হাজারো মানুষকে করোনার টিকা দিচ্ছে চীন: ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল

টিকা নিয়ে গবেষণা করছেন চীনা গবেষকেরা
ছবি: রয়টার্স

যেখানে পশ্চিমা টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো কঠোর বৈজ্ঞানিক গবেষণা শেষ হওয়ার আগে টিকা দেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্কতা দেখাচ্ছে, সেখানে চীনের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হাজারো মানুষকে পরীক্ষামূলক কোভিড-১৯–এর টিকার ইনজেকশন দিয়েছে।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিপদ সত্ত্বেও চীনা ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বাইরে নতুন টিকা প্রয়োগ করছে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিনোফার্মের সহায়ক সংস্থা চীনা ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ কোম্পানির দুটি পরীক্ষামূলক টিকা গত জুলাইয়ে বেইজিংয়ের কাছ থেকে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পায়।

এ সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের টিকাগুলোর পরীক্ষামূলক ডোজ হাজারো মানুষকে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে চীনা আরেক টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেড বলেছে, তাদের কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যসহ তিন হাজার মানুষকে টিকা দিয়েছে। পরীক্ষামূলক ও করোনাভাইরাসের টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, তিনটি টিকা প্রার্থী এখনো তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এতে টিকাটির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার বিষয় দেখা হবে। এগিয়ে থাকা অন্য ছয়টি করোনার টিকাও চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে।

পরীক্ষা পর্যায়ে শেষ হওয়ার পরে প্রতিটি দেশের নিয়ন্ত্রকেরা সাধারণত কোনো টিকা জনগণের ওপর ব্যাপক প্রয়োগ করা হবে কি না, তা নির্ধারণ করেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানির বেশ কয়েকটি টিকা পরীক্ষায় এগিয়ে থাকলেও তা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার বাইরে জনগণের ওপর প্রয়োগের অনুমতি পায়নি।

আরও পড়ুন

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, সামনের সারির স্বাস্থ্যকর্মীদের জরুরি ব্যবহারের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অপ্রমাণিত টিকাগুলো দেওয়া যেতে পারে।

চীন সরকার গত জুন মাসে ক্যানসিনো বায়োলজিকস ইনকরপোরেশনের তৈরি একটি টিকা সেনাসদস্যের ওপর প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে। এরপর জুলাই মাসে অন্য টিকা স্বাস্থ্যকর্মী ও সীমান্তরক্ষাকারী পরিদর্শকদের ওপর প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে জানানো হয়, চীন ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেছেন, জরুরি ব্যবহার দেখে বোঝা যাচ্ছে টিকা কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানও আত্মবিশ্বাসী যে তাদের টিকা তিন বছর ধরে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে।

তিনটি চীনা টিকার মধ্যে চীনা ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপের তৈরি দুটি টিকা ও সিনোভ্যাকের একটি টিকা জরুরিভাবে নাগরিকদের ওপর ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে। চতুর্থ আরেকটি টিকা সেনাসদস্যদের দেওয়ার জন্য সবুজ সংকেত পেয়েছে।

চীনের সিনোভ্যাকের টিকাটি বর্তমানে ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ায় পরীক্ষা চলছে। টিকাটি বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশে পরীক্ষা হতে পারে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, ইতিমধ্যে কয়েক হাজার লোককে চীনের জরুরি ব্যবহার প্রকল্পের আওতায় টিকা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

সিএনবিজির টিকাটি চীনের বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও দেওয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে হুয়াওয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে হুয়াওয়ের কর্মীরা এ টিকা পাচ্ছেন।

গত সপ্তাহে আইএনএস এক প্রতিবেদনে জানায়, চীনের মতোই টিকা দিতে শুরু করেছে রাশিয়া। দেশটির করোনার টিকার প্রথম ব্যাচের ডোজ নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। গামেলিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ও রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের তৈরি স্পুটনিক-৫ নামের টিকাটি অচিরেই আঞ্চলিক পর্যায়ে সরবরাহ শুরু করা হচ্ছে।

রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, করোনা প্রতিরোধে গাম-কোভিড-ভ্যাক বা স্পুটনিক-৫ নামের প্রথম ব্যাচের টিকাটি প্রয়োজনীয় সব গুণগত পরীক্ষা অনুমোদিত হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর দেশ আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই টিকা দিতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্রের একটি টিকার ফল অক্টোবরেই মধ্যেই জানা যেতে পারে।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকাটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ হয়ে গেছে। টিকা নেওয়ার পর একজন স্বেচ্ছাসেবী অসুস্থ হয়ে পড়ার পর গত সপ্তাহে টিকাটির পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ করে টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা।