অ্যাডোব ফ্ল্যাশ প্লেয়ারের বিদায়

১২ জানুয়ারি থেকে ফ্ল্যাশ প্লেয়ার সমর্থিত ভিডিও ও অ্যানিমেশন দেখাও বন্ধ হয়ে যাবে। ১৯৯৬ সালে ফ্ল্যাশ প্লেয়ার উন্মুক্ত করে অ্যাডোব কর্তৃপক্ষ। অনলাইনে গেম খেলার ও ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল এটি।

ফ্ল্যাশ প্লেয়ার
ছবি : অ্যাডোবের সৌজন্যে

ওয়েবে প্রথম যুগে ব্রাউজার প্লাগ-ইন হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় ছিল অ্যাডোব ফ্ল্যাশ। নতুন বছরে আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্ল্যাশ প্লেয়ারকে অবসরে পাঠাচ্ছে সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাডোব। ১৯৯৬ সালে ফ্ল্যাশ প্লেয়ার উন্মুক্ত করে অ্যাডোব কর্তৃপক্ষ।

অনলাইনে গেম খেলার ও ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল এটি। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

তবে এর বড় দুর্বলতা ছিল নিরাপত্তার বিষয়টি। এ ছাড়া স্মার্টফোনের যুগে ফ্ল্যাশ প্লেয়ারের যথাযথ রূপান্তর ঘটেনি।

এখন থেকে অ্যাডোব কর্তৃপক্ষ ফ্ল্যাশ প্লেয়ারের জন্য আর কোনো নিরাপত্তা প্রোগ্রাম হালনাগাদ করবে না। ব্যবহারকারীদের দ্রুত ফ্ল্যাশ প্লেয়ার আনইনস্টল করার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

১২ জানুয়ারি থেকে ফ্ল্যাশ প্লেয়ার সমর্থিত ভিডিও ও অ্যানিমেশন দেখাও বন্ধ হয়ে যাবে।

ফ্ল্যাশ প্লেয়ার যখন প্রথম উন্মুক্ত হয় তখন অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ডায়াল-আপ সংযোগ ব্যবহার করতেন। আধুনিক মানের ইন্টারনেটের তুলনায় তখনকার ইন্টারনেটের গতি ছিল অনেক কম। কিন্তু ওই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওয়েব ডিজাইনার ও অ্যানিমেশন নির্মাতারা ফ্ল্যাশের উপযোগী যে কনটেন্ট তৈরি করতেন, তা দ্রুত ডাউনলোড করা সম্ভব ছিল।

২০০৯ সালে অ্যাডোব কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ফ্ল্যাশ প্লেয়ার ইন্টারনেট সংযুক্ত ৯৯ শতাংশ ডেস্কটপ পিসিতেই ইনস্টল করা রয়েছে।

কিন্তু এরপর থেকে বিশ্ব মোবাইল ডিভাইসের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অ্যাডোব এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি।

২০১০ সালে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী স্টিভ জবস এক উন্মুক্ত চিঠি লিখে আইফোন ও আইপ্যাডে ফ্ল্যাশ না চালানোর ঘোষণা দেন।

তাঁর যুক্তি ছিল, টাচ স্ক্রিনে ফ্ল্যাশ ব্যবহার কষ্টকর, এ ছাড়া এটি নির্ভরযোগ্য নয়। এতে নিরাপত্তা হুমকির পাশাপাশি দ্রুত ব্যাটারির চার্জ শেষ করে। তিনি এর পরিবর্তে এইচটিএমএল ৫ ও অন্যান্য উন্মুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলেন।

অ্যাডোবের সাবেক নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেভিড মেনডেলস বলেন, আমরা লো এন্ডের ফোনের জন্য ফ্ল্যাশ লাইট তৈরি করেছিলাম। জাপানের মতো দেশে তা সফল হয়েছিল। তবে তা পুরো ডেস্কটপের উপযোগী ছিল না। আইফোন যখন বাজারে আসে ফ্ল্যাশ তখন পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না।

১২ জানুয়ারি থেকে যেহেতু ফ্ল্যাশ প্লেয়ারে কনটেন্ট দেখা বন্ধ হয়ে যাবে, তাই অনেক অ্যানিমেশন, গেম ও ইন্টার–অ্যাকটিভ ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে গেম কোম্পানি জিংগা তাদের ফার্মভিল ভিডিও গেম বন্ধ করে দিয়েছে। গেমটি ফ্ল্যাশ প্লেয়ারনির্ভর ছিল।

মেনডেলস বলেন, ‘আমি মনে করি অ্যাপল নিজস্ব ইকোসিস্টেম তৈরি করতেই ফ্ল্যাশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।’

অ্যাডোব পরে স্মার্টফোনের জন্য ফ্ল্যাশ প্লেয়ার তৈরি করেছিল। কিন্তু ইন্টারনেট তত দিনে আরও এগিয়ে গিয়েছিল। ফেসবুক, নেটফ্লিক্স, ইউটিউবের মতো বড় ব্র্যান্ডগুলো ফ্ল্যাশ ছাড়াই ভিডিও স্ট্রিমিং করে সফলতা পেতে শুরু করে। তাই ২০১১ সালে অ্যাডোব মোবাইল ডিভাইসের জন্য ফ্ল্যাশ তৈরির কাজ বন্ধ করে দেয়। তবে ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য ফ্ল্যাশের কাজ চালিয়ে যায় তারা। তবে এতে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় নিরাপত্তার বিষয়টি।

২০১৫ সালে অ্যাপল তাদের সাফারি ব্রাউজার থেকে এ প্লাগ ইন বন্ধ করে দেয়। গুগল ক্রোম ব্রাউজারেও ফ্ল্যাশের কনটেন্ট বন্ধ করা শুরু হয়ে যায়।

২০১৭ সালে এসে অ্যাডোব ঘোষণা দেয়, ২০২০ সালে তারা ফ্ল্যাশকে অবসরে পাঠাবে। তারা বলে, এইচটিএমএল ৫ যথেষ্ট পরিণত হয়েছে। এটি এখন ফ্ল্যাশের বিকল্প হিসেবে কাজ করার উপযোগী।

১২ জানুয়ারি থেকে যেহেতু ফ্ল্যাশ প্লেয়ারে কনটেন্ট দেখা বন্ধ হয়ে যাবে, তাই অনেক অ্যানিমেশন, গেম ও ইন্টার–অ্যাকটিভ ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে গেম কোম্পানি জিংগা তাদের ফার্মভিল ভিডিও গেম বন্ধ করে দিয়েছে। গেমটি ফ্ল্যাশ প্লেয়ারনির্ভর ছিল।

অ্যাডোব কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে উইন্ডোজ ও ম্যাক থেকে ফ্ল্যাশ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। অ্যাডোব সতর্ক করে লিখেছে, অ্যাডোব আনইনস্টল করলে সিস্টেম নিরাপদ থাকবে। এরপর থেকে ফ্ল্যাশ প্লেয়ারে আর কোনো হালনাগাদ পাওয়া যাবে না।