তৈরি হচ্ছে এক ডলারের করোনা কিট

আফ্রিকার পাস্তুর ইনস্টিটিউট সাশ্রয়ী কিট তৈরি করছে
ছবি: টুইটার থেকে

করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে প্রথমবারের মতো আফ্রিকায় দ্রুতগতিতে করোনা পরীক্ষার সুযোগ আসতে যাচ্ছে। সেনেগালের রাজধানী ডাকারভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্র পাস্তুর ইনস্টিটিউট দাবি করেছে, তারা সাশ্রয়ী, সহজে বহনযোগ্য কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট তৈরির কাছাকাছি পৌঁছেছে। এ কিট ব্যবহার করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই কোভিড-১৯ শনাক্ত করা যাবে।

এ টেস্ট কিটের দামও হবে খুব কম। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পাস্তুর ইনস্টিটিউট নতুন ডায়াট্রপিক্স নামের প্রতিষ্ঠান চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি গত মার্চ থেকে যুক্তরাজ্যের মোলজিকের মতো পাঁচটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট তৈরিতে কাজ করছে।

পাস্তুর ইনস্টিটিউট ও ডায়াট্রপিক্সের পরিচালক আমাদু স্যাল সিএনএনকে বলেছেন, তাঁর জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান যে কিট প্রস্তুত করবে, তা এক ডলার মতো দাম হবে বলে আশা করছে। এটি সহজ একটি প্রযুক্তি। প্রেগনেন্সি টেস্ট বা গর্ভধারণ পরীক্ষার মতো এ কিট সবখানে ব্যবহার করা যাবে। আফ্রিকার জন্য এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাজ্যের মোলজিকের তথ্য অনুযায়ী, করোনা শনাক্তের কিটটিতে কোনো চার্জ বা পরীক্ষাগারে গবেষণার প্রয়োজন পড়বে না। এতে একটি সহজ স্ট্রিপ থাকবে, যা আঙুল থেকে সামান্য রক্তের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা যাবে। এটি অনেকটাই ইনসুলিন পরীক্ষার মতো। এতে করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখা হবে এবং তার ফলাফল স্ট্রিপে দেখা যাবে।

এ কিটের নমুনা গত জুন মাসে পরীক্ষা করা হয়েছিল। ওই সময় যুক্তরাজ্যের অলাভজনক সংস্থা ওয়েলকাম ট্রাস্ট ও যুক্তরাজ্য সরকার এতে তহবিল সরবরাহের কথা জানিয়েছিল।

আমাদু স্যাল বলেন, একবার এ কিটগুলো নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন পেয়ে গেলে তা উৎপাদন ও বিতরণ শুরু হয়ে যাবে। এ কিট শুরুতে আফ্রিকা সিডিসির মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। এটি কীভাবে সাধারণ জনগণের কাছে সহজলভ্য করা যায়, তা নিয়ে কাজ চলছে।

আমাদু স্যাল আরও বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ এক কোটি থেকে দেড় কোটি কিট তৈরির লক্ষ্য তাঁদের।

আফ্রিকা সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এ মহাদেশে ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি রোগী দক্ষিণ আফ্রিকায়। বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আফ্রিকার সংক্রমণ কম বলে মনে হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কিটস্বল্পতার কারণে এখানে পরীক্ষা অনেক কম হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ অ্যান্ডারসন ল্যাট বলেন, কিটস্বল্পতার কারণে এ মহাদেশে করোনার পরীক্ষা অনেক কম হয়েছে। আফ্রিকাজুড়ে মহামারি একদিকে বৈষম্য তুলে ধরেছে, আবার অন্যদিকে উদ্ভাবনের দরজা খুলে দিয়েছে।

করোনা শনাক্তে পিসিআর পরীক্ষা ব্যয়বহুল হিসেবে ধরা হয়। শুরুতে কেবল দক্ষিণ আফ্রিকা ও সেনেগালের দুটি পরীক্ষাগারে পিসিআর পরীক্ষার সুযোগ ছিল। বর্তমানে আফ্রিকার ৪৭টি দেশেই করোনার পরীক্ষা করা যায়। তবে তা খুবই কম বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আফ্রিকার জনবহুল দেশ নাইজেরিয়া চীন থেকে পিসিআর কিট আমদানি করে। কিন্তু তাদের সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প। দেশটি সাশ্রয়ী কিট তৈরিতে নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে, যা ৪০ মিনিটের কম সময়ে ফলাফল জানাতে পারে। এতে খরচ পড়তে পারে ২৫ ডলারের কম।

আমাদু স্যাল বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করার ও কিট নিশ্চিত করা উচিত। এ ক্ষেত্রে পাস্তুর ইনস্টিটিউটের টেস্ট কিটকে স্বাগত জানানো যায়।