ক্লেমন স্কুল অব ফ্রেশনেস সিজন–১–এর শেষ পর্ব

বাংলাদেশের স্বপ্নবাজ তরুণ, যারা সিনেমা তৈরি নিয়ে কাজ করতে চায়, তাদের জন্য ক্লেমন স্কুল অব ফ্রেশনেসের প্রথম সিজনে নুহাশ হ‌ুমায়ূন দিয়েছেন কিছু পরামর্শ। গত কয়েক পর্বে নুহাশ তরুণদের পরামর্শ দিয়েছিলেন মাথায় আইডিয়া কীভাবে জেনারেট করতে হয়, সে ব্যাপারে। এই সিজনের শেষ পর্বে নুহাশ জানিয়েছেন ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের কিছু পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা।

নুহাশ হ‌ুমায়ূন জানান, সৃজনশীল কিছু লিখে ফেলা খুব সহজ নয়। লোকজন লেখা পড়ে হয়তো হাসবে, কোনো যুক্তি খুঁজে পাবে না, কিন্তু লেখককে লেখাটা চালিয়ে যেতে হবে। নুহাশ তাঁর নিজের ছোটবেলার এক ঘটনার ব্যাপারে জানিয়েছেন। নুহাশ যখন স্কুলে পড়তেন, ক্লাস সিক্সে তাদের বিস্কুট নিয়ে একটা ক্রিয়েটিভ লেখা লিখতে বলা হয়েছিল। নুহাশ লিখেছিলেন এক পানি ফ্লেভারের বিস্কুটের ব্যাপারে, যেটা খেলে আর পানি খাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

লেখাটা পড়ে ক্লাসের ছাত্ররা খুব মজা পেলেও শিক্ষক রেগে গিয়ে নুহাশকে দিয়েছিলেন ২০–এর মধ্যে মাত্র ৫ নম্বর। নুহাশ থেমে থাকেননি, সারা বছর তিনি যেকোনো রচনা বা সৃজনশীল লেখার মধ্যে ‘পানি বিস্কুট’–এর গল্প ঢুকিয়ে ফেলতেন। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে নুহাশ বলতে চেয়েছেন, আমাদের সবার মধ্যেই একটি শিশু বাস করে, যে কৌতূহল ও কল্পনার মাধ্যমে সৃজনশীল কাজ করতে চায়। হতে পারে সেটা বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত না বা যৌক্তিক না। তাই আমরা অনেকেই চাপে পড়ে আমাদের সেই শিশুমনটাকে দমিয়ে রাখি। এ ক্ষেত্রে নুহাশের পরামর্শ হচ্ছে আমাদের শিশুমনটাকে দমিয়ে রাখা যাবে না, যখন যা মনে আসবে, সেটাই লিখে ফেলতে হবে।

ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে নুহাশের আরেকটি পরামর্শ হলো নিজের সীমাবদ্ধতাকে জানা। অনেক সময় আমরা যখন কোনো একটা বাধার সম্মুখীন হই, তখনই আমাদের সেরা কাজটা করতে পারি। আজকের তরুণ, যারা শর্টফিল্ম বানাতে চায়, তাদের জন্য নুহাশ কী কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, সেই অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। যেমন নুহাশ শর্টফিল্ম বানানোর জন্য অনেকের কাছেই টাকা চেয়েছেন, কিন্তু কেউ রাজি হননি। তখন নুহাশ একটু চিন্তাভাবনা করলেন যে টাকা অল্প হলেও কীভাবে একটি গল্পকে শর্টফিল্মে রূপ দেওয়া যায়। জানালেন তাঁর শর্টফিল্ম ‘পেপারফ্রগ’–এর অভিজ্ঞতা।

