স্নাতক ডিগ্রির ১৪ শতাংশ বিজ্ঞানে

বাংলাদেশে সফটওয়্যার উন্নয়ন ও সেবা দ্রুত স্ফীত হচ্ছে। এটুআই কর্মসূচির কারণে সরকারি সেবা পেতে সময় কম লাগছে।

কৃষি, প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, গণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যাসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে দেশের ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি নিচ্ছেন। বিজ্ঞানশিক্ষার এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। অন্যদিকে পেটেন্ট নেওয়ার ক্ষেত্রে নেপাল পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশকে।

দেশের বিজ্ঞানশিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ে এই তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। ইউনেসকো বলছে, বাংলাদেশে সফটওয়্যার উন্নয়ন ও এই সম্পর্কিত সেবা দ্রুত স্ফীত হচ্ছে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের ওপর অত্যধিক চাপ প্রয়োগের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

এ সপ্তাহে প্রকাশিত ‘উজ্জ্বলতর উন্নয়নের লক্ষ্যে সময়ের প্রতিকূলে দৌড়’ শীর্ষক ৭৬২ পৃষ্ঠার বৈশ্বিক বিজ্ঞান প্রতিবেদনে ইউনেসকো এসব কথা বলেছে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউনেসকো।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে শিক্ষায় বিশেষ করে বিজ্ঞানশিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। উজ্জ্বলতর ভবিষ্যৎ গড়তে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে গুরুত্ব ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’

বিজ্ঞানশিক্ষা

২০১৮ সালের হিসাব দিয়ে ইউনেসকো বলছে, বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের ২ শতাংশ খরচ হয় শিক্ষা খাতে। অন্যদিকে মোট দেশজ উৎপাদনের শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ খরচ হয় উচ্চ শিক্ষা খাতে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে এমন তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৪ সালে উচ্চশিক্ষায় নারী শিক্ষার্থী ছিল ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা বেড়ে ১৭ শতাংশে দাঁড়ায়।

সরকার মাঝেমধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষায় জোর দেওয়ার কথা বললেও উচ্চশিক্ষায় ডিগ্রি নেওয়াদের ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। ইউনেসকো ২০১৯ সালের হিসাব দিয়ে বলছে, ৩১ দশমিক ১ শতাংশ ডিগ্রি হচ্ছে মানবিক শাখা থেকে। ব্যবসা, প্রশাসন ও আইন শাখা থেকে ডিগ্রি হচ্ছে ২৬ দশমিক শিক্ষার্থীর। সামাজিক বিজ্ঞান থেকে ডিগ্রি নিচ্ছেন ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিজ্ঞানে ডিগ্রি নিচ্ছেন ১৪ শতাংশের মতো।

প্রতিবেদনে ভারতকে হাতি ও চীনকে ড্রাগনের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, আফগানিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ হাতি ও ড্রাগনের মধ্যে অবস্থান করছে। তাই ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হলেও সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলোর তথ্য ভারতের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়নি।

গবেষণা পরিস্থিতি

বৈজ্ঞানিক প্রকাশনায় দেখা যায়, বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে পাকিস্তান। ২০১১ সালে বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা ছিল ২ হাজার ২১৬টি। একই সময়ে পাকিস্তানের প্রকাশনা ছিল ৮ হাজার ১৪৫টি। এরপর থেকে প্রতিবছরই দুই দেশের প্রকাশনা বেড়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৬২টিতে। আর পাকিস্তানের ২১ হাজার ৭২৯টি। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, আফগানিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ—এদের অবস্থান বরাবরই বাংলাদেশের নিচে ছিল।

ইউনেসকোর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশি গবেষকদের প্রধান সহযোগী হিসেবে প্রবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের নাম বেশি দেখা গেছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে জাপানিদের নাম। পক্ষান্তরে পাকিস্তানি গবেষকদের প্রধান সহযোগী হিসেবে চীনা বিজ্ঞানী ও গবেষকদের নাম বেশি দেখা গেছে। এর পরেই সৌদি আরবের বিজ্ঞানীদের নাম।

তবে দক্ষিণ এশিয়ায় উদ্ভাবনের পেটেন্ট করার ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে নেপাল। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে নেপালের ১৯৯টি উদ্ভাবন পেটেন্ট পেয়েছে। এ সময়ে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা পেয়েছে যথাক্রমে ১৫৩ ও ৭৬টি। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ছিল ৭৫টি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ

ইউনেসকো বলছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার জন্য সরকার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সেই অনুযায়ী নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থ্রি–জি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ।

প্রতিবেদন বলছে, কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সির সহায়তায় সরকার ‘ই–গভর্নমেন্ট মাস্টার প্ল্যান ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ (২০১৮)’ নামের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর আওতায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পে তথ্য ভাগাভাগি বা আদান–প্রদান কম হতে দেখা যাচ্ছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে ধীরগতিতে।

সরকারের এটুআই কর্মসূচির বর্ণনা দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে ৫ হাজার ৮৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার থেকে মানুষ নানা ধরনের সেবা পাচ্ছে। এর মধ্যে আছে: জমির দলিল পাওয়া, অর্থ লেনদেন, বিমাসেবা, পাসপোর্ট নবায়ন ইত্যাদি। সরকারি সেবা পেতে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সময় বেঁচে যাচ্ছে।