অনলাইনে শিশুদের নিরাপত্তার প্রয়োজন বেশি

শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি মজার গেমস ও বিনোদনের নানা উপকরণ সহজে পাওয়া যায় অনলাইনে, যা শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঠিক একইভাবে শিশুদের অনুপযোগী বিভিন্ন কনটেন্টও রয়েছে অনলাইনে। রয়েছে সাইবার হামলার ঝুঁকিও। আর তাই নিরাপদ অনলাইন বিষয়ে শিশুদের সচেতন করার পাশাপাশি কৌশল শেখানো প্রয়োজন। তবে এ বিষয়ে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, ভয় দেখিয়ে নয়, শিশুদের নিরাপদে অনলাইনের উপকারী দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও ভূমিকা রয়েছে। শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রথম শিক্ষা পরিবারের সদস্য ও অভিভাবকদের কাছ থেকে হলে সবচেয়ে ভালো হয়। কারণ, সচেতন অভিভাবকেরা সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনে কোনো কাজ করা উচিত বা উচিত নয়, তা নিয়ে আলোচনা করতে পারে। শিশুদের শেখাতে হবে, কোনোভাবেই অনলাইনে অপরিচিত ব্যক্তির বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ গ্রহণ করা যাবে না। এমনকি অপরিচিত ব্যক্তিদের পাঠানো কোনো লিংক বা বিজ্ঞাপনেও ক্লিক করা যাবে না। এতে তাদের বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। কারণ, বেশির ভাগ সাইবার অপরাধীই ভুয়া পরিচয়ে অন্যের তথ্য চুরি করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে। শিশুরা মুঠোফোনের মাধ্যমে নিয়মিত ছবি পোস্ট করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত তথ্য বিনিময় করায় অপরাধীরা সেগুলো সংগ্রহ করে সহজেই বিপদে ফেলতে পারে। এ বিষয়ও জানান দিতে হবে শিশুদের। সন্তানকে ল্যাপটপ, স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ করে দিলেও ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নির্ধারণের পাশাপাশি ব্রাউজিং ইতিহাস পরীক্ষা করা উচিত।

শিশুদের অনলাইন সুরক্ষায় শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও দায়িত্ব রয়েছে। কারণ, আমরা যদি শিশুদের জন্য ডিজিটাল স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই, তাহলে তাদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের কৌশল শেখানোর মাধ্যমেই অনলাইনে নিরাপদ রাখতে হবে। এ জন্য ভার্চ্যুয়াল শ্রেণিকক্ষ, ভিডিও কলের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের সাইট ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রমের পাশাপাশি অনলাইনের ভালো দিক ও ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখার পদ্ধতি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে আলোচনা করতে পারে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনলাইনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত কর্মশালাও আয়োজন করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে শিশুরা সাইবার অপরাধের ক্ষতিকর দিক ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারার পাশাপাশি সেগুলো থেকে রক্ষার উপায়ও শিখবে। ফলে, ভয় না পেয়ে সহজে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে।

অভিভাবক ও শিশুদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রথম মুঠোফোন অপারেটর হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপদ ইন্টারনেটের ধারণা প্রচার করছে গ্রামীণফোন। শুধু তা-ই নয়, শিশুদের নির্ভয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিতে ২০১৪ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। দেশব্যাপী এ ক্যাম্পেইনের আওতায় এরই মধ্যে পাঁচ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবককে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করেছে দেশের বৃহত্তম মুঠোফোন অপারেটরটি। পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন করতে ‘নিরাপদ ইন্টারনেট’ গাইড বুকও প্রকাশ করেছে। শিশু অনলাইন সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ‘বি স্মার্ট, ইউজ হার্ট’ শীর্ষক প্রোগ্রামও পরিচালনা করছে তারা। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রায় ১০ লাখ শিশুকে সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়েছে গ্রামীণফোন ও ইউনিসেফ। অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সচেতন হলেই কেবল শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

অভিভাবকদের জন্য পরামর্শ

বয়স বুঝে প্রযুক্তি: শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তায় অবশ্যই শিশুবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। কারণ, ইউটিউবের থাকা সব ভিডিও শিশুদের উপযোগী নয়। ফলে শিশুদের জন্য সাধারণ ইউটিউবের বদলে ‘ইউটিউব কিডস’ সংস্করণটি ব্যবহার করতে হবে। প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সুবিধা থাকায় অভিভাবকেরা আগে থেকেই বয়স অনুয়ায়ী শিশুরা কোন ধরনের ভিডিও দেখতে পারবে, তা নির্বাচন করতে পারবে। শুধু তা-ই নয়, স্ক্রিন টাইম নির্ধারণের মাধ্যমে শিশুদের ইউটিউবে ভিডিও দেখার সময়ও বেঁধে দিতে হবে।

শিশুরা অনলাইনে কাদের সঙ্গে কথা বলছে তা জানুন: শিশুদের সঙ্গে গল্পের ছলে তাদের অনলাইন বন্ধুদের পরিচয় জানতে হবে। তাদের মধ্যে কী বিষয়ে বার্তা বিনিময় হয়, তা জানার পাশাপাশি চ্যাট ইতিহাসও পড়তে হবে। এমনকি তারা অনলাইনে কাদের সঙ্গে কোন ধরনের গেম খেলে, তাও নজর রাখতে হবে।

শিশুদের সঙ্গে অনলাইনে সময় কাটান: শিশুদের নিরাপত্তায় কৌশলে তাদের ডিভাইসেই ইন্টারনেট ব্যবহার করুন। তাদের ভালো লাগার বিষয়গুলো জানার পাশাপাশি তারা কোন কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছিল, তা দেখতে হবে। নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন পদ্ধতি গল্পের ছলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

ভালো অনলাইন অভ্যাসকে উৎসাহিত করুন: অনলাইনে বার্তা বিনিময়ের সময় কোন কথা বলা ঠিক হবে না, তা শিশুদের আগে থেকেই জানাতে হবে। শুধু তা–ই নয়, অডিও বা ভিডিও কলে কথা বলার সময় তাদের আচরণ এবং সঠিক পোশাক নির্বাচনেও দিকনির্দেশনা দিতে হবে। শিশুদের অডিও বা ভিডিও কলে কথা বলার সময় অন্যদের প্রতি ভালো আচরণ করার জন্যও উৎসাহ দিতে হবে।