১০০ বছরে ঢাবিতে ১৮১২ পিএইচডি, ১৬৭০ এমফিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে আজ সোমবার বিকেলে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: শতবর্ষের গবেষণা—পিএইচডি ও এমফিল’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ১০০ বছরে ১ হাজার ৮১২ জন গবেষককে পিএইচডি ও ১ হাজার ৬৭০ জনকে এমফিল ডিগ্রি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ২৭ জনকে ডিএসসি, ৮ জনকে ডিএড ও ১২ জনকে ডিবিএ ডিগ্রি দিয়েছে দেশের প্রাচীনতম এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম সরকারের লেখা একটি বইয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: শতবর্ষের গবেষণা—পিএইচডি ও এমফিল’ শীর্ষক এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আহমদ শরীফ চেয়ার অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আবুল কালাম সরকারকে অভিনন্দন জানাই যে তিনি একটা কঠিন কাজ করেছেন। এই কাজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ভালো কাজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের শিক্ষকদের পড়া, দেখা ও বিচার-বিবেচনা করা উচিত।’
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই অনেক বেশি সংখ্যায় গবেষক পিএইচডি অর্জন করেছেন উল্লেখ করে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কম গবেষণাকাজ হয়েছে। কিন্তু মানের দিক থেকে অনেক ভালো কাজ হয়েছে। পাকিস্তান আমলে কিছু কাজ হয়েছে, সেগুলোও গুণের দিক দিয়ে যথেষ্ট ভালো। বাংলাদেশ আমলে অনেক বেশি কাজ হয়েছে। কিন্তু এর সব কটি যে যথেষ্ট ভালো হয়েছে, তা বলা যাবে না। অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতিও আছে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বইটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা-ম্যাপিং রচিত হয়েছে। বিভাগ ও অনুষদগুলোকে ম্যাপিং করে গত ১০০ বছরে কোন বিভাগ-অনুষদের কী অবদান, তা বইটিতে তুলে আনা হয়েছে। বইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বড় দলিল।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বইটি রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন আবুল কালাম সরকার। তিনি বলেন, ‘আমি ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় একটি কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পিএইচডির খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলাম, কোথাও শুরু থেকে এ পর্যন্ত পিএইচডি-এমফিলের তালিকা নেই। যা আছে, তা খণ্ডিত। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ সামনে রেখে আমি এই কাজটি করব। কাজটি শেষ করতে প্রায় আড়াই বছর লেগেছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য আহমেদ আবদুল্লাহ জামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কলা অনুষদের ডিন আবদুল বাছির। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রকাশিত বইয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নেন একই বিভাগের অধ্যাপক ও এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান। স্বাগত বক্তব্য দেন ইতিবৃত্ত প্রকাশনের চেয়ারম্যান আলো আর্জুমান বানু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রাকালেই উচ্চতর গবেষণার জন্য কলা অনুষদে ডক্টর অব ফিলোসফি (পিএইচডি) ও ডক্টর অব লিটারেচার (ডি.লিট) এবং বিজ্ঞান অনুষদে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পর্যায়ের গবেষণার এই ডিগ্রিকে পিএইচডি বলা হয়।

২০১৩ সাল থেকে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) পিএইচডি ডিগ্রির পাশাপাশি উচ্চতর গবেষণার জন্য ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রি চালু হয়। তবে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ডিগ্রির জন্য গবেষণার ব্যবস্থা ছিল না। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল কোর্স চালু করা হয়।

নীল ও সাদা দলের শিক্ষকদের মিলনমেলা

এদিকে আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের শিক্ষক-প্রতিনিধি নির্বাচন সামনে রেখে আজকের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: শতবর্ষের গবেষণা—পিএইচডি ও এমফিল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক সংগঠন নীল দল ও বিএনপিপন্থী সাদা দলের সমর্থক শিক্ষকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল তাঁর বক্তব্যে প্রসঙ্গক্রমে সিনেট নির্বাচনের কথা উল্লেখও করেন।

মোড়ক উন্মোচন হওয়া বইটির লেখক আবুল কালাম সরকার নিজেও সাদা দলের সমর্থক। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাদা দলের আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমান, সাবেক আহ্বায়ক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামসহ সংগঠনের সমর্থক প্রায় ৩০ জন শিক্ষক অংশ নেন। নীল দলের সাবেক নেতা মাকসুদ কামাল ছাড়াও সংগঠনের প্যানেল থেকে সিনেট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া কে এম সাইফুল ইসলাম খান, আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়াসহ কয়েকজন শিক্ষক এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।