অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করেছে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা

ফাইল ছবি: রয়টার্স

ব্রিটিশ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার সিস্টেম হ্যাক করার চেষ্টা করেছে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা। হ্যাকাররা ওই প্রতিষ্ঠানের বেশ কজন কর্মীর তথ্য হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল, যাঁদের মধ্যে অনেকে কোভিড-১৯-এর ওপর গবেষণা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন ব্যক্তির বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য দিয়েছে। হ্যাকাররা লিংকডইন ও হোয়াটসঅ্যাপে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কর্মীদের ভুয়া চাকরির প্রস্তাব দিয়ে বার্তা পাঠায়। এরপর তারা প্রস্তাবিত চাকরিতে কর্মীর কাজের ধরন বোঝায়—এমন কিছু ফাইল পাঠায়, যেসব ফাইলে মূলত ভুক্তভোগীর কম্পিউটার হ্যাক করার কোড ডিজাইন করা ছিল।

রয়টার্সকে এসব তথ্য দেওয়া ব্যক্তিদের একজন বলেন, হ্যাকাররা বেশ কয়েকজন কর্মীর কম্পিউটার হ্যাক করার চেষ্টা করেছিল, যাঁদের অনেকে কোভিড-১৯ নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা হ্যাকিংয়ে সফল হয়নি।

জেনেভায় জাতিসংঘের উত্তর কোরিয়ার মিশনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চায় রয়টার্স। কিন্তু রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি তারা। এর আগে পিয়ংইয়ংয়ের পক্ষ থেকে সাইবার অ্যাটাকের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছিল; যদিও বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার কোনো ব্যবস্থা তাদের নেই।

এদিকে করোনার টিকা তৈরিতে অনেকটাই এগিয়ে থাকা ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকাও হ্যাকিংয়ের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে রয়টার্স বলছে, হ্যাকিংয়ে ব্যবহৃত উপাদান ও পন্থা দেখে হ্যাকাররা উত্তর কোরিয়ার বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র ও সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।

এ ধরনের হ্যাকাররা আগে প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম লক্ষ্য করে হামলা চালাত। সম্প্রতি কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা তাদের হামলার মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এসব সাইবার অ্যাটাক নিয়ে অনুসন্ধান করছেন—এমন তিনজনের বরাত দিয়ে রয়টার্স এ তথ্য জানায়।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে স্বাস্থ্যকর্মী, টিকা তৈরির সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানী ও ওষুধ তৈরিকারকদের ওপর সাইবার হামলা ব্যাপক হারে বেড়েছে। মহামারি নিয়ে নতুন নতুন গবেষণার ফল ও নানা তথ্য পেতে উঠেপড়ে লেগেছে হ্যাকাররা। এসব সাইবার হামলা বিভিন্ন হ্যাকিং গ্রুপ যেমন করছে, এর পেছনে রাষ্ট্রীয় মদদও রয়েছে। পশ্চিমা দেশের অনেক কর্মকর্তা বলছেন, হ্যাক হওয়া এসব তথ্য চড়া দামে বিক্রি হয়।

প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট বলছে, এ মাসে তারা দেখতে পায়, উত্তর কোরিয়ার দুটি হ্যাকার দল বিভিন্ন দেশের করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিংয়ের চেষ্টা চালায়। তবে ওই সব প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করেনি মাইক্রোসফট।

ইরান, চীন ও রাশিয়ার হ্যাকাররা বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি সামনের সারির ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটও হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করেছিল। রয়টার্স জানায়, এ বিষয়ে তারা প্রতিবেদনও করেছিল; যদিও তেহরান, বেইজিং ও মস্কো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে অ্যাস্ট্রাজেনেকায় হ্যাকারদের অনেকে রাশিয়ায় রেজিস্ট্রার হওয়া ই-মেইল ব্যবহার করেছে বলে রয়টার্স জানায়।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবীরা বিশ্বের বড় বড় হ্যাকিংয়ের জন্য উত্তর কোরিয়াকে দায়ী করেছেন। ২০১৪ সালে সনি পিকচারের ই-মেইল হ্যাকের ঘটনা এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গায়েবের পেছনে উত্তর কোরিয়ার দায়ী বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।