একই স্কুল, একই কলেজের ২২ ছাত্রী সুযোগ পেয়েছেন মেডিকেলে

এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীরের সঙ্গে দেখা করতে স্কুল প্রাঙ্গণে গিয়েছিলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ছাত্রীরা
ছবি: প্রথম আলো

এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কিশোরগঞ্জের একটি স্বনামধন্য স্কুল। এই স্কুল থেকে ২০১৮ সালে যারা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল, তাদের মধ্যে ২৩ জন এ বছর মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো, ২৩ জনের মধ্যে ২২ জনই পড়তেন জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী গুরুদয়াল সরকারি কলেজে। অর্থাৎ একই স্কুল-কলেজের ২২ জন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই তাদের প্রাক্তন ছাত্রীদের সাফল্যে ভীষণ আনন্দিত।

২০১৮ সালে এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২১০ জন ছাত্রী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ করেন। অন্যদের পাশাপাশি এই ২৩ জন ছাত্রীও কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন। তাঁদের মধ্যে ২২ জন ছাত্রী গুরুদয়াল সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। আরেকজন ঢাকার একটি কলেজে ভর্তি হন। একই স্কুল-কলেজে একসঙ্গে পড়ালেখা করে মেডিকেল ভর্তির সুযোগ পেয়ে তাঁরা মহা খুশি। গত রোববার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ২৩ জন ছাত্রী তাঁদের প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এসভি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এক হয়েছিলেন। এ সময় তাঁরা স্কুল জীবনের স্মৃতি চরণ করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীর তাঁদের এসভি স্কুলের নাম সংবলিত মাস্ক উপহার দেন। তাঁরা যেন পড়াশোনা করে মানবিক চিকিৎসক হতে পারেন, সেই কামনা করেন।

এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৩ শিক্ষার্থী হলেন—নোসাইবা হোসেন, সুলতানা আক্তার, আরফাতুন নাহার, নওশীন তাবাসসুম ইসলাম, নিশাত নাবিলা, সাদিয়া হক, সিনথিয়া বিনতে মান্নান, যমজ বোন অমৃতি অরাত্রিকা ও নিভৃতি দ্যোতনা, সায়মা আক্তার, শেফা উম্মে সালমা, তাজরিয়ান রাফিন, ফারহানা আক্তার, আসমা সিদ্দিকা, নূসরাত আরা, উম্মে হাবিবা, অনন্যা সাহা, আনিকা তাসনিম, রেজওয়ানা আফরিন, নওশীন তাবাসসুম, তাসফিয়া নওশীন, আনজুমান আরা এবং নাজিফা তাসনিম।

নিজ স্কুলের ছাত্রীদের এমন সাফল্যে গর্বিত কিশোরগঞ্জ এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীর। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাজীবনের মূল ভিত্তি তৈরি হয় স্কুলে। শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দিতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে আসছি। শিক্ষকদের প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা, এবং অভিভাবকদের সহায়তায় প্রতি বছর আমাদের অনেক শিক্ষার্থী মেডিকেল, প্রকৌশলসহ দেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়।’ তিনি জানান, ২০১৭ সালে এই স্কুল থেকে এসএসসি পেরোনো ১৫ জন এবং ২০১৬ সালে এসএসসি পেরোনো ২৫ জন ছাত্রী মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রধান শিক্ষক শাহনাজ কবীর ২০১৯ সালে দেশের সেরা প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন। এ ছাড়া শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় এ বছর তিনি আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননাও পেয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ। যে কলেজে পড়াশোনা করেছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ দেশের তিনজন রাষ্ট্রপতি। সেই কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইমান আলী জানালেন, তাঁর কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এবার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ২২ জন জেলা শহরের এসভি সরকারি স্কুলের ছাত্রী ছিল, এ কথা তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা শিক্ষার্থীদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গুরুদয়াল কলেজের সব শিক্ষক আন্তরিকভাবে চান, তাঁদের শিক্ষার্থীরা শুধু কলেজেই নয়, সামনের দিনগুলোতেও সুনাম অর্জন করুক। সেভাবেই তাঁরা পাঠদানের চেষ্টা করেন।’ তিনি সব শিক্ষার্থীদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।