পঞ্চম চেষ্টায় সফল ইলন মাস্ক
মঙ্গল গ্রহে মানুষ ও মালামাল বহনের জন্য ‘স্টারশিপ’ নামের রকেট তৈরি করছে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার পরীক্ষাও চালিয়েছে। উড্ডয়নে সফল হলেও সফলভাবে অবতরণ করানো সম্ভব হয়নি। তবে গতকাল বুধবার ব্যাপারটি ছিল ভিন্ন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে পরীক্ষামূলক রকেটটি উড্ডয়ন করা হয় গতকাল। দীর্ঘ রুপালি কাঠামো ভূমি থেকে উড্ডয়ন করে মাইল ছয়েক ওপরে খানিকক্ষণ ‘কসরত’ দেখিয়েছে। এরপর পুনরায় জ্বলে ওঠে দুটি ইঞ্জিন। ফিরে আসে ল্যান্ডিং প্যাডে। আগুন আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী পরিষ্কার হতে যতটুকু সময়, এরপরে নিশ্চয় উল্লাসে ফেটে পড়েন স্পেসএক্সের কর্মীরা। কারণ দিব্যি দাঁড়িয়ে ছিল রকেটটি, হয়েছে সফল অবতরণ।
পরীক্ষামূলক রকেটটির সাংকেতিক নাম ‘এসএন১৫’। এ নিয়ে এমন রকেট অবতরণের চেষ্টা করা হয় মোট পাঁচবার। সফল অবতরণের ব্যাপারটি টুইটারে নিশ্চিত করেছেন ইলন মাস্ক। আগের চারটি পরীক্ষার সব কটিতেই রকেট বিস্ফোরিত হয়।
ইলন মাস্ক স্বপ্ন দেখেন, বসতি গড়ার জন্য একদিন মঙ্গলে মানুষ পাঠাবেন। আর তখন বাহন হিসেবে কাজ করবে স্টারশিপ রকেট। সে পথেই এগোচ্ছেন তিনি। এসএন১৫ মডেলটির পরীক্ষা তারই অংশ।
সর্বশেষ মডেলটি আগের তুলনায় বেশ কিছু দিক থেকে উন্নত। স্পেসএক্সের দাবি, এসএন১৫ মডেলের যন্ত্রাংশ, যোগাযোগ ও দিকনির্ণয়ব্যবস্থা, সফটওয়্যার এবং বিশাল র্যাপ্টর ইঞ্জিনগুলো আগের চেয়ে উন্নত করা হয়েছে।
স্টারশিপ কীভাবে অবতরণ করবে, তা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সংবাদ সম্মেলনে জানান ইলন মাস্ক। উলম্বভাবে উড়ে গেলেও অবতরণের সময় রকেটটি থাকবে ভূমির সমান্তরালে। ভূমির কাছাকাছি এসে ইঞ্জিন জ্বলে উঠলে আবার উলম্বভাবে নেমে আসবে মাটিতে। দাঁড়িয়ে থাকবে চার পায়ে ভর করে। মাস্কের ভাষায়, স্কাইডাইভাররা যেভাবে বাতাস কেটে নেমে আসে, রকেটটি সে কৌশল অনুকরণ করে অবতরণ করবে। দীর্ঘযাত্রায় মানুষ ও মালামাল বহনের জন্য কৌশলটি অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন তিনি। আর খরচ কমিয়ে আনার জন্য এক রকেটের একাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।
এসএন১৫-এর আগের মডেলটি, অর্থাৎ এসএন১১ অবতরণের সময় তাতে আগুন ধরে বিস্ফোরণ ঘটলে যন্ত্রাংশের টুকরাগুলো ছড়িয়ে যায় আশপাশে। তার আগের মডেল, এসএন১০ ঠিকভাবে অবতরণ করলেও তিন মিনিট পর বিস্ফোরিত হয়েছিল।
এসএন১৫-এর সফল অবতরণ হলেও মঙ্গলে পাঠানোর উপযুক্ত যেমন রকেটের কথা ইলন মাস্ক বলে থাকেন, তার ধারেকাছেও নয় এটি। মঙ্গলযাত্রায় আরও অনেকগুণ শক্তিশালী রকেট প্রয়োজন। বর্তমানে বেশির ভাগ পরীক্ষামূলক রকেটে কেবল তিনটি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত নভোযানে ৩০টির বেশি ইঞ্জিন থাকার কথা। সঙ্গে থাকবে বিশাল রকেট বুস্টার। ‘সুপার হেভি’ নামের সে রকেট বুস্টারের এখনো জনসম্মুখে পরীক্ষা চালায়নি স্পেসএক্স। তবু ইলন মাস্কের আশা, এক বছরের মধ্যে একটি স্টারশিপ নিকটবর্তী কক্ষপথে পাঠানো সম্ভব হবে।
নাসার চাঁদে মানুষ পাঠানোর অভিযান আরটেমিসেও স্টারশিপের কিছুটা পরিবর্তিত সংস্করণ ব্যবহৃত হওয়ার কথা রয়েছে। নাসার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধও হয় স্পেসএক্স। তবে প্রতিযোগী দুটি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের ভিত্তিতে সে চুক্তিটি স্থগিত রেখেছে নাসা।
ভিডিওতে এসএন১৫-এর উড্ডয়ন ও অবতরণ
সূত্র: সিএনএন