স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু নিয়ে ভাবনা

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে প্রায় সবকিছুই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক নিয়মে চলা শুরু করছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি সবাই মেনে চলছে না। তবে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকার যুক্তিও রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলেজ না খুলে দেওয়াই ভালো। কারণ, ওই সব প্রতিষ্ঠানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সাধারণত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণে প্রতিটি জেলায় জেলায় পরীক্ষার সেন্টার থাকতে হবে, তাতে গুচ্ছভিত্তিক পদ্ধতিতে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় সম্মত হচ্ছে তাদের কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া এর বাইরে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তাদের এভাবে জেলাভিত্তিক পরীক্ষার সেন্টারের ব্যবস্থা করতে হবে, অর্থাৎ জনসমাগম কমবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা বাস্তবায়ন করা সহজ সম্ভব।

অন্যদিকে আমি মনে করি, এ বছর এমসিকিউ পদ্ধতিতে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হলে ভবিষ্যতে একসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিও সম্পন্ন হবে। ফলে করোনায় যে সময় নষ্ট হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন ভেবে দেখতে পারে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা পড়াশোনা করেন, তাঁদের কিন্তু বেশি সচেতন হিসেবে মনে করা হয় এবং অনেক শিক্ষার্থীরাও চাচ্ছেন যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হোক। এ বিষয়ে উপাচার্য ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ভালো হবে বলে মনে করি। আমাদের দেশে আগামী মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে, যেহেতু শিক্ষার্থীরা বাসায় থাকতে থাকতে একধরনের অলস ও ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছের। শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা খারাপের দিকে যেতে পারে, সে বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে।

বাংলাদেশে স্কুল বন্ধ থাকায় দূরশিক্ষণের অংশ হিসেবে ১৭ বছর বয়সী অগ্নিদ্রোহী স্পন্দন অনলাইনে পরীক্ষা দিচ্ছে
ছবি: ইউনিসেফের ওয়েবসাইট

তবে সম্পূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা না গেলেও যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শেষ শিক্ষাবর্ষে রয়েছেন, তাঁদের নিয়ে অবশ্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে যদি আরও দেরি হয়, তাঁদের ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে না। এসব ক্ষেত্রে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে হবে এবং অন্যান্য নির্দেশনাও থাকতে হবে। আর অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনলাইন শিক্ষাকে কার্যকরীভাবে সক্রিয় রাখতে হবে।

আমি অনলাইন পরীক্ষার বিপক্ষে নই, কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে একটু ঝড় বা একটু বাতাস হলেই ইলেকট্রিসিটি চলে যায়, অনেক শিক্ষার্থী গ্রামে থাকে এবং বেশির ভাগই আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সেখানে অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, সেটা ভেবে দেখা দরকার। আবার একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সেশন জটের হতাশায় থাকুক তা কাম্য নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে অনুসরণ করে পরীক্ষা নেওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়ছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহ্বান করে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।

ফাইল ছবি: মোশতাক আহমেদ

শিক্ষার্থীদের অনবরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি এবং একযোগে মানববন্ধন পর্যন্ত করে চলছে, সেখানে শিক্ষকেরা সম্মতি পোষণ করছেন, এর মানে কিছুটা যৌক্তিক কারণ রয়েছে যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হয়। তাই সরকারকে এ বিষয়ে একটু ভেবে দেখা দরকার এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, বেশি সময় ধরে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীদের বসিয়ে রাখা ঠিক হবে না, কারণ তাঁদের জীবনের অনেক মূল্যবান সময় করোনা মহামারিতে ক্ষতি হয়েছে, তাই স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তাঁদের একাডেমিক সিস্টেমে নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা মানসিক সমস্যাসহ নানা সংকট সমাজে সৃষ্টি হতে পারে, যেমন কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে অনেকেই ঢুকে যেতে পারেন, সেই আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই সামগ্রিকভাবে সব বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

আমরা যাঁরা শিক্ষক তাঁরা ভালোই বুঝতে পারি যে সরকারি সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, এটা ভাবা কঠিন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মনে হয়। উল্লেখ্য, ওই সব দেশে কিন্তু করোনা এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ ছাড়া চীনের উহানে এখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে চালু করেছে, যেখানে করোনার উৎপত্তি।

*লেখক: সাবেক সভাপতি-শিক্ষক সমিতি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি), ত্রিশাল, ময়মনসিংহ