ফোনে ভাইব্রেশন হচ্ছে বলে মনে হয়, হাতে নিয়ে দেখি মনের ভুল

মাঝেমধ্যে ফোনে ভাইব্রেশন হচ্ছে ভেবে হাত বাড়িয়ে দেখা যায় তা মনের ভুল। এর একটি পোশাকি নাম আছেপিক্সাবে

শুরু থেকেই প্যান্টের সামনের ডান পকেটে স্মার্টফোন রাখা অভ্যাস হয়ে গেছে। ফোনকল বা নোটিফিকেশন এলে বের করে দেখতে সুবিধা। তবে মাঝেমধ্যে ফোনে ভাইব্রেশন হচ্ছে ভেবে হাত বাড়িয়ে দেখি তা মনের ভুল। ফোনে কোনো কল বা বার্তা আসেনি। কখনো কখনো তো পকেটে স্মার্টফোন না থাকলেও এমনটা হয়।

গুগলে খানিকটা ঘাঁটাঘাঁটি করে বুঝলাম, এর পোশাকি নাম ‘ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিনড্রোম’। আবার মজা করে ‘রিংজাইটি’ বা ‘ফক্সেলার্ম’ বলা হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এমন মনের ভুল প্রায় সব মুঠোফোন ব্যবহারকারীর মধ্যেই দেখা যায়। অনেকে ভাইব্রেশনের অনুভূতির পাশাপাশি রিংটোনও শুনতে পান, যার পুরোটাই কাল্পনিক।

ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিনড্রোম কেন হয়, তা অজ্ঞাত। অনেক খুঁজেটুজেও কারণ পেলাম না। বেশির ভাগ নিবন্ধেই সম্ভাব্য কারণ হিসেবে প্রযুক্তির ওপর আমাদের অত্যধিক নির্ভরশীলতার উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকটা হ্যালুসিনেশনের মতো হয়।

অনেকের মধ্যেই ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিনড্রোম আছে

২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি এবং পুরডু ইউনিভার্সিটির স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওপর এ বিষয়ে জরিপ চালানো হয়। সে জরিপে প্রায় ৯০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তাঁরা ফ্যান্টম বা অলীক ভাইব্রেশন অনুভব করেছেন।

গবেষকেরা লিখেছেন, ‘জরিপে অংশ নেওয়া ২৯০ শিক্ষার্থীর ৮৯ শতাংশ বলেছেন তাঁদের ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিনড্রোম আছে। গড়ে প্রতি দুই সপ্তাহে একবার এমন মনের ভুল হয়েছে তাঁদের।’

হাসপাতাল কর্মীদের ওপর চালানো জরিপেও একই ধরনের ফলাফল মিলেছে। সেখানেও সপ্তাহে বা মাসে একবার ফোনে অলীক ভাইব্রেশনের অনুভূতির কথা মনে করতে পেরেছেন তাঁরা।

ছবি: আনস্প্ল্যাশ

জরিপে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, মুঠোফোন ব্যবহার শুরুর এক মাস থেকে এক বছরের মধ্যে তাঁদের ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিনড্রোম দেখা দিতে শুরু করে। ১৬ শতাংশের অবশ্য মুঠোফোন ব্যবহার শুরুর এক মাসের মধ্যেই দেখা দেয়। আর ২৬ শতাংশের ক্ষেত্রে এক বছর বা তার বেশি মুঠোফোন ব্যবহারে এমনটা হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগ সপ্তাহে বা মাসে একবার অলীক ভাইব্রেশনের অনুভূতি হলেও ১৪ শতাংশের ক্ষেত্রে তা ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার।

স্মার্টফোনে বেশি নির্ভরতা

বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্মার্টফোনের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগে প্রভাব ফেলে। যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভারের মেট্রোপলিটান স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক র‍্যান্ডি স্মিথ গণমাধ্যম সিবিএসকে বলেছেন, ‘এটা অনেকটা হ্যালুসিনেশনের মতো। আমাদের ভয় হলো, হয়তো কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে কিন্তু আমি সাড়া দিচ্ছি না। হয়তো ফোনে একটি বার্তা এসেছে, যার উত্তর দেওয়া জরুরি। আমার মনে হয়, আমরা আমাদের ডিভাইসের ওপর কতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, তা রীতিমতো ভয়ংকর।’

তবে অলীক ভাইব্রেশন মানুষের খুব একটা ক্ষতি করে বলে প্রমাণ মেলেনি। শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো জরিপে ৮৯ শতাংশের ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিনড্রোম থাকলেও কেবল ১১ শতাংশ সেটাকে ‘বিরক্তিকর’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যাঁরা টেক্সট মেসেজে বেশি প্রতিক্রিয়াশীল এবং বার্তা আদান–প্রদানে বেশি নির্ভরশীল, তাঁরা অলীক ভাইব্রেশন বেশি বিরক্তির বলে মনে করেন।