টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা আটকে দিলেন বিচারক, চলবে ডাউনলোড

যুক্তরাষ্ট্রে ভিডিও শেয়ারিংয়ের চীনা অ্যাপ টিকটক ডাউনলোডে নিষেধাজ্ঞা থামিয়ে দিয়েছেন ওয়াশিংটন ডিসির এক বিচারক
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে ভিডিও শেয়ারিংয়ের চীনা অ্যাপ টিকটক ডাউনলোডে নিষেধাজ্ঞা সামিয়ক স্থগিত করলেন ওয়াশিংটন ডিসির এক বিচারক। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ অ্যাপল ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ স্টোরকে টিকটক ডাউনলোড সুবিধা বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিল।

ওই আদেশ গতকাল রোববার রাত ১২টা থেকে কার্যকর করার কথা ছিল। ডিস্ট্রিক্ট জজ কার্ল নিকোলাস স্থানীয় সময় গতকাল রোববার সন্ধ্যায় তা স্থগিত করে দেন। এর ফলে টিকটক ডাউনলোড আর অ্যাপ আপডেট পেতে আর সমস্যা হবে না।

৯০ মিনিটের শুনানির পর ওই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে টিকটক কর্তৃপক্ষ।

বিবিসির এক খবরে আজ সোমবার এসব কথা জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে আগে থেকে যাঁরা টিকটক ব্যবহার করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যাপটি ব্যবহারে কোনো বাধা ছিল না। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নিষেধাজ্ঞায় নতুন করে ডাউনলোড এবং কেউ একবার অ্যাপটি আনইনস্টল করলে পুনরায় ডাউনলোড বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছিল। বিচারকের নতুন আদেশ অনুযায়ী এখন আপাতত কোনো বাধা থাকছে না।

রোববার রাত ১২টা থেকে টিকটক অ্যাপ ডাউনলোড বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা ছিল। ডিস্ট্রিক্ট জজ নিকোলাস রোববার সন্ধ্যায় তা স্থগিত করে দেন
ছবি: সংগৃহীত

এর আগে চীনা অ্যাপ উইচ্যাটের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। উইচ্যাটও শেষ মুহূর্তে এসে আদালতের শরণাপন্ন হয়ে নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি পায়।

ভিডিও প্রচার বা প্রকাশের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটক। ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষ্য, চীনের এই অ্যাপ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীন সরকারের কাছে চলে যাচ্ছে ব্যবহারকারীদের তথ্য-উপাত্ত।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীন ও অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান।

চীনের অভিযোগ, প্রস্তাবিত এই নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিষয়ে অনেক দিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। একপর্যায়ে তিনি ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান এই অ্যাপ কিনে নিয়ে পরিচালনা করলে তিনি নিষেধাজ্ঞা দেবেন না। নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প জানান, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকটকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সকে তাদের টিকটক অ্যাপের ইউএস ভার্সন হয় বিক্রি করতে হবে, না হয় ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে। এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর ওরাকল ও ওয়ালমার্টের সঙ্গে চুক্তি করে টিকটকের ইউএস ভার্সন। তবে মালিকানা পুরোপুরি বিক্রি করেনি কোম্পানিটি। ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ওরাকলের চেয়ারম্যান ল্যারি এলিসন। এ সম্পর্কের খাতিরেই তিনি চুক্তিটি করতে পেরেছেন বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এই সময়সীমা ট্রাম্প বেঁধে দিয়েছিলেন গত আগস্টে। তখন তিনি এক নির্বাহী আদেশে সই করেন। তাতে বলা হয়, ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকটককে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানির কাছে বিক্রি না করলে এই অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হবে। এই আদেশ কার্যকর করার দায়িত্ব দেশটির বাণিজ্য দপ্তরের।

যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক মিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছেন টিকটকের। বাইটড্যান্স বলে আসছে, তারা টিকটক ব্যবহারকারীদের কোনো তথ্য চীনে রাখে না। সব তথ্য জমা রাখে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে। আর উইচ্যাটের মালিক-প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট বলেছে, তাদের অ্যাপে যেসব বার্তা আদান-প্রদান হয়ে থাকে, তার সবই ব্যক্তিগত। এক বিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে উইচ্যাটের। তবে চীনের বাইরে ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত, তা নিশ্চিত নয়।

বিভিন্ন গান, বিখ্যাত সিনেমার সংলাপসহ নানা রকম মজাদার অডিওর সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে ছোট ভিডিও তৈরি করে আপলোড করা যায় টিকটক অ্যাপে। চীনের বাইটড্যান্স তৈরি করেছে টিকটক নামের অ্যাপটি। ছোট ভিডিও শেয়ারের অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মে ১০০ কোটিবার ডাউনলোডের মাইলফলক পেরিয়েছে অনেক আগেই। বেশ কিছুদিন ধরে নানা রকম ভিডিও তৈরির কারণে অ্যাপটি জনপ্রিয় হয়। তবে এর বিরুদ্ধে নানা কুৎসিত ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগও উঠেছে।