শেয়ারবাজারে জোম্যাটোর ইতিহাস, যাত্রা শুরু আইআইটি পড়ুয়ার হাত ধরে
শেয়ার মার্কেটে পা রেখেই ইতিহাস গড়ে ফেলল ভারতের অনলাইন খাবার পরিবেশন সংস্থা জোম্যাটো। গত বুধবার প্রথমবার বাজারে শেয়ার ছাড়ার (আইপিও) ৪৮ ঘণ্টা না যেতেই কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মূল্য বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। বর্ধিত শেয়ারমূল্যে ভর করেই কোম্পানিটির বাজারমূল্য বেড়ে ১ লাখ কোটি রুপির মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছে। ঢুকে পড়ল ভারতের প্রথম সারির এক শ কোম্পানির তালিকায়।
গত বৃহস্পতিবার ‘শেয়ার অ্যালটমেন্ট’ চূড়ান্ত করে সংস্থাটি। এরপর শুক্রবার স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার ছাড়ে জোম্যাটো। আর বাজারে ইতিহাস তৈরি করে শেয়ারপ্রতি মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ শতাংশের বেশি। ক্রেতাদের বিপুল সমর্থনে সংস্থার বাজারমূল্য বেড়ে একধাক্কায় ১ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলে।
গত বুধবারই প্রথম শেয়ারবাজারে পা রাখে জোম্যাটো। শেয়ারপ্রতি দাম ধার্য করা হয় ৭২ থেকে ৭৬ রুপি। কিন্তু গত শুক্রবার সকালে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে (বিএসই) তাদের প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে ১১৫ রুপিতে পৌঁছায়। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে বেড়ে যায় ৫১.৩২ শতাংশ। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে (এনএসই) জোম্যাটোর শেয়ারের দাম ৬৫.৭৯ শতাংশ বাড়ে। গত শুক্রবার বাজার শুরু হয় প্রতি শেয়ার ১১৬ রুপি দামে। দিনের শেষে বাজার বন্ধ হওয়ার সময় জোম্যাটোর শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ১২৬ রুপি।
জোম্যাটো ‘ইউনিকর্ন’
মোট ৯ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার শেয়ার বাজারে ছাড়ে জোম্যাটো। তা নিয়ে বিডিং হয় প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি রুপির, যা শেয়ারবাজারের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ। শুধু তা–ই নয়, শেয়ারবাজারে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই ‘ইউনিকর্ন’ তকমা পেয়েছে জোম্যাটো। যে যে সংস্থার বাজারমূল্য ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি হয়, শেয়ারবাজারের ভাষায় তাদের ‘ইউনিকর্ন’ বলা হয়।
মোট ৯ হাজার ৩৭৫ কোটি রুপির শেয়ার ছেড়েছিল জোম্যাটো। তা কেনার জন্য কার্যত হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি রুপি ঘরে তুলেছে জোম্যাটো, যা ভারতের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
২০০৮ সালে মানুষের দুয়ারে খাবার পৌঁছে দেওয়ার নতুন আইডিয়া সম্বল করে জোম্যাটোর যাত্রা শুরু হয় পঙ্কজ চাড্ডা ও দীপেন্দ্র সিং গোয়েলের হাত ধরে। পরে তাতে বিনিয়োগ করে ইনফো এজ এবং চীনের অ্যান্ট গ্রুপ। শুরুতে ভালো রেস্তোরাঁ, তাদের মেন্যু ও খাবারের গুণমান নির্ধারণ করা কাজ ছিল কোম্পানিটির। ঘরে ঘরে খাবার সরবরাহের পরিষেবা শুরু হয় আরও পরে। বর্তমানে বিশ্বের ২৪টি দেশে খাবার সরবরাহে যুক্ত জোম্যাটো।
দিপেন্দার গোয়েল ইন্ডিয়ান ইনস্টিউট অব টেকনোলজিতে (আইআইটি) গণিত ও কম্পিউটার সায়েন্সে পড়েছেন। সেই সময়ে পিৎজার অর্ডার নিয়ে ঝামেলায় পড়েন তিনি। এরপরই পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে খাদ্যসেবার ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন। পড়া শেষে বেন অ্যান্ড কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। এ সময় তিনি দেখেন যে অফিসের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মেন্যু ছিল মাত্র কয়েকটি। আর এতে সহকর্মীরা আশপাশের রেস্তোরাঁ থেকে খাবার এনে খান। আর এতে খাবারের মান ও সময়মতো খাবার না আসাসহ নানা সমস্যাও হয়।
গোয়েল এবং তাঁর সহকর্মী পঙ্কজ চাড্ডা নিজেদের অফিসের একটি গ্রুপে রেস্তোরাঁ ও ক্যাফের মেন্যু এবং ফোন নম্বর আপ করেন। এতে বেশ সাড়া পড়ে যায়। এরপর তিনি সপ্তাহান্তে একদিন অনলাইনে খাবারের সেবার কাজ শুরু করেন। দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে স্ত্রীর চাকরি হওয়ার পরই নতুন স্টার্টআপে মন দেন গোয়েল। বছর না ঘুরতেই মেলে ১ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। এরই মধ্য নাম বদলে ‘জোম্যাটো’ হয়ে যায়।
দিল্লির গুরগারওভিত্তিক এই অনলাইন সেবার পরিসর পেরিয়েছে দেশের গণ্ডিও। ব্রাজিল, তুরস্ক, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ ১৯ দেশের ১০০ শহরে সেবা আছে জোম্যাটোর। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি ও ইন্ডিয়া টুডে