ইন্টারনেটে আছে ভালো-মন্দ দুটোই, সঠিকটি বেছে নিতে হবে আমাদেরই  

রাজধানী নিবাসী নবম শ্রেণির অনন্য অনুভা জয়িতা নিজের মুঠোফোনেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ই-মেইলে সে অ্যাকটিভ থাকে। অনন্য জানায়, বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটিং, পড়াশোনা, ভিডিও, মুভি দেখা, বই পড়ার কাজে সে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ইন্টারনেটের ভালোমন্দ দিক নিয়ে মায়ের সঙ্গে তার আলোচনা হয়। এই কিশোরী জানায়, সে বিষয়গুলোতে অবগত।

অনন্যর মা শাহিনুর আখতার নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইবার জগতের ভালো-মন্দ নিয়ে আমি বাচ্চাদের সঙ্গে আলোচনা করি।  কখনোই খুব কড়া হইনি। কারণ এই বয়সটা অত্যন্ত আবেগের। আমি খুব নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে আমার বাচ্চা যদি কোনো বিপদে পড়ে, তখন আমার সঙ্গে শেয়ার করতে চাইবে না।’

তবে শাহিনুর আখতার জানান, তাঁর পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের ক্ষেত্রে তিনি সময় ঠিক করে দেন ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে। তিনি আরও বলেন, ইন্টারনেট দেখে তাঁর মেয়েরা অনেক কিছু শিখেছেও। বড় মেয়ে গ্লাস পেইন্টিং করেছে। ছোটজন প্রায়ই এটা-সেটা রান্না করে খাওয়ায় সবাইকে।  

ষষ্ঠ শ্রেণির মাহির আহনাফ খানের ফোন নেই তবে ট্যাব আছে। তিন বছর আগে থেকে ইন্টারনেটে যুক্ত। আগে শুধু ইউটিউবে ভিডিও দেখা হতো। এখন ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও ই-মেইলও ব্যবহার করে সে। ইন্টারনেটে অনেক ক্ষতিকর বিষয় আছে, যা নিয়ে সে সচেতন বলেও জানায়।

মাহিরের মা জাকিয়া আখতার বলেন, সন্তানদের ইন্টারনেটের ভালো-মন্দ বিষয়ে তিনি জানান। কখনো দরজা বন্ধ করে রাখতে দেন না। কী করে না করে, তা তাঁর জানাশোনার মধ্যেই আছে।

সাইবার টিনস নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন সাদাত রহমান। তাঁর সংগঠনে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ কেস পেয়েছেন। এর মধ্য আড়াই শর মতো সমাধান করতে পেরেছেন।

সাদাত রহমান বলেন, তাঁদের কাছে মেয়েরা বেশি সমস্যা নিয়ে আসে। বেশির ভাগই ব্ল্যাকমেলিং। ছেলেদের ক্ষেত্রে গেম খেলতে গিয়ে টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলায় পড়া কেস বেশি। উচ্চমাধ্যমিক থেকে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বেশি আসে।

সমস্যাগুলো প্রথমে নিজেরা সমাধানের চেষ্টা করে সাদাতের সাইবার টিনস। আর যদি সেটা অপরাধের পর্যায়ে চলে যায়, তখন পুলিশের দ্বারস্থ হন তাঁরা।

শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা বিষয়ে সাদাত প্রথম আলোকে বলেন, শিশুদের হাতে যখন ইন্টারনেট তুলে দেওয়া হয়, তখন তাদের ইন্টারনেটের ভালো-মন্দ দিকগুলো বোঝাতে হবে। সচেতন না হওয়া অনিরাপত্তার প্রথম কারণ। মফস্বলের শিশু-কিশোরেরা এ জগৎ সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন নয়। ওরা যা দেখে, সেটাকেই সত্যি বলে ধরে নেয়। এ জন্য পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ওদের পরামর্শ দেওয়া উচিত। ইন্টারনেটের সবকিছু যাচাই-বাছাই করার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, লোভ করা যাবে না। কোনো অফার বা কিছু শেয়ার করলে কিছু পাওয়া যাবে, এসবের ফাঁদে পড়া যাবে না।

সাদাত আরও বলেন, কেউ কোনো অপরাধের শিকার হলে পরিবার বা এই জগৎ সম্পর্কে জানে, এমন বিশ্বাসযোগ্য মানুষকে জানাতে হবে। এ ছাড়া সরকারের যেসব হেল্পলাইন আছে, তার সহায়তা নিতে হবে।

আজ মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস। এই দিবসের অঙ্গীকার হোক ‘শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেটের সুবিধা’। শিশুদের জন্য অনলাইনের নিরাপত্তাবিষয়ক সচেতনতার জন্য জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষাক্রমে আলাদা অধ্যায় ও গ্রন্থ যুক্ত হওয়া দরকার।

তা ছাড়া, শিশুদের এবং অভিভাবকদের ঠিক লাইনে অনলাইনে রাখতে অর্থাৎ সঠিক নিয়মে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার শেখানোর উদ্দেশ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণফোন, টেলিনর গ্রুপ ও ইউনিসেফ। চাইল্ড অনলাইন সেফটি কার্যক্রমের আওতায় ডিজিওয়ার্ল্ড (https://www.telenor.com/digiworld-en/)- এ কুইজ খেলার মাধ্যমে শেখা যাবে কী করে অনলাইনে নিরাপদে থাকা যায়। বিভিন্ন বয়সক্রম অনুযায়ী খেলাটি সফলভাবে শেষ করলে অংশগ্রহণকারী পাবে একটি অনলাইন সেফটি সার্টিফিকেট। বিজ্ঞাপন