ভারতের তিন রাজ্য খুলছে স্কুল
করোনার সংক্রমণ কমে আসায় ভারতের গুজরাট ও হরিয়ানায় স্কুল খুলছে। পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে দুই রাজ্য। এর আগে বিহারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা জানানো হয়। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে এ কথা বলা হয়েছে।
ভারতে করোনাভাইরাসে মৃত্যু বেড়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিপদ এখনো কাটেনি। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের প্রকোপ রুখতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন ও বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় গুজরাট ও হরিয়ানায় স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী কানওয়ারলাল গুর্জর রাজ্যে শর্তসাপেক্ষে স্কুল খোলার কথা জানান। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল খুলবে। ১৬ জুলাই থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাসে পড়া শুরু হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্কুলগুলোতে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অন্য শ্রেণির জন্যও স্কুল খুলবে।
রাজ্যর মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার বলেছেন, সংক্রমণের হার কমে আসায় ধীরে ধীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গুজরাটেও খুলতে যাচ্ছে স্কুল। ওই রাজ্যের শুধু দ্বাদশ শ্রেণি পড়ুয়াদের জন্য। গুজরাটে ১৫ জুলাই থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল খুলবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। তবে দ্বাদশের ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে বাসার অনুমতি পাবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, রাজ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ুয়াদের জন্য কলেজ খুলবে ১৫ জুলাই থেকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীসংখ্যা হবে ৫০ শতাংশ।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, স্কুল ও কলেজে আসার বিষয়টি নির্ভর করবে শিক্ষার্থীদের ওপর। উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না।
হরিয়ানা ও গুজরাট দুটি রাজ্যেই এ ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, স্যানিটাইজেশনের মতো করোনা বিধি পালন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এর আগে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিহারে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শুরুর কথা জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কলেজ খুলবে। ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী নিয়ে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির অফলাইন ক্লাস শুরু হবে। শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত কর্মী, শিক্ষক, ছাত্রদের টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আবারও মৃত্যু বাড়ছে। শনিবার দেশটির সরকারপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ হাজার ৭৬৬ জন। আর মারা গেছেন ১ হাজার ২০৬ জন। গতকাল শুক্রবারের তুলনায় ভারতে সংক্রমণ কমেছে। তবে দৈনিক হিসাব অনুসারে মৃত্যু বেড়েছে। কারণ, শুক্রবার মারা যান ৯১১ জন। আর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ৪৩ হাজার ৩৯৩ জনের। সবশেষ তথ্যসহ ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ কোটি ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭১৬। করোনায় মারা যাওয়া মানুষের মোট সংখ্যা ৪ লাখ ৭ হাজার ১৪৫।
এদিকে শনিবারের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে কেরালা রাজ্যে। এই রাজ্যে নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৫৬৩ জনের। এ ছাড়া মহারাষ্ট্রের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৯৯২ জনের। তামিলনাড়ুতে শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩৯ জন, কর্ণাটকে শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ২৯০ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বোঝার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। ভারতে করোনা থেকে রোগীদের সেরে ওঠার হার বাড়ছে। এই হার ৯৭ দশমিক ২০ শতাংশ।