‘ফেসবুক ধূমপানের মতোই’

ভুল তথ্য প্রসারের পেছনে মার্ক জাকারবার্গের ফেসবুকের অ্যালগোরিদমকে দায়ী করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এক পরিচালক
ছবি: রয়টার্স

ফেসবুকের সাবেক পরিচালক টিম কেনডাল বলেছেন, তাঁর কাজ ছিল ফেসবুককে ধূমপানের মতোই আসক্তিকর করে তোলা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি ব্যবহারকারীদের জন্য তেমনই ক্ষতিকর বলে মনে করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের হাউস কনজ্যুমার প্রোটেকশন অ্যান্ড কমার্স সাবকমিটির কাছে গতকাল বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য দেন টিম কেনডাল। বৈষম্য ও মানসিক সমস্যা তৈরি এবং মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পেছনে ফেসবুকের অ্যালগরিদমকে দায়ী করেন তিনি।

কম করে বললে, আমরা আমাদের সামগ্রিক চেতনা নষ্ট করছি। কে জানে, আমরা হয়তো নিজেদের গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছি।
টিম কেনডাল, ফেসবুকের সাবেক পরিচালক

কেনডাল বলেন, ‘আমি ও অন্যরা মিলে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে গড়ে তুলেছি, তা ভয়ংকরভাবে মানুষকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। কম করে বললে, আমরা আমাদের সামগ্রিক চেতনা নষ্ট করছি। কে জানে, আমরা হয়তো নিজেদের গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছি।’

২০০৬ সালে ফেসবুকে প্রথম ডিরেক্টর অব মনিটাইজেশন হিসেবে যোগ দেন টিম কেনডাল। ২০১০ সাল পর্যন্ত সে পদে ছিলেন। তাঁর কাজ ছিল ফেসবুককে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, আয়ের বিভিন্ন খাত তৈরি করা। কেনডাল বলেছেন, তিনি ভেবেছিলেন তাঁর ভূমিকা হবে ফেসবুকের স্বার্থ দেখার পাশাপাশি ব্যবহারকারীর মঙ্গলের জন্য কাজ করা। তবে মুনাফাই ফেসবুকের কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল। কেনডাল এখন সময় ব্যবস্থাপনার অ্যাপ ‘মুমেন্ট’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

কাজ করে ব্যবহারকারীর আবেগ নিয়ে

সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ফেসবুকের অ্যালগরিদম সম্পর্কে আইনপ্রণেতাদের কেনডাল বলেন, ব্যবহারকারীদের মনোযোগ ধরে রেখে আরও অর্থ আয়ের জন্য ফেসবুক সব সময় ব্যবহারকারীদের আবেগপ্রবণ করে তোলার চেষ্টা করেছে। আর সে জন্যই জঘন্য, দুঃসংবাদ ও বৈষম্যমূলক কনটেন্টে (বিষয়বস্তু) প্রাধান্য দিয়েছে।

কেনডাল ছাড়াও ফেসবুকের আরও অনেক সাবেক কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিকে বৈষম্য সৃষ্টিকারী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গত মাসেই এমন অভিযোগ এনে এক প্রকৌশলী ফেসবুক থেকে ইস্তফা দেন। সম্প্রতি ফেসবুকের বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ আনেন প্রতিষ্ঠানটির চাকরিচ্যুত এক তথ্যবিজ্ঞানী (ডেটা সায়েন্টিস্ট)।

ভুল তথ্য ও বিদ্বেষমূলক কনটেন্ট নিয়ে প্রায়ই আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়ে ফেসবুক। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে গত গ্রীষ্মে এক হাজার প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ফেসবুক বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিল। এদিকে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে এ মাসেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এক দিনের জন্য ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার বন্ধ রেখেছিলেন।

আরোপ হতে পারে বিধিনিষেধ

ফেসবুকে ভুয়া তথ্যের প্রসার ঠেকাতে ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে মার্কিন সরকার। হাউস কনজ্যুমার প্রোটেকশন অ্যান্ড কমার্স সাবকমিটির প্রধান জ্যান শাকাওস্কি বলেন, ‘মানুষকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়ে মুনাফা এবং ক্ষমতার জন্য কাজ করে এই বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। সব দেশেই তারা সরকারকে বুঝ দিয়ে নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি এবং কোথাও কোথাও গণহত্যার সূত্রপাত করেছে বড় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।’

সাবকমিটির ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন বিষয় তুলে ধরলেও দেশটির আইনের ২৩০ নম্বর ধারা পরিমার্জনের বিষয়ে একমত হয়েছেন। এই ধারায় বলা হয়েছে, ব্যবহারকারীর পোস্টের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করা যাবে না। সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার