করোনা পরিস্থিতিতেও স্বাভাবিক গতিতে চলছে আইইউবি

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ভর্তি মেলা। এ উপলক্ষে প্রথম আলোর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্ববিদ্যালয় সমাচার’। ৭ নম্বর পর্বে আলোচনা করা হয় ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ নিয়ে। সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিক মনজুর।

আলোচকদের পরিচয় পর্ব শেষে সঞ্চালক তারিক মনজুর ‘ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য বেছে নেবেন’ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। প্রথমেই আলোচনায় অংশ নেন ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রধান ড. মাহাদী হাসান। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হলো কীভাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে একটি সামগ্রিক ধারণা। ড. মাহাদী হাসান বলেন, ‘ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। তখন একদল মানুষ ভিশনারি চিন্তা করেছিলেন, উচ্চশিক্ষায় আমাদের একটা ভালো মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দরকার, যেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা যেন দেশ ও দেশের বাইরে নাম ছড়াতে পারেন, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির। ৩৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে রাজধানীর বারিধারায় ভাড়া করা কয়েকটা বাড়িতে শুরু হয় আইইউবির যাত্রা। তখন আমি আইইউবির শিক্ষার্থী ছিলাম। পরে আমি ১৯৯৭ সালে আইইউবিতে যোগ দিই। সেই ৩৩ জন শিক্ষার্থী থেকে আজ আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। আর আমাদের অ্যালামনাইয়ের সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি হয়ে গেছে। তিন একর জায়গার ওপর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সুন্দর একটা ক্যাম্পাস আমাদের। এটা আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস, যেটা আন্তর্জাতিক যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারে। আমাদের শিক্ষার্থীরা নানা জায়গায় ছড়িয়ে গেছেন।

আইইউবির বেশ কিছু গুণাবলি আছে, যেটা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইইউবিকে আলাদা করেছে।’

নতুন যাঁরা ভর্তি হবেন আইইউবিতে, তাঁদের ভর্তিসুবিধা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যাডমিশন অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল এইডের প্রধান লিমা চৌধুরী বলেন, ‘ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়াটি পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক। করোনা পরিস্থিতি ছাড়াও আমরা অনলাইনে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকি। আর মহামারির এ সময় অনলাইনের তো কোনো বিকল্প নেই। ভর্তির জন্য যখন অনলাইনে ফরম পূরণ করতে হবে, তখন শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই এ ফরম পূরণ করতে পারবেন।

ইনফরমেশনগুলো তিনি নিজেই পূরণ করতে পারবেন। আর ভর্তির টাকা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন। এসব সুযোগ–সুবিধা আমরা অনেক আগে থেকেই দিচ্ছি। তবে এখন পার্থক্য হলো, আমরা পরীক্ষা নিতে পারছি না। শিক্ষার্থীরা যখন আবেদন করছেন, তখন আমরা দেখি, তাঁদের যোগ্যতা আছে কি না। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিই আমরা। আর কারও যদি ভাইভা নিতে হয়, তাহলে অনলাইনে নেওয়ার ব্যবস্থা করি।’

ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রমগুলো কী এবং শিক্ষার্থীদের বাজারে চাকরির সম্ভাবনা কতটুকু—এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় অ্যাডমিশন অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল এইডের সহকারী পরিচালক প্রিয়াংকা দের কাছে। তিনি বলেন, ‘আইইউবির ক্যাম্পাস শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম উপযোগী ক্যাম্পাস। সারা বছর আমাদের ক্যাম্পাসে কোনো না কোনো কার্যক্রম চলে। করোনার কারণে কিন্তু এ কার্যক্রমগুলো আপাতত বন্ধ আছে। এ ক্ষেত্রে আইইউবি কর্তৃপক্ষ চিন্তা করল, এভাবে থাকলে তো মানসিকভাবে শিক্ষার্থীরা কিছুটা সমস্যার মধ্যে পড়তে পারেন। সেই চিন্তা করেই আইইউবির যতগুলো ক্লাব আছে, সেগুলোকে একত্র করে অনলাইন কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো, একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি এ কঠিন সময়ে যেন শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে সতেজ রাখা যায়, তার জন্য বিভিন্ন আয়োজন করা। আমরা কিন্তু একজন শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ করে গড়ে তুলি। এ জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম আমাদের রয়েছে। এর ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা সহজেই চাকরি পাচ্ছেন এবং চাকরিজীবনে ভালো করছেন।’

অনেক ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবক বিভাগ ও শিক্ষক সম্পর্কে জানতে চান। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রধান ড. কে আয়াজ রাব্বানীকে। তিনি বলেন, ‘আমরা করোনা পরিস্থিতির মধ্যে অনলাইনে ক্লাস ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আগে যে–সংখ্যক শিক্ষার্থীরা ক্লাস নিতেন, অনলাইনেও প্রায় সে–সংখ্যক শিক্ষার্থীরা ক্লাস নিচ্ছেন। আর আমাদের শিক্ষকমণ্ডলী ও বিভাগে সেরা শিক্ষক ও সেরা মান সংরক্ষণ করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ভর্তি মেলা। প্রথম আলো ডটকমের এ আয়োজনের নাম ‘এইচএসবিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ভর্তি মেলা’। এতে ১৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিয়েছে। মেলায় শিক্ষার্থীরা ৫২টির বেশি বিষয়ে ভর্তির ব্যাপারে জানতে পারছেন।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করছে এইচএসবিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ভর্তি মেলায়। বিদেশে ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের তথ্য দিতে এই মেলায় অংশ নিচ্ছে মেন্টরস।

অনলাইন ভর্তি মেলায় অংশ নেওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, আইইউবিএটি, কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি বিশ্ববিদ্যালয়, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। এ ছাড়া কুমিল্লা থেকে সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা; চট্টগ্রাম থেকে ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ও বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি অংশ নেবে এ মেলায়।