করোনা মারার ফাঁদ

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা সম্প্রতি করোনাভাইরাস আটকে সঙ্গে সঙ্গে তা মেরে ফেলার জন্য বিশেষ এয়ার ফিল্টারের নকশা করেছেন। তাঁরা দাবি করছেন, নতুন করোনাভাইরাসকে আটকে ধরে তা দ্রুত নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হবে এ ফাঁদ। তাঁদের এই উদ্ভাবন স্কুল, হাসপাতাল, স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র, বিমানবন্দরের মতো জায়গায় করোনার বিস্তার ঠেকাতে ব্যবহার করা যাবে। বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের ডেকান ক্রনিকেলের প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।


এই গবেষণা–বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে 'মেটারিয়ালস টুডে ফিজিকস' সাময়িকীতে। নিবন্ধে গবেষকেরা দাবি করেছেন, তাঁরা পরীক্ষাগারে যন্ত্রটি ব্যবহার করে নভেল করোনাভাইরাস সার্স-কোভ-২ মেরে ফেলার ক্ষেত্রে ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশ সফল। তাদের তৈরি ফিল্টার দিয়ে একবার ব্যবহারেই এ সফলতা মিলেছে।


ডিভাইসটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে নিকেল ফোম ও ইলেকট্রিক্যাল কনডাকটর। নিকেল ফোম ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত করলে করোনাভাইরাস ছাড়াও অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত দমন করা যায়।
নিবন্ধের সহযোগী লেখক যুক্তরাষ্ট্রের হিউসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জিফেং রেন বলেন, তাঁদের তৈরি ফিল্টারটি বিমানবন্দর ছাড়াও উড়োজাহাজ, অফিস ভবন, স্কুল, জাহাজ করোনার বিস্তার ঠেকাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর সক্ষমতা বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাস বিস্তার নিয়ন্ত্রণে দারুণ কাজে আসতে পারে।


গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা এয়ার ফিল্টারের ডেস্কটপ মডেল তৈরিতে কাজ করছেন। এ ডিভাইসটি অফিস ভবনে বাতাস পরিশুদ্ধ করতে কাজে লাগবে। এতে অফিসের কর্মীদের চারপাশের বাতাস দ্রুত পরিশুদ্ধ করা যাবে।


বিজ্ঞানীদের মতে, করোনাভাইরাস বাতাসে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে বলে একটি ফিল্টার ব্যবহার করে তা দ্রুত সরিয়ে ফেলা বাস্তব পরিকল্পনার সঙ্গেও মিলে যায়। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে তাই বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকানো জরুরি।


বাতাসের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর কথা স্বীকার করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি গত মঙ্গলবার এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
শ্বাসতন্ত্রের অসুখগুলো কীভাবে ছড়ায়, তার একটি গাইডলাইন রয়েছে স্বাস্থ্য সংস্থার। করোনার সংক্রমণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ একধরনের শ্বাসতন্ত্রের অসুখ। এই কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, এটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই ওই গাইডলাইন আপডেট করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তাঁরা। এরপর এমন তথ্য মেনে নিল ডব্লিউএইচও।


নতুন এই তথ্য নিয়ে গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রোগতত্ত্ববিদ মারিয়া ভ্যান কারখোভ। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার বাতাসের মাধ্যমে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া বাতাসে মিলিয়ে যায়, এমন দ্রব্যের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।


মার্কিন গবেষকেরা দাবি করেছেন, করোনা ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ওপরে টিকতে পারেনা। তাই ফিল্টারের তাপমাত্রা ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস করা হলে করোনার টেকার সম্ভাবনা কম। এ ক্ষেত্রে নিকেল ফোম ব্যবহারে বিশেষ সুবিধা হচ্ছে, এর তাপমাত্রা অতিরিক্ত বাড়ে না বলে এটি নিরাপদ হতে পারে।


ইউএইচ কলেজ অব মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ফয়সাল চীমা বলেন, তাঁদের এ উদ্ভাবনটি অভ্যন্তরীণ পরিবেশে সুরক্ষা দিতে প্রথম কোনো সুরক্ষা সামগ্রী। বর্তমান মহামারি এবং ভবিষ্যতে যেকোনো বায়ুবাহিত হুমকির বিরুদ্ধে এটি লড়াই করতে পারবে।
গবেষকেরা ইতিমধ্যে তাঁদের ডিভাইসটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানোর জন্য ডাক পেতে শুরু করেছেন।