের রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলাম। খাওয়া শেষে একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর র‌্যাফল ড্রয়ের পালা।

সবাই একসঙ্গে গোল হয়ে বসে ‘সতিনের ছেলে কেউ নেয় না কোলে’ নামের একটা খেলা খেললাম আমরা। এই খেলাকে ইংরেজিতে অনেকে হয়তো ‘পিলো পাস’ নামে চেনে। আমরা অবশ্য বালিশের বদলে খেলেছি বোতল দিয়ে। হাঁড়িভাঙা খেলা, র‌্যাফল ড্র, ছবি তোলা—এসব করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে এল।

দিনের শেষটা অবশ্য আক্ষেপ দিয়েই হলো। এই আক্ষেপটা সময়স্বল্পতার। সারা দিনের আনন্দ যেন শেষ হয়েও হলো না।