কম্পিউটার রিস্টার্ট করলে কি আসলেই সমস্যার সমাধান মেলে

ছোট্ট একটা পাঠক জরিপ করা যাক। বিষয় হলো, ‘রিস্টার্ট করে দেখেছেন’ আমাদের পাঠক শুনেছেন কি না। এমন অদ্ভুত জরিপের কারণ হলো, কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের যেকোনো সমস্যায় শুরুতেই রিস্টার্ট করে দেখতে বলা হয়। সে প্রশ্ন অযথাই করা হয় নাকি যুক্তিসংগত কারণ আছে, তা-ই আজ আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করব।

রিস্টার্ট করার কথা এই ছোট্ট জীবনে এতবার শুনেছি যে কিছু হলে এখন নিজে থেকেই রিস্টার্ট করে দেখি। সমাধান না হলে তারপর মেরামতকারীর শরণাপন্ন হওয়ার পালা। কেবল কম্পিউটার নয়, স্মার্টফোন, টিভি, ওয়াই-ফাই রাউটার ও অন্যান্য গ্যাজেটও এই রিস্টার্টের হাত থেকে রেহাই পায়নি। তবে লক্ষ করেছেন হয়তো, রিস্টার্ট করলে আপনাআপনি অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সেটার কারণও আছে।

রিস্টার্ট কখন সব রোগের মহৌষধ

রিস্টার্ট মানে বন্ধ করে পুনরায় চালু করা। একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে ফেললাম। চালুর পর কম্পিউটার যে অবস্থায় থাকে, রিস্টার্ট করলেও তা-ই।

মনে করুন, কম্পিউটারে আপনি একসঙ্গে অনেক ‘ভারী’ সফটওয়্যার ব্যবহার করেছেন। অথচ আপনার কম্পিউটারের প্রসেসিং ক্ষমতা এত নয় যে একসঙ্গে এতগুলো প্রোগ্রামের নির্দেশ নির্বাহ করতে পারবে। এতে কম্পিউটারের গতি কমে যায়। পাশাপাশি এই প্রোগ্রামগুলো চলার সময় অনেক ফাইল তৈরি করে। গতি কমার সেটাও কারণ হতে পারে। বিশেষ করে ক্রোমের মতো ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহারের সময় সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়।

দেখবেন কোনো কোনো ওয়েবসাইট দেখার সময় হঠাৎ সবকিছু আটকে যায়। নড়েও না, চড়েও না। এর দুটো কারণ হতে পারে। প্রথমত, দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের ফলে অনেক ফাইল কিংবা কোড জমা হয়েছিল র‍্যামে। দ্বিতীয়ত, কোনো ওয়েবসাইটে এমন কোড আছে, যা চালাতে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কম্পিউটার। সে সময় ব্রাউজার বন্ধ করে চালু করলে দেখবেন কাজের গতি ফিরে পাবে। কারণ, এতে র‍্যাম ফ্রি হওয়ার সুযোগ পায়।

মনে করুন, আপনার কম্পিউটারে চার গিগাবাইট র‍্যাম। তবে যতগুলো প্রোগ্রাম একসঙ্গে খুলেছেন, তা চালাতে চার গিগাবাইটের বেশি র‍্যামের প্রয়োজন। স্বাভাবিক কারণেই এতে কম্পিউটারের গতি কমে যাবে। কোনো কমান্ড দিলে আটকে যাবে। গরম হয়ে যেতে পারে। ফাইল ক্র্যাশ করতে পারে। চালু থাকা কোনো প্রোগ্রাম হঠাৎ বন্ধ হওয়াও অসম্ভব নয়। র‍্যামের মতো কম্পিউটারের প্রসেসরের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য। অর্থাৎ কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার বা যন্ত্রাংশগুলো যখন কর্মক্ষমতার সীমায় পৌঁছে যায়, ঝামেলা দেখা দেয় তখনই।

কম্পিউটার রিস্টার্ট করলে এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি মেলে। কারণ, তখন সবকিছু ঝকঝকে-তকতকে থাকে। র‍্যামে অতিরিক্ত ফাইল থাকে না। প্রসেসরে কমান্ড নির্বাহ করার চাপ থাকে না। তা ছাড়া হার্ডওয়্যার বা ড্রাইভার ফাইলে ত্রুটি দেখা দিলেও রিস্টার্টে অনেক সময় সমস্যার সমাধান মেলে। সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস কিছু পূর্বনির্ধারিত নির্দেশনা মেনে চলে বলে একই কথা স্মার্টফোন, ডিজিটাল ক্যামেরা, রাউটারের বেলাতেও খাটে।

রিস্টার্টে অনেক সমস্যার সমাধান হয় ঠিক। আবার কখনো বাড়তি চাপ সামলাতে কম্পিউটার নিজে নিজেই রিস্টার্ট হতে পারে। তবে বারবার রিস্টার্ট হলে ধরে নিতে হবে অন্য কোনো সমস্যা আছে। হয়তো মানানসই ড্রাইভার পাচ্ছে না। কিংবা র‍্যাম পর্যাপ্ত নয়। অথবা সমস্যা ভিন্ন কোথাও। সে ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ মতামত নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।