বেশি মেগাপিক্সেল মানেই কি ভালো ছবি?

প্রচলিত ধারণা হলো, স্মার্টফোনের ক্যামেরা যত বেশি মেগাপিক্সেলের হবে, তাতে তত ভালো ছবি তোলা যাবে। আসলেই কি তা-ই?

আইফোনে কখনোই বাজারের সর্বোচ্চ মেগাপিক্সেল দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়নি। তবু এর ক্যামেরায় তোলা ছবি বরাবরই ভালো বলে উল্লেখ করেন ব্যবহারকারীরা
আনস্প্ল্যাশ

স্মার্টফোন কেনায় মানুষ এখন সবচেয়ে গুরুত্ব দেন ক্যামেরায়। নিজের তো বটেই, চারপাশটা চমৎকারভাবে ফ্রেমবন্দী করা, অর্থাৎ ভালো ছবি তোলাই থাকে উদ্দেশ্য। স্মার্টফোনের বিজ্ঞাপনেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। কে কত বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা বাজারে ছাড়তে পারে, তা নিয়ে বেশ একচোট প্রতিযোগিতা হয় ফোন তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে।

তবে মেগাপিক্সেল বেশি মানেই কি ক্যামেরা ভালো? কিংবা ১০ মেগাপিক্সেলের চেয়ে ১০০ মেগাপিক্সেলের স্মার্টফোন ক্যামেরায় ভালো ছবি তোলা যায়? তা জানার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক, ‘মেগাপিক্সেল’ বলতে কী বোঝায়।

মেগাপিক্সেল কী?

একসঙ্গে ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ পিক্সেল হলো ১ মেগাপিক্সেল। ঠিক করে বললে ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৬ পিক্সেল। আর ‘পিক্সেল’ এসেছে ‘পিকচার’ ও ‘এলিমেন্ট’ শব্দ দুটি এক করে।
ক্যামেরার লেন্সের মধ্য দিয়ে আসা আলো ধারণ করে, তা ডিজিটাল ডেটায় রূপান্তর করে প্রতিটি পিক্সেল। আর পিক্সেলগুলো থেকে পাওয়া ডেটা পরে এক করে পুরো ছবি তৈরি করা হয়।

এটুকু পড়ার পর মনে হতে পারে, পিক্সেল যত বেশি, ছবি তত নিখুঁত। তবে সব ক্ষেত্রে তা না-ও হতে পারে। কারণ, যে ডেটা সংগ্রহ করা হয়, তা ভালো যেমন হতে পারে, আবার খারাপও হতে পারে। এই খারাপ ডেটাগুলোই ছবির ‘নয়েজ’।

১২ মেগাপিক্সেলের একটি ছবি দৈর্ঘ্যে ৩ হাজার ও প্রস্থে ৪ হাজার পিক্সেল হতে পারে
ছবি: পিক্সাবে

৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা কমবেশি ৮০ লাখ পিক্সেল ধারণ করে। একইভাবে ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ১ কোটি ২০ লাখ পিক্সেলের ছবি ধারণ করতে পারে, এই ছবি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ৩ ও ৪ হাজার পিক্সেলের হয়ে থাকে। সেটা অবশ্য ছবির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ৩:৪ হলে।

বেশি মেগাপিক্সেলে ভালো ছবি?

সাধারণ হিসাবে ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় তোলা ছবির চেয়ে ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় তোলা ছবি ভালো হবে। তবে এখানে আমলে নিতে হবে সেন্সরের আকার। কারণ, দুটি ক্যামেরার সেন্সর যদি একই আকারের হয়, তবে ১২ মেগাপিক্সেলেই বরং খারাপ ছবি আসবে।

সেন্সরের আকার একই রেখে মেগাপিক্সেল বাড়ানোর সমস্যা হলো, তখন প্রতিটি পিক্সেলের আকার ছোট হয়ে যায়। আর পিক্সেল ছোট হলে নয়েজ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

সেন্সরের আকার যত বড় হয়, ছবি তৈরির জন্য ক্যামেরায় তত বেশি আলো প্রবেশ করতে পারে। আর আলো যত বেশি, ছবি তত ভালো। কারণ, এই আলোই ক্যামেরার এক্সপোজার ব্যালান্স, ডাইনামিক রেঞ্জ, এমনকি শার্পনেস ঠিক করে দেয়। আর সে কারণেই ২০ মেগাপিক্সেল ডিএসএলআর ক্যামেরায় তোলা ছবি সাধারণত স্মার্টফোনের ১০৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় তোলা ছবির চেয়ে ভালো হয়। তবে স্মার্টফোনের আকার ছোট রাখাও তো জরুরি।

হয় সংরক্ষণ কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার জন্য সাধারণত স্মার্টফোনে ছবি তোলা হয়
আনস্প্ল্যাশ

বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাযুক্ত স্মার্টফোনের আরেকটি সমস্যা হলো, প্রতিটি ছবির ফাইলের আকার। ফোনের ক্যামেরায় মেগাপিক্সেল যত বেশি হবে, ছবির ফাইলের আকার তত বাড়বে, মেমোরিও দখল করবে বেশি। ফেসবুকে আপলোড কিংবা ই-মেইলে পাঠাতেও সময় বেশি লাগবে।

বেশি মেগাপিক্সেল কখন ভালো?

স্মার্টফোনে তোলা ছবি আপনি কী কাজে ব্যবহার করবেন, তা-ও এখানে গুরুত্ব রাখে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেবেন, ফোন বা কম্পিউটারে পরে সে ছবি দেখে স্মৃতি রোমন্থন করবেন নাকি প্রিন্ট করবেন? প্রিন্ট করলে সেটা কত বড়? এ৪ আকারের পৃষ্ঠায় নাকি বিলবোর্ডের জন্য? কেবল বড় বিলবোর্ডের জন্য ছবি তুলতে গেলেই বেশি মেগাপিক্সেল গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, কম মেগাপিক্সেলের ছবি বড় আকারে প্রিন্ট করলে আমরা বলি, ছবি ফেটে গেছে। আবার কোনো ছবি যদি অনেক বেশি জুম করে দেখতে চান, সেখানেও মেগাপিক্সেল গুরুত্ব বহন করে। তবে সে ক্ষেত্রেও পিক্সেলের আকারের সঙ্গে সেন্সরের আকারের সামঞ্জস্য মাথায় রাখা জরুরি।

একদিক থেকে এ লেখা কিছুটা একপেশে। কারণ, আমরা কেবল মেগাপিক্সেলের হিসাব নিয়ে কথা বলেছি। কারণ, ভালো ছবির জন্য ক্যামেরার অ্যাপারচারসহ আরও অনেক কিছু গুরুত্বপূর্ণ। সেসব রেখে এককথায় যদি বলতেই হয়, তবে কেবল মেগাপিক্সেল বেশি হওয়া মানেই ভালো ক্যামেরা কিংবা ভালো ছবি নয়।

সূত্র: অ্যান্ড্রয়েড অথরিটি, ম্যাকওয়ার্ল্ড