অ্যাপলের ঘড়ি কেন ‘আইওয়াচ’ নয়

আইফোন...

আইপ্যাড...

আইপড...

আইম্যাক...

আইওয়াচ...না, আইওয়াচ নামে অ্যাপলের কোনো পণ্য নেই। অ্যাপলের স্মার্টঘড়ির নাম অ্যাপল ওয়াচ।

আইফোন, আইপ্যাড, আইপড, আইম্যাক হলেও অ্যাপলের স্মার্টঘড়ির নাম অ্যাপল ওয়াচ, আইওয়াচ নয়

অ্যাপলের অন্যান্য পণ্য, যেমন আইফোন, আইপ্যাড, আইপড কিংবা আইম্যাকের কথা বিবেচনায় নিলে ‘আইওয়াচ’ হওয়াই যুক্তিযুক্ত ছিল। সবাই ধরেও নিয়েছিল তা-ই। বিশেষ করে অ্যাপল স্মার্টঘড়ি তৈরি করছে, বাতাসে এমন উড়ো খবর ভেসে আসতে শুরু করলে সেটির নাম যে আইওয়াচ (iWatch) হবে, তাতে কারও মনে কোনো সন্দেহ ছিল না।

আর তাই ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাজারে ‘অ্যাপল ওয়াচ’ ছাড়ার ঘোষণা দিলে সবাই খুব অবাক হয়েছিল।

অ্যাপল আইওয়াচ নামটি ব্যবহার করতে পারেনি কারণ ওএমজি ইলেকট্রনিকস নামের এক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে শব্দটি ট্রেডমার্ক হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করে। সে সময় স্মার্টঘড়ি তৈরির জন্য ক্রাউডফান্ডিং ওয়েবসাইট ইনডিগোগোতে তহবিল সংগ্রহ শুরু করে তারা। তবে এক লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নামলেও কেবল ১ হাজার ৪৩৪ ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছিল ওএমজি। স্মার্টঘড়ি তৈরি না করলেও ট্রেডমার্কটি থেকে যায় তাদের নামে।

নানা রঙে অ্যাপল ওয়াচ
অ্যাপল

এদিকে ২০০৭ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এমজেড বার্গার অ্যান্ড কোম্পানি ‘আইওয়াচ’ শব্দটি ট্রেডমার্ক করার চেষ্টা করে। তবে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সুইজারল্যান্ডের ঘড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সোয়াচ। আইওয়াচ নামটি তাদের আইসোয়াচ (iSwatch) ঘড়ির ক্রেতাদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দেবে, এমন যুক্তি দেখিয়ে সফলও হয়।

আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২০০৮ সাল থেকে আইওয়াচ ব্যবহারের স্বত্ব ছিল প্রোবেন্ডি লিমিটেড নামের সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দখলে। ওই অঞ্চলে কেউ যদি ব্র্যান্ড হিসেবে আইওয়াচ ব্যবহার করে তবে যেকোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিতে তারা প্রস্তুত বলে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে সরাসরি হুমকি দেওয়া হয়।

আর চীনে নয়টি প্রতিষ্ঠানের ‘আইওয়াচ’ ট্রেডমার্ক ছিল। ‘আইওয়াচিং’ শব্দটিও নিবন্ধিত করে আরেক চীনা প্রতিষ্ঠান।

অ্যাপল ওয়াচে হৃৎস্পন্দনের হার মাপা যায়
অ্যাপল

জাপান, মেক্সিকো, তাইওয়ান ও রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে ‘আইওয়াচ’ ব্র্যান্ড ব্যবহারের স্বত্ব পেলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনে আগে থেকেই তাদের নিজস্ব ‘আইওয়াচ’ ছিল। এতগুলো দেশে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ট্রেডমার্ক ব্যবহারের স্বত্ব কেনা অ্যাপলের জন্য একটু বেশিই খরুচে ব্যাপার হয়ে যেত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়তো অসম্ভবের পর্যায়ে চলে যেত। তাই সে পথে না হেঁটে সরাসরি ‘অ্যাপল ওয়াচ’ নামটি গ্রহণ করে অ্যাপল।

অ্যাপল ওয়াচের আগেও বেশ কয়েকবার পণ্যের নাম নির্বাচনে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। যেমন ‘আইফোন’ শব্দটি ব্যবহারের জন্য মার্কিন প্রতিষ্ঠান সিসকোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়েছে। আর আইপ্যাডের জন্য ভুল করে কেবল তাইওয়ানে নিবন্ধিত হয়েছিল অ্যাপল। চীনের মূল ভূখণ্ডে নামটি ব্যবহারের জন্য প্রোভিউ নামের প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পরিশোধ করতে হয় অ্যাপলকে।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার