ক্লেমন স্কুল অব ফ্রেশনেস-স্টার্টআপ (শেষ পর্ব)

পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী হুসেইন মোহাম্মদ ইলিয়াস

স্টার্টআপ গড়ে তোলা কি খুব সহজ? একটা আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দিয়ে ব্যবসায় সফল হতে কী প্রয়োজন? ক্লেমন স্কুল অব ফ্রেশনেসের স্টার্টআপ চ্যাপ্টারের শেষ পর্বে কথা বলেছেন পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী হুসেইন মোহাম্মদ ইলিয়াস। তিনি বলেন, ‘স্টার্টআপ শুরু করা কিন্তু সহজ নয়। স্টার্টআপের আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে দরকার হয় একটি স্মার্ট ও দক্ষ টিম বা কর্মী দলের। একা একা সব কাজ করে ফেলা সম্ভব নয়। তাই টিমে সব সময় নিজের থেকেও বেশি দক্ষ ও স্মার্ট লোকজন রাখা প্রয়োজন, যারা প্রতিনিয়ত নতুন ও রিফ্রেশিং কিছু শিখতে এবং ব্যবসার উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে।

তাহলে এই ফাউন্ডিং টিম কীভাবে বানানো যায়? নিজের থেকেও বেশি স্মার্ট লোকজনকে কীভাবে দলে আনা যাবে? হুসেইন মোহাম্মদ ইলিয়াসের পরামর্শ হলো, একা স্টার্টআপ শুরু না করে সঙ্গে কো-ফাউন্ডার রাখা ভালো। আর টিম বানানোর সময় মাথায় রাখতে হবে যে ব্যবসার ধরন অনুযায়ী অনেক রকমের কাজ করতে হবে যেমন: প্রোডাক্ট ডিজাইন করা, ইঞ্জিনিয়ারিং, কাস্টমার সার্ভিস, মার্কেটিং, ফান্ড রেইজ করাসহ আরও অনেক কিছু নিয়েই একটা আইডিয়াকে বাস্তবে রূপান্তর করতে হয়। তাই এসব কাজে দক্ষ লোকজনকে দলে নিয়েই একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

আরও একটু বিস্তারিতভাবে হুসেইন মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, ব্যবসার ধরন হয়তো বিভিন্ন রকম হতে পারে, কিন্তু যেকোনো ক্ষেত্রেই দুই ধরনের এক্সপার্টাইজ বা দক্ষ লোকের দরকার—এক দল যারা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস তৈরি করবে, আর অন্য দল যারা এ প্রোডাক্ট ভোক্তার কাছে বিক্রি করবে, বিক্রয়ের পরে সেবা দেবে ইত্যাদি। আবার অনেক সময় এমন হতে পারে, দক্ষ লোকজন যাদের আমরা দলে নিতে চাই, তারা হয়তো আসতে চাইছে না বা তারা অনেক বেশি বেতনে কাজ করছে অন্য কোথাও। সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, এমন মানুষ যারা দক্ষ এবং নিজে উদ্যোগ নিয়ে কিছু করতে চায়, তাদের ব্যবসার পার্টনার বা অংশীদার বানানো যেতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে দলের অনুপ্রেরণা বেড়ে যায়, কারণ তখন দক্ষ লোকজন বেতনের বিনিময়ে কর্মী না হয়ে নিজের ব্যবসার জন্য কাজ করে।

স্টার্টআপ চ্যাপ্টারের বিভিন্ন পর্ব থেকে আমরা জানতে পেরেছি, কীভাবে একটা রিফ্রেশিং আইডিয়া শুরু করতে হয়, ব্যবসার জন্য নর্থ–স্টার মেট্রিকস সেট করতে হয়, কীভাবে দক্ষ টিম তৈরি করতে হয়। কিন্তু ফান্ড আসবে কোথা থেকে? হুসেইন মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, ফান্ড রেইজিং কিন্তু প্রধান বিষয় নয়। আসল হলো ব্যবসা থেকে রেভিনিউ তৈরি করা, প্রোডাক্ট বিক্রি করার জন্য কাস্টমার থাকা। আর স্টার্টআপের জন্য খুব কম রিসোর্সে প্রোডাক্ট এবং কাস্টমার তৈরি করা যায়। একজন ইনভেস্টর বা বিনিয়োগকারী সব সময় চিন্তা করে, কোন ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করলে তাড়াতাড়ি ভালো রিটার্ন পাওয়া যাবে। আর একজন বিনিয়োগকারী শুধু টাকা দিয়েই সাহায্য করে না, বিনিয়োগকারী ব্যবসার অংশীদার হতে পারে। তার অভিজ্ঞতা, ব্যবসায়িক জ্ঞান, নেটওয়ার্ক ও আরও অনেক বিষয় দিয়েই স্টার্টআপে ইনভেস্ট করতে পারে।

স্টার্টআপের একটা বড় বিষয় হলো নেটওয়ার্কিং। এই নেটওয়ার্কিং কী? একটা রিফ্রেশিং স্টার্টআপের ব্যাপারে যত বেশি মানুষকে জানানো যাবে, নেটওয়ার্ক তত বাড়বে। আবার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ভালো হলে মানুষের কথার মাধ্যমেই ব্র্যান্ডিং হবে। এ ছাড়া প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং সাইট যেমন লিঙ্কডিনের মাধ্যমেও নেটওয়ার্কিং বাড়ানো যায়। ব্যবসায়িক ই–মেইল যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সচেতন থাকতে হবে।

স্টার্টআপ শুরুর ক্ষেত্রে নিজের ওপরে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, ব্যবসাটি আসলে কোনো সমস্যার সমাধান করার জন্যই তৈরি। তা হলেই ভালো প্রোডাক্ট, দক্ষ কর্মী দল, নর্থ-স্টার মেট্রিকস, কাস্টমার, ইনভেস্টর একসঙ্গে মিলে স্টার্টআপ দাঁড়িয়ে যাবে। ক্লেমন স্কুল অব ফ্রেশনেসের স্টার্টআপ চ্যাপ্টারের শেষ পর্বে পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী হুসেইন মোহাম্মদ ইলিয়াস আজকের তরুণ উদ্যোক্তাদের অনেক ফ্রেশ আইডিয়া, পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। পরবর্তী চ্যাপ্টারে আরও রিফ্রেশিং কিছু পরামর্শ নিয়ে অন্য কোনো এক্সপার্ট হাজির হবেন ক্লেমন স্কুল অব ফ্রেশনেসে। তাই সতেজ আপডেট পেতে চোখ রাখতে হবে ক্লেমনের ফেসবুক পেজে।
অনুলিখন: ভক্ত সাগর ঊর্মি নিতু