ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যাবে ফেসবুক?

তথ্য স্থানান্তর নিয়ে চাপের মুখে ফেসবুক
ছবি: রয়টার্স

ফেসবুক হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে আইরিশ তথ্য সুরক্ষা কমিশনার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তারা ইউরোপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

গত জুলাই মাসে ইউরোপীয় আদালতের যুগান্তকারী এক রায়ে বলা হয়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি ঠেকাতে ফেসবুকের সুরক্ষাব্যবস্থা অপর্যাপ্ত ছিল। এ পরিস্থিতিতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে ফেসবুক।

ডাবলিনের একটি আদালতকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ করা হলে তারা ইউরোপে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে অক্ষম হবে।

ফেসবুকের পক্ষ থেকে অবশ্য তাদের আইনজীবীর দেওয়া লিখিত আবেদনে একে কোনো হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। একটি বিবৃতিতে যুক্তি দিয়ে বলা হয়েছে, এটা বাস্তবতার প্রতিফলন।

ফেসবুকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইউরোপ থেকে ফেসবুক সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে না।

গার্ডিয়ান পত্রিকা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ‘প্রিজম’ নামের একটি কর্মসূচির তথ্য প্রকাশ করে। ওই কর্মসূচির অধীনে মার্কিন গোয়েন্দারা গুগল, ফেসবুক, অ্যাপলসহ মার্কিন ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরাসরি তথ্য নেয়।

দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, আয়ারল্যান্ডের হাইকোর্টে যেসব আইনি নথি জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে।

নথিতে ফেসবুকসহ অন্যান্য ব্যবসা, সংস্থা ও সেবা যারা ব্যবসা পরিচালনা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্য নেওয়ার ওপর নির্ভর করে, সে কথা বলা হয়েছে। ফেসবুক বলছে, যদি নিরাপদ, সুরক্ষিত ও আইনি প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক তথ্য স্থানান্তরে সমস্যা হয়, তবে তা অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে এবং ইইউতে তথ্যনির্ভর ব্যবসার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে। এ ছাড়া এখন ইইউ কোভিড-১৯ থেকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগের চর্চাগুলো নিয়ে প্রায় এক দশক ধরে চলতে থাকা আইনি লড়াইয়ে নতুন মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে একে। ২০১১ সালে অস্ট্রিয়ার আইনজীবী ম্যাক্স শ্রিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর বিষয়ে আইরিশ তথ্য সুরক্ষা কমিশনারের কাছে প্রাইভেসি নিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। ইউরোপে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করেন আইরিশ তথ্য সুরক্ষা কমিশনার। দুই বছর পরেই ওই অভিযোগ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন

ওই সময় যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ‘প্রিজম’ নামের একটি কর্মসূচির তথ্য প্রকাশ করে। ওই কর্মসূচির অধীনে মার্কিন গোয়েন্দারা গুগল, ফেসবুক, অ্যাপলসহ মার্কিন ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরাসরি তথ্য নেয়। আইনজীবী শ্রিম আরও প্রাইভেসি নিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস ২০১৫ সালে প্রিজম কর্মসূচির প্রমাণ পান।

ওই সময়ে ইউরোপের নাগরিকদের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার বিষয়টিও নজরে আসে। এরপর ইইউ তথ্য স্থানান্তর বিষয়ে প্রাইভেসি সিল্ড নামের একটি আইনি ব্যবস্থা নেয়। গত জুলাই মাসে ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে আদালত ইউরোপের নাগরিকদের তথ্য স্থানান্তরের বিষয়টি আবার সীমিত করতে বলেছেন।

চলতি মাস থেকেই আইরিশ তথ্য সুরক্ষা কমিশনার আদালতের রায়ের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কমিশনারের পক্ষ থেকে প্রাথমিক নির্দেশে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোকে ইউরোপের বাইরে তথ্য স্থানান্তর বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

এর জবাবে ফেসবুকের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান নিক ক্লেগ একটি ব্লগ পোস্ট করেছেন। তাতে তাঁর যুক্তি, আন্তর্জাতিক তথ্য স্থানান্তর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অবদান রাখে এবং দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক পরিষেবাকে সমর্থন করে। বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে জার্মানির ছোট স্টার্টআপগুলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্লাউড সেবা পাবে না। স্পেনের কোনো কোম্পানি একাধিক স্থানে ব্যবসা করতে পারবে না। ফ্রান্সের কোনো কোম্পানি মরক্কোতে কলসেন্টার চালাতে পারবে না।

ক্লেগ আরও বলেন, ‘আমরা বৈশ্বিক আইন সমর্থন করি, যা বিশ্বজুড়ে তথ্যের ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে।’