কাজের চাপে শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ পান না আমাজনের কর্মীরা

আমাজনের পণ্য সরবরাহের কর্মীরা কাজের চাপে শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ পর্যন্ত পান না বলে অভিযোগ উঠেছে
রয়টার্স

কর্মরত অবস্থায় আমাজনের পণ্য সরবরাহের কর্মীরা (ডেলিভারি ম্যান) শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ খুব কম পান। বাধ্য হয়ে তাঁরা কাজ সারেন বোতল কিংবা ডেলিভারি ব্যাগে। এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত বৃহস্পতিবার তা অস্বীকার করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি। তবে ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ নথিতে দেখা যায়, অন্তত কয়েক মাস ধরেই ব্যাপারটি জানত আমাজন। তবে সমাধানে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

আমাজনের কর্মীদের কাছে পাওয়া এক নথিতে সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্ট দেখিয়েছে, কর্মরত অবস্থায় বোতলে মূত্র এবং ব্যাগে মলত্যাগের জন্য কর্মীদের তিরস্কার করে ২০২০ সালের মে মাসে ই-মেইলে পাঠানো হয়।

সে ই-মেইলে লেখা ছিল, ‘ডেলিভারি স্টেশনে এক চালকের ফিরিয়ে দেওয়া ব্যাগে মানুষের মল খুঁজে পান এক সহযোগী। গত দুই মাসে এটা নিয়ে এমন তৃতীয় ঘটনা। আমরা বুঝি যে পথে থাকার সময় চালকদের মাঝেমধ্যে জরুরি অবস্থায় পড়তে হয়, বিশেষ করে এই করোনাকালে। কাছাকাছি কোথাও শৌচাগার খুঁজে পাওয়া তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তা হোক, তবু তাঁরা কখনো কোনোভাবেই ডেলিভারি স্টেশনে মলসহ ব্যাগ ফিরিয়ে দিতে পারেন না।’

ই-মেইল বার্তায় আরও লেখা ছিল, ইদানীং অস্বাস্থ্যকর আবর্জনাসহ ব্যাগ ফিরিয়ে দেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে, যেমন ব্যবহৃত মাস্ক, দস্তানা, বোতলভর্তি মূত্র।

দ্য ইন্টারসেপ্টকে একাধিক আমাজনের কর্মী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, অভ্যন্তরীণ আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে অনেকবার কথা হয়েছে। সাবেক এক কর্মী সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, চালকেরা বাধ্য হয়ে এমন কাজ করেন, অন্যথায় পণ্য সরবরাহে ব্যর্থতার জন্য তাঁরা কাজ হারাবেন।

আমাজনের কর্মীরা এর আগেও অমানবিক কর্মঘণ্টা নিয়ে মুখ খুলেছেন। এর আগে দ্য গার্ডিয়ানকে আমাজনের কর্মীরা বলেছেন, দিনে পর্যাপ্ত সংখ্যক পণ্য পৌঁছে না দিতে পারার ভয়ে কর্মীরা পানির বোতলে কাজ সারেন। রেডিটেও অনেক বার এমন মন্তব্য করেছেন আমাজনের চালকেরা। বিশেষ করে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর ই-কমার্স সেবাটিতে পণ্য ফরমাশের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এমনটা বেশি হয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমাজনের কর্মীরা কর্মপরিবেশ উন্নয়নের জন্য বিক্ষোভে অংশ নেন। ছবিটি ইতালির
রয়টার্স

গত বছরের কেবল এক প্রান্তিকে আমাজনের বিক্রির পরিমাণ ৩৭ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। আর করোনাকালে প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোসের মোট সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার।

কর্মীদের প্রতি আমাজনের মনোভাব নিয়ে এর আগেও অনেক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এ সপ্তাহেই ভাইসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাজনের পণ্য সরবরাহের কর্মীদের ‘বায়োমেট্রিক সম্মতিপত্রে’ স্বাক্ষর করতে হয়। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিনির্ভর ক্যামেরার সাহায্যে কর্মীদের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগের সঙ্গে জানিয়েছে, আমাজনের সরবরাহ ব্যবস্থায় কর্মপরিবেশ এমনিতেই বাজে, তার ওপর গুরুত্বপূর্ণ বায়োমেট্রিক তথ্য তুলে দিতে হচ্ছে আমাজনের হাতে।