অনলাইনে নিরাপদ থাকতে হলে বাড়াতে হবে প্রযুক্তিগত শিক্ষা

এখন পর্যন্ত দেশে এমন উদাহরণ সৃষ্টি হয়নি যে সাইবার জগতে কোনো অপরাধের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে।

প্রযুক্তির ব্যবহারে দেশ এগিয়ে গেলেও প্রযুক্তিগত শিক্ষার অভাব এখনো আছে। অনলাইন সবচেয়ে বেশি হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয় নারী ও কন্যাশিশুরা। অনলাইনে কী করা যাবে, কী করা যাবে না এবং নিজেকে কীভাবে নিরাপদ রাখতে হবে, সে বিষয়ে জানাশোনা নেই অনেক নারী ও মেয়ের। তাই অনলাইনে নিরাপদ থাকতে প্রযুক্তিগত শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ‘অনলাইনে গুজব ও অপপ্রচার রোধ কেন জরুরি’ শীর্ষক মিডিয়া ক্যাফে অনুষ্ঠানে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, কিশোর আলোপ্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারপারসন তাওহিদা জাহান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে গুজব থেকে অনলাইনমাধ্যমকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। গুজব ও হয়রানির যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তা একজন মানুষের মানসিক বিকাশকে থামিয়ে দেয়। একটা চক্র নারী ও কন্যাশিশুদের লক্ষ্য করে এগুলো করে।

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ জানান, ৯৯৯–এ অনেক সাইবার অপরাধ–সংক্রান্ত অভিযোগ আসে। এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারের ওপর সাইবার–সম্পর্কিত অপরাধে সেবা দেওয়া হয়েছে, যেখানে ভুক্তভোগী ছিলেন নারী।

ভুয়া, গুজব ও মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নানা অপরাধ হচ্ছে এবং এর বেশি শিকার নারী ও শিশু উল্লেখ করে তবারক উল্লাহ বলেন, এ থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। তা না হলে পরিবার, ব্যক্তি ও সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

তবারক উল্লাহ বলেন, বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি কারা এই ব্যবহারকারী, তাদের চিহ্নিত করার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকার একটি ইউনিক আইডি তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেখানে এই আইডি ব্যবহার ছাড়া সে কোথাও ঢুকতে পারবে না। এ ধরনের ব্যবস্থা চালু হলে সহজেই অপরাধীকে শনাক্ত করা যায়। যাঁরা তদন্ত করেন, তাঁদেরও এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে।

তবারক উল্লাহ বলেন, এখন পর্যন্ত দেশে এমন কোনো উদাহরণ সৃষ্টি হয়নি যে সাইবার জগতে কোনো অপরাধের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক। তিনি বলেন, ‘যেসব গুজব অপপ্রচার ছড়ায়, তা আমরা অনেক ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করি না। সেটাকে গ্রহণ করে ফেলি। এ ক্ষেত্রে আরও সজাগ হওয়া জরুরি।’

প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে তানিয়া হক বলেন, বেশির ভাগ উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে শহরকেন্দ্রিক। গ্রামের মানুষ ও প্রান্তিক মানুষকে প্রযুক্তিগত শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষা ও জানাশোনার দিক থেকে নারীরা পিছিয়ে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, অনেকে জানেন না অনলাইনে হয়রানি বা সহিসংতায় কী করবে। সাইবার অপরাধ নারীদের আত্মবিশ্বাসে আঘাত করছে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের জেন্ডার অ্যান্ড ইনক্লুশন উপদেষ্টা শামিমা আক্তার শাম্মী নিজ প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী একটি জরিপের সূত্র ধরে বলেন, ৯১ শতাংশ নারী ও মেয়েরা বলছে, তারা প্রচণ্ড ভীতির মধ্যে থাকে। ডিজিটাল মাধ্যমে নারীদের অংশগ্রহণ কম। যারা ব্যবহার করছে, তারা কতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে বা পরিসর কতটা তা দেখতে হবে। যেসব মেয়ে অনলাইনে এগিয়ে যাচ্ছে, সে কখনো না কখনো সহিংসতার মুখে পড়ছে। কোনো মতামত দিতে গেলে নারী হিসেবে সে নানাভাবে হেয় হচ্ছে। এগুলো মেয়েদের পিছিয়ে রাখছে। অনেক সময় প্রতিবাদও করতে পারছে না। এ কারণে সে আবারও হয়রানির শিকার হচ্ছে।

নারীদের প্রযুক্তিগত শিক্ষার ওপর তাগিদ দিয়ে শামিমা আক্তার বলেন, এসব শিক্ষা স্কুল কলেজ থেকে দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি যে গ্রুপ হয়রানি করে, তাদেরও শেখাতে হবে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ফিল্টারিংয়ের ব্যবহার জানতে হবে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের যুব প্রতিনিধি নিঝুম তাঁর এক বন্ধু কীভাবে অনলাইনে সহিংসতার শিকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, সে কথা জানান। তিনি বলেন, কন্যা ও শিশুদের এটা জানাতে হবে তারা কীভাবে নিরাপদ থাকবে। সরকারের যেসব পদক্ষেপ আছে সেগুলোর কার্যক্রম আরও বাড়ানো দরকার।