ছোটগল্প যেটাকে মাত্র একটা রুমের মধ্যেই অল্প কয়েকজন শিল্পীকে দিয়েই বানানো সম্ভব আর খরচও কমে যাবে। প্রথম কাজটি এমন সীমাবদ্ধতার মধ্যেই বানিয়ে নিজের কাজের পোর্টফোলিও করতে হয় এবং আস্তেধীরে একটু একটু করে বড় বাজেটের কাজ শুরু করা যায়। বাজেট কম হলেও অল্প শিল্পী, ছোট লোকেশনের মধ্যে শুট করলেও গল্পকে বা ফিল্মকে মজার বানানো যেতে পারে বিভিন্ন সাউন্ড ইফেক্ট বা এডিটিংয়ের মাধ্যমে। নুহাশের শর্টফিল্ম ‘সাত শ টাকা’ এ রকম একটি উদাহরণ।

স্ক্রিপ্টরাইটিং নিয়ে নুহাশের পরামর্শ হলো অনেক স্ক্রিপ্ট পড়তে হবে এবং অনেক অনেক লিখতে হবে। আর লেখার কাজ শুরু করা যেতে পারে নিজের পছন্দের ১০টি সিনেমার নাম এবং পছন্দের ডায়ালগ লেখা থেকেই। নিজের লেখা স্ক্রিপ্ট ও ডায়ালগ ভালো নাকি খারাপ হলো, সেটা বোঝার জন্য কাছের বন্ধুদের ডেকে এনে স্ক্রিপ্ট ও ডায়ালগ পড়তে দেওয়া যেতে পারে। বন্ধুর মুখে ডায়ালগ শুনলেই বোঝা যাবে, সেটা নিজের কাছে ঠিক লাগছে কি না।

স্ক্রিপ্টরাইটিং ছাড়াও নুহাশ বলেন, ফিল্মমেকিং আসলে একটা দলগত কাজ বা টিমওয়ার্ক। তাই ফিল্মমেকিং ইনভেস্ট করতে চাইলে আসলে ইনভেস্ট করতে হবে মানুষের ওপরে। এর মানে হল, ফিল্মমেকিং এমন একটা শিল্প, যেখানে একা কিছু করা যায় না। সব সময় দলগতভাবে কাজ করতে হয়। নিজে হয়তো ফিল্মমেকিংয়ের ওপরে সব পড়াশোনা করে জ্ঞান নেওয়া যায় কিন্তু দলগতভাবে কাজ না করলে অন্যের থেকে শেখা যায় না। তাই নিজে একজন ভালো পরিচালক হতে হলে নিজের চারপাশে নিজের থেকেও বেশি গুণী মানুষদের রাখতে হবে। এর বাইরেও নুহাশ নতুন ফিল্মমেকারদের জন্য কিছু টিপস দিয়েছেন—

১. শব্দ

নিজের প্রোজেক্টের কাজ শুরুর জন্য মাথায় রাখতে হবে শব্দ বা অডিওর ব্যাপারে। কারণ, ভিডিওতে আমরা ডায়ালগ শুনতে চাই, বৃষ্টি পড়লে তার শব্দ শুনতে চাই। তাই শব্দের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

২. পরিকল্পনা

যেকোনো কাজ শুরুর আগে ভালো করে পরিকল্পনা করতে হবে। প্রোডাকশনের আগে প্রি-প্রোডাকশনে প্রচুর সময় দিতে হবে।

৩. পরিকল্পনার পরিবর্তন

সব পরিকল্পনা করে ফেলার পরেও কাজ করতে গিয়ে হয়তো দেখা গেল কোনো কিছুই পরিকল্পনামতো হচ্ছে না। তখন? মাথা ঠান্ডা রেখে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং অবস্থা বুঝেই কাজ করতে হবে। কিন্তু নিজের অরিজিনাল আইডিয়া থেকে সরে আসা যাবে না।

তরুণদের জন্য নুহাশ হ‌ুমায়ূন দিয়েছেন একটি কাজ। ১০ মিনিটের একটি ভিডিও বানিয়ে পাঠিয়ে দিতে হবে ক্লেমনের ফেসবুক পেজে। আপনার বানানো ভিডিওটি হয়তো হয়ে যেতে পারে একটি সেরা ভিডিও। সর্বশেষ আপডেটের জন্য চোখ রাখুন ক্লেমন ও প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে।