কীভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী হওয়া যায়

কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য টিকা (ভ্যাকসিন) আবিষ্কারের জন্য আরও কিছু সময় লাগছে। কোনো ওষুধে কাজ হয় না। তাই জনগোষ্ঠীকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী (হার্ড ইমিউনিটি) করে তোলার একটি উপায় হলো, বেশি সংক্রমিত এলাকায় লকডাউন ও আক্রান্তদের শনাক্ত করে তাদের আলাদা রেখে সুচিকিৎসায় সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা। উপদ্রুত এলাকায় এই ভাইরাসের বিস্তার রোধের জন্য একে এমনভাবে কোণঠাসা করে ফেলা হয়, যেন ভাইরাসটি আর বংশবৃদ্ধি করতে না পেরে নির্ধারিত এলাকায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।

কোনো দেশ বা দেশের যে এলাকায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে রোগ বিস্তার রোধের অন্যতম পদ্ধতি এটাই। আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদাভাবে রাখার (আইসোলেশন) ব্যবস্থা করা হয়। সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী হন। এর ফলে ওই এলাকায় রোগের বিস্তার কমতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় একসময় এলাকার ৬০–৭০ শতাংশ মানুষ রোগ প্রতিরোধী হয়ে উঠলে বলা যায়, সেখানের সবাই কার্যত রোগ প্রতিরোধী। কারণ, সেখানে যদি নতুন করে করোনায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি আসেনও, দেখা যাবে তাঁর চারপাশের বেশির ভাগ ব্যক্তির দেহেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে আছে। ফলে বংশবিস্তারের নতুন আশ্রয় খুব কম পায় এবং শেষ পর্যন্ত ওই এলাকায় ভাইরাস বিলুপ্ত হয়।

কিন্তু এটা কঠিন। কারণ, জীবন ও জীবিকার টানে মানুষ বেরিয়ে পড়েন। আবার অনেকে মনে করেন, লকডাউনের দরকার নেই। স্বাভাবিক কাজকর্মে থাকলে সমস্যা নেই। কিছু মানুষ আক্রান্ত হলেও চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে আপনা–আপনি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রোগ প্রতিরোধী হয়ে উঠবেন। বিশ্বের কোনো কোনো দেশ এ রকম পদ্ধতি নিয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। যেমন সুইডেন কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। কলেজ বন্ধ রেখেছে, মানুষকে অনুরোধ করেছে বাসায় থাকতে। হাসপাতালে দর্শনার্থী নিষেধ। তবে সীমান্ত খোলা রেখেছে। আবার মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্মও চালিয়ে গেছে। সেই অর্থে আইন করে লকডাউন দেয়নি। অন্যদিকে পাশের নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড প্রভৃতি দেশ সীমান্ত বন্ধসহ অন্য সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা কড়াকড়িভাবে আরোপ করেছে। ফলে দেখা গেছে, সুইডেনকে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। অন্য তিনটি নরডিক দেশে মৃত্যু কম। যুক্তরাষ্ট্রের যেসব রাজ্যে কড়াকড়ি লকডাউন আরোপ করা হয়নি, সেখানেও এখন সংক্রমণ বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, লকডাউনে অনেক মানুষের জীবন বাঁচে। অবশ্য তার মানে এই নয় যে মানুষের রুটি–রুজির পথ বন্ধ করে দিতে হবে। একটা ভারসাম্য রেখেই লকডাউন চালাতে হবে। সেই সঙ্গে বাইরে বেরোলেই মুখে মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা থাকবে।

ইতিমধ্যে করোনা ভ্যাকসিন এসে যাবে। অন্য কিছু ওষুধও আসছে। তখন হয়তো বিভিন্ন দেশকে খুব দ্রুতই করোনাভাইরাস প্রতিরোধী করে তোলা সম্ভব হবে।

রক্তে অক্সিজেন ঘাটতি
করোনাভাইরাসে শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত হয়। এ অবস্থায় ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। রক্ত অক্সিজেন পায় না। একে হাইপক্সিয়া বলে। এর ফলে দেহের হাত–পা এবং বিশেষভাবে মস্তিষ্ক অক্সিজেনের অভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। চরম অবস্থায় রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতার বিষয়টি রোগী টেরও পান না। মনে হয় সবকিছু স্বাভাবিক। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ারও সময় থাকে না।

অথচ এ বিষয়ে সামান্য সচেতনতা রোগীকে বাঁচাতে পারে। এখন পালস অক্সিমিটার নামে একটি ছোট ডিজিটাল যন্ত্র সহজলভ্য। সামান্য অস্বস্তি লাগলে এই যন্ত্র হাতের আঙুলের মাথায় চেপে রেখে রক্তে অক্সিজেনের হার ও পালস রেট মাপা যায়। কোনো ইনজেকশন লাগে না। ঝামেলা নেই। নিজেই নির্বিঘ্নে ব্যবহার করা সম্ভব। ডিজিটাল যন্ত্রে দুই মিনিটে সব জানা যায়। যদি অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশের কম হয়, তাহলে সতর্ক হতে হবে। ৯০–এর নিচে নেমে গেলে বিপদ। এই অবস্থায় দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বুকভরে শ্বাসপ্রশ্বাস নিলেও কিছু উপকার পাওয়া যায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে অনেক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়। বিশেষভাবে এই করোনার সময়। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেন, খাদ্যতালিকায় অন্তত পাঁচটি উপাদান রাখলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ। এগুলো হলো হলুদ, যা আমরা প্রায় সব তরকারি রান্নায় ব্যবহার করি। অন্য চারটি হলো কলা, ডিম, বিট ও রসুন। এ ছাড়া অন্যান্য শাকসবজি তো লাগবেই। এবং নিয়মিত হালকা ব্যায়াম।

তবে কারও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে। এখন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি।

আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]